মহাকাব্যিক জয়ে স্বপ্নের ফাইনাল

প্রায় ৫ ঘণ্টার লড়াই শেষে জয়! অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে গ্রিগর দিমিত্রভকে হারানোর পর রাফায়েল নাদালের চিরচেনা উদ্‌যাপন। কাল মেলবোর্নে l এএফপি
প্রায় ৫ ঘণ্টার লড়াই শেষে জয়! অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে গ্রিগর দিমিত্রভকে হারানোর পর রাফায়েল নাদালের চিরচেনা উদ্‌যাপন। কাল মেলবোর্নে l এএফপি

৪ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট!
শুধু সময়ের বিচারেই দুর্দান্ত এক ম্যাচ। আর পুরোটা সময় যদি হয় ধ্রুপদি টেনিস, তাহলে সেটিকে অনায়াসে মহাকাব্যিক ম্যাচের স্বীকৃতি দেওয়া যায়। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে কাল রাফায়েল নাদাল ও গ্রিগর দিমিত্রভের মধ্যে একটি মহাকাব্যিক লড়াই-ই হয়েছে। বিশ্লেষকদের চোখে যেটি এরই মধ্যে স্থান পেয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ইতিহাস-সেরা ম্যাচগুলোর ছোট্ট তালিকায়।
মহাকাব্যিক ম্যাচটির ফলও এনে দিয়েছে স্বপ্নের এক ফাইনাল। এক সপ্তাহ ধরে যে ম্যাচের ক্ষণ গুনছিল টেনিস-বিশ্ব—রজার ফেদেরার বনাম রাফায়েল নাদাল! ফেদেরার পরশুই উঠে গিয়েছিলেন, দিমিত্রভকে কাল ৬-৩, ৫-৭, ৭-৬ (৭/৫), ৬-৭ (৪/৭), ৬-৪ গেমে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেলেন নাদালও। ২০১৪ ফ্রেঞ্চ ওপেনের পর স্প্যানিশ তারকার প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনাল।
অন্যভাবে বললে ‘বেবি ফেদেরার’কে হারিয়েই আসল ফেদেরারের মুখোমুখি হচ্ছেন নাদাল। খেলার ধরনে সুইস কিংবদন্তির সঙ্গে মিল থাকায় দিমিত্রভের ডাকনামই হয়ে গেছে বেবি ফেদেরার। কাল ২৫ বছর বয়সী বুলগেরিয়ান খেললেনও নামটির সার্থকতা প্রমাণ করার মতো। ফেদেরারের মতোই দুর্দান্ত সব স্লাইস, ফোরহ্যান্ড রিটার্ন আর অসাধারণ নেট প্লে! কে জানে, নেটের ওই পাশের লোকটি নাদাল না হলে হয়তো ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালে খেলার স্বপ্নও পূরণ হয়ে যেত!

জয়ী নাদালকে অভিনন্দন জানালেন প্রতিপক্ষ দিমিত্রভও l এএফপি
জয়ী নাদালকে অভিনন্দন জানালেন প্রতিপক্ষ দিমিত্রভও l এএফপি


আর নাদাল? বছর দুয়েক ধরে চোটের সঙ্গে লড়ে প্রায় হারিয়েই যাচ্ছিলেন। আবার কখনো টেনিসের সর্বোচ্চ মঞ্চে এভাবে ফিরবেন, কে ভেবেছিলেন! নাদাল বলেই হয়তো তা সম্ভব হয়েছে, হারের আগে ‘স্প্যানিশ ম্যাটাডোরে’র মতো লড়ে যাওয়া যে তাঁর রক্তে। প্রথম সেটে অবশ্য খুব বেশি খাটাখাটনি করতে হয়নি। দিমিত্রভের দ্বিতীয় সার্ভিসই ব্রেক করে সেটও জিতলেন ৬-৩ গেমে। তখন কে জানত, পরের চার সেটে এমন ‘হাই-অকটেন’ টেনিসের দেখা মিলবে?
দ্বিতীয় সেটেই টেনিস যেন হাজির সব রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে। সেটজুড়ে চলল সার্ভিস ভাঙার খেলা! দিমিত্রভই বেশি ‘ভাঙচুর’ করেছেন, তিনবার ব্রেক করেছেন নাদালের সার্ভিস। নাদাল দুবার ভেঙেছেন দিমিত্রভের সার্ভিস। শেষ পাঁচ গেমের চারটিতেই হলো সার্ভিস ভাঙার খেলা! যেটিতে হয়নি, সেটি আবার চলেছে দশ মিনিটেরও বেশি! এক একটি পয়েন্টের আগে চলছিল র্যালির মেলা, এক একটি গেমের আগে হচ্ছিল অনেক ডিউস। ‘ভাঙাভাঙি’র নিয়ম মেনে নাদালের সার্ভ ব্রেক করেই দিমিত্রভ জেতেন সেট।
দুই সেটে ১-১ সমতা। দিমিত্রভ যেন তখন নিজেকে প্রমাণের তাগিদটা টের পাচ্ছিলেন, নাদালেরও চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিজেকে ফিরে পাওয়ার। পরের দুটি সেটই তাতে গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেও সমতা! তৃতীয় সেট নাদালের, পরেরটি দিমিত্রভের। পঞ্চম সেটে এসে নাদালের অভিজ্ঞতা আর ক্লান্তির কাছে হার মানলেন র্যাঙ্কিংয়ের ১৫তম দিমিত্রভ। তাঁর শেষ শটটা দাগের ওপাশে গিয়ে পড়তেই দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বসে পড়লেন নাদাল। এরপর সেই পরিচিত উদ্যাপন, শুয়ে পড়লেন মাটিতে।
স্বস্তি? হয়তো। ফেদেরারের সঙ্গে আরেকবার মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চ? নিশ্চিতভাবেই! ম্যাচ শেষে তো বলেই দিলেন নাদাল, ‘দুজনই যেমন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছি, তাতে আরেকটি বড় ফাইনালে মুখোমুখি হওয়া আমাদের দুজনের জন্যই অনেক স্পেশাল। আমি অনেক খুশি, আশা করি আপনারাও খুশি!’
শেষের ব্যাপারটিতে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন নাদাল।