'আবেগ আটকাতে পারিনি'

>
ক্যারিয়ারের ১৮তম গ্র্যান্ড স্লামটা হাতে এসেছে পরশু। কাল সেটা নিয়েই বেরোলেন ফটোশুটে, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফি হাতেই সাংবাদিকদের কৌতূহল মেটালেন রজার ফেদেরার l এএফপি
ক্যারিয়ারের ১৮তম গ্র্যান্ড স্লামটা হাতে এসেছে পরশু। কাল সেটা নিয়েই বেরোলেন ফটোশুটে, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফি হাতেই সাংবাদিকদের কৌতূহল মেটালেন রজার ফেদেরার l এএফপি
রজার ফেদেরারের মুখে রাফায়েল নাদাল। পরশু অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালের সময় টিভিতে চোখ ছিল না কার! টেনিসের দুই জীবন্ত কিংবদন্তিকে পাঁচ বছর পর কোনো গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে দেখা গেল। তবে অধিকাংশ ভক্ত, সমর্থক, নিরপেক্ষ দর্শক কায়মনোবাক্যে চাচ্ছিলেন ফেদেরারের আরেকটি জয়। হতাশ হতে হয়নি তাঁদের। ক্যারিয়ারের ১৮তম গ্র্যান্ড স্লাম জিতে নিজের অবিশ্বাস্য রেকর্ডটি আরেকটু সমৃদ্ধ করেছেন ফেদেরার। পরশু অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ডটকমের মুখোমুখি হলেন রজার ফেদেরার

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে শিরোপার ব্যবধানটা আরেকটু বাড়ল, এটাকে কীভাবে দেখছেন?

* সত্যি বলতে, আমার কাছে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে এভাবে ফেরাটা, রাফার (রাফায়েল নাদাল) সঙ্গে আরেকটা মহাকাব্যিক ম্যাচ খেলা—এগুলোই। সেটা অস্ট্রেলিয়ায় করতে পেরেছি, এ জন্য পিটার কার্টার ও টনি রোচের (সাবেক দুই কোচ) কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এখানে আমার জনপ্রিয়তা, সবার সমর্থন, প্রায় পাঁচ বছর কোনো স্লাম না জেতার পর এই বয়সে এসে জিততে পেরেছি—আমার কাছে এসবই গুরুত্বপূর্ণ। আর গ্র্যান্ড স্লাম সংখ্যা? সত্যি বলছি, এটা কোনো বিষয় না।
কখনো কি ভেবেছিলেন চ্যালেঞ্জ (হক-আই রিভিউ) জানিয়ে কোনো গ্র্যান্ড স্লাম জিতবেন?
* হ্যাঁ, আমার তো মনে হয় এর আগেও এমন কিছু হয়েছিল। চ্যালেঞ্জ তো করতেই হতো। আপনি যদি রাফার জায়গায় থাকতেন, তাহলে কী করতেন? ভালো হতো, সে যদি বলের কাছে যেতে পারত, রিটার্ন করত এবং এরপর চ্যালেঞ্জ করত। তাহলে অন্তত পয়েন্টটা নতুন করে খেলতে হতো, তাই না? এটা ঠিক, এভাবে জয় পাওয়াটা বিব্রতকর। তবু আমি আবেগ আটকাতে পারিনি। কল্পনা করতেই পারছেন, কতটা খুশি আমি।
যেখানেই হোক, ১৮তম শিরোপাটা জেতা বিশেষ কিছু হতো। তবু অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপারটি করতে পেরে একটু কি বেশি ভালো লাগছে?
* আপনি যেটা বললেন, যেখানেই ব্যাপারটা হতো, সেটা বিশেষ কিছুই হতো। দেখুন, এটা এমন এক প্রতিযোগিতা, যেটা আমি সব সময় খেলি। আমি ফ্রেঞ্চও (ওপেন) কখনো বাদ দিই না (২০১৬ সালে খেলতে পারেননি)। গতবার ইউএস ওপেন খেলতে পারিনি। তবে এটাই সম্ভবত সে প্রতিযোগিতা, যেখানে সবচেয়ে ধারাবাহিকভাবে খেলেছি। এখানেই সব শুরু হয়েছে আমার। ১৯৯৮ সালে জুনিয়রে খেলেছি, ৯৯-তে বাছাইয়ে। আমার প্রথম জয়টাও এখানে, সম্ভবত মাইকেল চ্যাংকে হারিয়েছিলাম ২০০০ সালে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমার ইতিহাস অনেক পুরোনো। এখানে আসতে বরাবরই আমি ভালোবাসি।
সেমিফাইনালের পরে বলেছিলেন, শেষ সেটে একটু স্নায়ুচাপে ভুগেছেন। ফাইনালে আপনার সার্ভিস যখন ব্রেক হলো, ফেরার জন্য মনঃসংযোগ ধরে রাখতে কী করেছেন?
* আমি নিজেকে বলেছি নির্ভার হয়ে খেলতে। ম্যাচগুলোর আগে ইভান (কোচ) ও সেভেরিনের (সহকারী কোচ) সঙ্গে এ নিয়েই কথা হয়েছে। বল খেলো, প্রতিপক্ষকে না। মাথা খালি করো, নির্ভার থেকে শট খেলো, শুধু চেষ্টা করে যাও। সাহসী হওয়ার পুরস্কার মিলবেই। আমি চাইনি রাফার ফোরহ্যান্ডের বৃষ্টির মাঝে শুধু শট খেলেই বিদায় নিতে। আমার মতে, ওটা ছিল সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত। পঞ্চম সেটের শুরুতে আমিও সুযোগ পেয়েছিলাম, কাজে লাগাতে পারিনি। আমি তখনই হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিতে পারতাম। কিন্তু লড়াই চালিয়ে গেছি, বিশ্বাস রেখেছি ম্যাচটা আমি জিততে পারি। মনে হয়, এটাই আমার সেরা খেলাটা বের করল ম্যাচের শেষ দিকে। নিজেই অবাক হয়েছি এতে। চতুর্থ ও পঞ্চম সেটের শুরুতে একটু ছন্দ হারিয়েছিলাম।
এটা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না, নাদাল আপনার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁর বিপক্ষে এ জয়ে কী মনে হচ্ছে?
* আমাদের দুজনের গল্পটা অনেক দিনের। নোভাকও (জোকোভিচ) আমার বড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের একজন। রডিক (অ্যান্ডি) ও হিউইট (লেটন)ও তা-ই। আমি আসলে কাউকেই বাদ রাখতে চাই না। নিশ্চিত দু-একজনের নাম বাদ পড়ে গেছে। কিন্তু আমার ক্যারিয়ারে রাফা ছিল সব সময়ই বিশেষ কিছু। সে আমাকে আরও ভালো খেলোয়াড় বানিয়েছে। ওর বিপক্ষে খেলা সব সময়ই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ফাইনালের আগেই বলেছি, যদি রাফার বিপক্ষে জিতি, তাহলে সেটা বিশেষ কিছু হবে। কারণ, গ্র্যান্ড স্লামে ওকে অনেক দিন হারাইনি। সম্ভবত ২০০৭ সালে উইম্বলডনে ওকে হারিয়েছিলাম। সেটাও পাঁচ সেটে। আবারও সেটা করতে পারলাম। আমরা দুজনই প্রত্যাবর্তনের পথে আছি। কোর্টে যেটা বলেছি, দুজনই যদি জিততে পারতাম, তাহলে দারুণ হতো। কিন্তু টেনিসে ড্রয়ের কোনো রাস্তা নেই। যেটা বলেছিলাম কোর্টে, ফাইনালে উঠেই আমি খুশি ছিলাম।
বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ ম্যাচটা দেখেছে। এবারের প্রতিযোগিতাটা আপনার, রাফা, ভেনাস ও সেরেনার জন্য দুর্দান্ত ছিল। কী মনে হয়, নিয়তিই চেয়েছিল এমন কিছু হোক? অস্থির সময়ে আপনাদের খেলা মানুষকে প্রভাবিত করবে।
* আমি জানি না, আসলে কতটা প্রভাব ফেলবে। দিন শেষে, এটা তো শুধু একটা খেলা। তবে খেলাও একটা শক্তিশালী অস্ত্র। মানুষকে আনন্দিত করে। কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিজেদের দুঃখ ভুলে যায়, সব সময় হয়তো নয়। তবে আমার মতে বড় ফাইনালগুলো, বিগ মাস্টার্স ওয়ান থাউজেন্ডস, ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনালস—এগুলো তো আসলে টেনিসের সবচেয়ে বড় উৎসব। এ কারণেই রড লেভারকে আবারও মঞ্চে দেখতে পেয়ে ভালো লেগেছে।
মেডিকেল টাইম আউট নিয়ে অনেক ‘বিরূপ মন্তব্য’ শোনা গেছে। প্যাট ক্যাশ (দুবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ফাইনালিস্ট) বলেছেন, এটা বৈধ প্রতারণা। একটু বলবেন, কী হচ্ছিল, টাইম আউটের কারণ কী ছিল?
* ‘বিরূপ মন্তব্য’? আমি কয়েক দিন আগেই স্তান (ভাভরিঙ্কা) ম্যাচের পরে এ নিয়ে কথা বলেছি। রুবিনের (দ্বিতীয় রাউন্ড) ম্যাচের পর থেকেই পায়ে ব্যথা আমার। আমি খুশি যে ব্যথা নিয়ে খেলতে পেরেছি। কোনো কারণে স্তানের বিপক্ষে কুঁচকির দুদিকেই ব্যথা শুরু হয়েছিল। সে যখন একবার টাইম আউট নিল, তখন মনে হলো আমিও নিয়ে দেখি, ম্যাচের মাঝপথে ম্যাসাজ নিয়ে কোনো কাজ হয় কি না। আমি নিশ্চিত নই, তবে মনে হয় কিছু লাভ হয়েছে।
ফাইনালে দ্বিতীয় সেটেই পেশিতে টান পড়েছিল, তৃতীয় সেটে কুঁচকিতেও ব্যথা শুরু হয়। নিজেকে বললাম, নিয়ম যখন আছে তখন সেটা ব্যবহার করি। অবশ্য এটাও ঠিক, নিয়মের অপব্যবহার করা উচিত নয়। ২০ বছর ধরে আমিই সেটা দেখিয়েছি। তাই এভাবে সমালোচনা করা বাড়াবাড়ি। আমিই হয়তো শেষ ব্যক্তি, যে মেডিকেল টাইম আউট নেবে। তাই জানি না, তিনি (ক্যাশ) কী নিয়ে কথা বলছেন।
হয়তো দশ বছর হচ্ছে, আপনাকে অবসর নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে।
* আসলে সাত বছর।
কোর্টে যখন বললেন, যদি পরের বছর ফিরি...এতে তো কিছু প্রশ্ন জাগেই। আপনি যা বলেছেন সেখান থেকে আমরা কি কোনো ইঙ্গিত খুঁজে নেব?
* এটা আসলে নির্ভর করছে আমার মধ্যে আর কতটা টেনিস বাকি আছে, সেটির ওপর। যদি আবার চোটে পড়ি, তাহলে হয়তো পরের বছর খেলা হবে না। কিন্তু আপনি কখনোই বলতে পারেন না, পরের গ্র্যান্ড স্লামটা কবে খেলবেন। কখনোই জানেন না, এ পর্যায়ে আবার সুযোগ মিলবে কি না। আমার তা-ই মনে হয়েছিল, একবারেই অসংখ্য মানুষকে ধন্যবাদ বলে দিই। সবাই দেখছে, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ এটা। গত বছরটা খুব কঠিন গেছে। আর তিনটি পাঁচ সেটের ম্যাচও নির্ঘাত প্রভাব ফেলবে। আমি শুধু বুঝিয়েছি, যা আমি বোঝাতে চেয়েছি। কোনো পরিকল্পনা ছিল না এর পেছনে, কিংবা এটাই আমার শেষ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, সেটাও বোঝাইনি। আশা করি, আবারও ফিরতে পারব। এটাই আমার আশা।