পায়ে ফুটবল হাতে গ্লাভস

কেটি টেলর: ফুটবলার থেকে বক্সার l ছবি: ফিফাডটকম
কেটি টেলর: ফুটবলার থেকে বক্সার l ছবি: ফিফাডটকম

বক্সিং গ্লাভস হাতে ওঠার বছর দুয়েক আগে ফুটবলের বুট উঠেছিল তাঁর পায়ে। সেটা ১৯৯৫ সালের কথা। কেটি টেলরের বয়স তখন ৯। এখন এই ৩০ বছর বয়সে এসে কোনটা তাঁর পরিচয়—ফুটবলার না বক্সার?
বুটজোড়া চিরদিনের জন্য তুলে রেখেছেন ২০১০ সালেই। কিন্তু বক্সিং এখনো চলছে দুর্দান্ত গতিতে। আয়ারল্যান্ড মহিলা ফুটবল দলের হয়ে খেলেছেন ইউরো ও বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। আবার গ্লাভস হাতে জিতেছেন পাঁচটি অ্যামেচার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, ছয়টি অ্যামেচার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ও একটি অলিম্পিক সোনা। টেলরের জন্য তাই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা কঠিন। দুটিই যে তাঁর রক্তে, দুটি তাঁর হৃদয়েও! টেলর তাই শুধু ফুটবলার কিংবা শুধু বক্সার নন, তিনি ক্রীড়াবিদ। এমন একজন, যাঁকে দেখে খেলাধুলায় উৎসাহিত হয়েছে পরের প্রজন্মের আইরিশ মেয়েরা, এখনো হচ্ছে।
প্রথম প্রেমটা ছিল ফুটবলের সঙ্গে। এতটাই যে নয় বছর বয়সে বুট পায়ে প্রথম ছেলেদের ফুটবল দলেই খেলা শুরু করেন। আয়ারল্যান্ডের যে শহরে তিনি থাকতেন, সেখানে ওই সময়ে মেয়েদের কোনো ক্লাবই ছিল না! সেই অবস্থা এখন অনেকটাই বদলেছে। আর এই পরিবর্তনের পেছনে তাঁরও যথেষ্ট ভূমিকা। তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সেরা আইরিশ মহিলা অ্যাথলেট ভাবা হয়ে টেলরকে। তবে এই সম্মানের চেয়ে অন্যদের উৎসাহিত করতে পারাটাই বেশি আনন্দ দেয় টেলরকে, ‘আমি যখন ফুটবল খেলা শুরু করেছিলাম, আয়ারল্যান্ডে খুব কম নারী খেলোয়াড় ছিল। এখন তো আয়ারল্যান্ডের প্রায় প্রতিটি শহরেই অন্তত মেয়েদের একটা ফুটবল ক্লাব আছে। অনেক মেয়েরা বক্সিংয়েও এসেছে। এটা দারুণ ব্যাপার।’
অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার পর ২০০৬ সালে আয়ারল্যান্ডের জাতীয় মহিলা ফুটবল দলে অভিষেক হয় টেলরের। তত দিনে অবশ্য দেশের জার্সিতে বক্সিংয়ে প্রতিনিধিত্ব করার অভিজ্ঞতাও হয়ে গেছে টেলরের। ইউরোপিয়ান অ্যামেচার বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে একবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন। প্রায় ৪ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে দেশের হয়ে ২০০৭ বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব, ২০০৯ ইউরোর বাছাইপর্ব ও ২০১১ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেলেছেন। সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করাটা তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো, ‘যতবার আমি দেশের হয়ে খেলতে নেমেছি, ওটা ছিল আমার জন্য বিশেষ মুহূর্ত। বিশেষ করে, ইউরো আর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলাটা তো বিশাল গর্বের ব্যাপার। আমি সব সময় স্বপ্ন দেখেছি ওই পর্যায়ে দেশের হয়ে খেলতে।’
১১ ম্যাচে দেশের হয়ে দুটি গোলও আছে এই আইরিশ মিডফিল্ডারের। খেলেছেন ২০১৪ সালে ফিফা পুসকাস পুরস্কারজয়ী আইরিশ ফরোয়ার্ড স্টেফানি রোচের সঙ্গে। লেগে থাকলে হয়তো টেলরকেও একসময় এ রকম কোনো গোলের জন্য চিনত ফুটবল বিশ্ব। কিন্তু সেটা না করে ২০১০ সালে ফুটবল ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি বক্সিংয়ে মনোযোগ দিলেন টেলর। কেন? উত্তরটা টেলরের মুখেই শুনুন, ‘বছরে বড়জোর তিন-চারটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতাম। সেই তুলনায় বক্সিংয়ে প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটা করে নতুন টুর্নামেন্টে নতুন কোনো প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চটা বেশি টানল আমাকে।’
তত দিনে অবশ্য অ্যামেচার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও অ্যামেচার ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ বক্সিংয়ে একাধিক সোনা জেতা হয়ে গেছে টেলরের। তবে তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্তটা ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়ারল্যান্ডের পতাকাবাহক ছিলেন। পরে মেয়েদের লাইটওয়েটে রাশিয়ার সোফিয়া ওচিগাভাকে হারিয়ে জিতেছেন ক্যারিয়ারের একমাত্র অলিম্পিক সোনা। কিন্তু টেলর থামতে চাননি সেখানেই।
রোমাঞ্চের টানেই গত বছর অ্যামেচার বক্সিং থেকে পুরোপুরি পেশাদার বক্সিংয়ে নাম লিখিয়েছেন টেলর। অংশ নিতে চান এ বছরের বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপেও। যে টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে স্বপ্ন খেলা করছে টেলরের চোখেমুখে, ‘এ বছরটা আমার জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জের। যেদিন থেকে গ্লাভস হাতে নিয়েছি, আমি চেয়েছি ইতিহাস গড়তে। চেয়েছি সীমা ভেঙে দিতে। আমি গেম-চেঞ্জার হতে চেয়েছি। আশা করছি, এ বছর সেটা করতে পারব।’
এমন যাঁর স্বপ্ন, তাঁকে থামানোর সাধ্য কার! ফিফাডটকম।