'ফেরাটাই হবে সেরা উপহার'

টেনিসে না থাকলেও সময়টা ভালোই উপভোগ করছেন মারিয়া শারাপোভা l ফাইল ছবি
টেনিসে না থাকলেও সময়টা ভালোই উপভোগ করছেন মারিয়া শারাপোভা l ফাইল ছবি

ডোপ নিয়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন দুই বছর। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতের রায়ে সেই নিষেধাজ্ঞা কমে দাঁড়ায় ১৫ মাস। সেই হিসাবে এ বছরের এপ্রিলেই পেশাদার টেনিসে ফিরতে পারবেন মারিয়া শারাপোভা। তবে নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাও মন্দ কাটছে না তাঁর। মস্কোয় নিজের ক্যান্ডি ব্র্যান্ড সুগারপোভার প্রচারণা নিয়েও ব্যস্ত। সেখানেই রাশিয়ান এক টেলিভিশনকে রুশ টেনিস তারকা শোনালেন তাঁর কথা—
 টেনিস থেকে লম্বা বিরতিতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর একটা ভালো সুযোগও হলো নিশ্চয়ই...
মারিয়া শারাপোভা: সময় কত দ্রুত চলে যায়! মনে হচ্ছিল, ১৫ মাস অনেক লম্বা সময়। কিন্তু এখন তো আমি প্রত্যাবর্তন থেকে মাত্র কয়েক মাস দূরে। এত বছর ধরে এত টুর্নামেন্টে খেলা, এত এত দেশ সফরের পর মনে হচ্ছে, আমি খুব স্বাভাবিক একটা জীবনযাপন করছি এখন। আমার জন্য বিরতিটা দরকার ছিল। পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটিয়ে ভালো লাগছে। সবার সঙ্গে বসে ডিনার করা। একটা রাত নয়, অনেকগুলো রাত পরপর...এটা দারুণ।
 গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন, অলিম্পিকে রাশিয়ার পতাকাবাহক ছিলেন, শীতকালীন অলিম্পিকে রাশিয়ার মশাল বহন করেছেন। আপনার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত কোনটা?
শারাপোভা: এ সবকিছুর অংশ হতে পারাটা আমার জন্য গর্বের। একজন অ্যাথলেট হিসেবে আপনি জানেন না সামনে আপনার জন্য কী আছে, কী ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। সৌভাগ্য, ক্যারিয়ারে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। খুব অল্প বয়সে জেতার অভিজ্ঞতা, খুব কঠিন ম্যাচে হাল ছাড়িনি, তারপরও হেরেছি—অনেক অভিজ্ঞতা। আলাদা করে কোনোটাকে বেছে নেওয়া কঠিন। তবে চারটি গ্র্যান্ড স্লাম জেতা অবশ্যই বিশেষ কিছু।
 টেনিস ছাড়ার পর কী করব—ভাবনাটা প্রথম যখন এসেছিল সে মুহূর্তের কথা মনে আছে?
শারাপোভা: মনে আছে। আমি একজন ফুটবলারকে নিয়ে একটা লেখা পড়ছিলাম। চোটের কারণে যাকে খেলা ছাড়তে হয়েছিল। এরপর জীবনে তার আর কিছু করার সুযোগ ছিল না। কারণ, সে এটা নিয়ে আগে খুব একটা ভাবেনি। ওই সময় আমি নিজের কথা ভাবলাম। কখনো কখনো ক্যারিয়ার শেষের পর আপনি যদি খুব সচ্ছল হন, আর কিছু না করলেও হয়। আমি সব সময় চেয়েছি নতুন কিছু করতে, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে। আমি কাজ ভালোবাসি। সব সময় টাকার জন্য নয়। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হওয়া, নতুন কোনো চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করা—এগুলো সব সময় আমাকে টানে। ব্যর্থতার ভয় আমাকে দমাতে পারে না কখনো। এটাও বেশ সাহায্য করেছে।
 খুব তরুণ বয়সে অন্য দেশে থিতু হওয়াটা কি কঠিন ছিল আপনার জন্য? ওই বয়সে কি খুব ভালো ইংরেজি জানতেন?
শারাপোভা: ওই সময় জানতাম না। কিন্তু আমি খুব দ্রুত শিখেছি। কারণ, টেনিসে আমার আশপাশে এত ছেলেমেয়ে ছিল, ওরা কথা বলা থামাতই না। আমি একটা স্কুলে যেতাম, একজন শিক্ষকও রেখেছিলাম, যিনি আমাকে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা করে ইংরেজি শেখাতেন। তবে আমি আসলে ইংরেজি শিখেছি ওই একাডেমির ছেলেমেয়েগুলোর কাছ থেকে।
 ‘প্লেয়ারস ট্রিবিউন প্রজেক্টে’র মতো আপনাকে যদি বলা হয় ১৬ বছর বয়সী শারাপোভাকে একটা চিঠি লিখতে, কী লিখবেন?
শারাপোভা: আমি লিখব, কখনো শেখা বন্ধ করো না। তবে আপনি কখন নিজের কাছে চিঠি লিখবেন, যখন আপনার জীবন প্রায় শেষ হয়ে আসে। আমি অবশ্য এখন একটা আত্মজীবনী লিখছি, যেটা আসলে স্মৃতিচারণা। সবাই বলে, জীবনের শেষ দিকে এলে নাকি মানুষ আত্মজীবনী লিখে। তবে আমি ঠিক মনে করি না আমার জীবনের কোনো অধ্যায় শেষ হচ্ছে বলে এটা লিখছি। এটা আসলে আমি যেসব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছি, তারই কিছু স্মৃতি।
 সামনেই আপনার ৩০তম জন্মদিন। ঘটা করে পালন করার পরিকল্পনা আছে? বিশেষ কোনো উপহার আপনি চান?
শারাপোভা: সত্যি বলতে আমি জন্মদিনের উপহার গত বছরই পেয়ে গেছি, যখন জানতে পারলাম এই এপ্রিলেই কোর্টে ফিরতে পারব। আমি আমার পরিবারকে ওটাই বলেছি। জন্মদিনের জন্য আমি যদি কোনো উপহার চাইতাম, এটাই হতো সেই উপহার। এটা যদি পেছনের দিনগুলোর মতো হতো, আমি হয়তো বস্তুগত কোনো উপহারই চাইতাম। কারণ, আমি উপহার পেতে ও দিতে পছন্দ করি। কিন্তু এখন কোর্টে ফেরাটাই হবে আমার জন্য সেরা উপহার।