কতটা কঠিন ছিল বাংলাদেশের এ জয়

মিশন সম্পন্ন! ছবি: এএফপি
মিশন সম্পন্ন! ছবি: এএফপি

পি সারা ওভালের ইতিহাস সাহস জোগাচ্ছিল। এ মাঠে ২৪৪ রানের নিচের লক্ষ্য দিয়ে কেউ ম্যাচ বাঁচাতে পারেনি। সে কথা চিন্তা করলে কলম্বো টেস্ট তো জেতারই কথা ছিল বাংলাদেশের। দিন শেষে সেটাই হয়েছে, ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতে শততম টেস্টটা স্মরণীয় করে রেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু কাজটা মোটেও সহজ ছিল না, যে ইতিহাস সাহস দিচ্ছিল, সেটাই দিচ্ছিল অশনিসংকেত। চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করার অতীত অভিজ্ঞতা যে খুব সুখকর না বাংলাদেশের। 

ম্যাচের পঞ্চম দিন বিবেচনায় কাজটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল আরও বেশি। বাংলাদেশের রেকর্ড সাক্ষী হয়ে আছে চতুর্থ ইনিংসের এই অনভিজ্ঞতার। বাংলাদেশের রেকর্ডই বলে দেবে কাজটা কত কঠিন ছিল বাংলাদেশের জন্য।
আগের দিন শ্রীলঙ্কার লিডটা ১৬০ রানে আটকাতে চাইলেও বাড়তি ৩০ রান বের করে নিয়েছেন দিলরুয়ান পেরেরা ও সুরঙ্গা লাকমল। এক একটা করে রান তুলেছে স্বাগতিকদের নবম উইকেট জুটি আর কপালে ভাঁজ পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যটা দাঁড়ায় ১৯১ রানে। কালকের আগে চতুর্থ ইনিংসে ১৮০ রানের বেশি রান বাংলাদেশ করতেই পেরেছিল ১৫ বার। এর মাঝে জয় শুধু একবার, সেটাও ২০০৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রায় তৃতীয় দলটির বিপক্ষে। সেটাও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত ৯৭ রানে ভর করে। দুবার ড্র করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাকি ১২ বারই হার নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।
অবশ্য চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাট করার সুযোগই বা পায় কখন! শততম টেস্টের আগে মাত্র ২৪ বার চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। কারণটা দুভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। টসে জিতে বা হেরে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করলেই তো চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগটা আর থাকে না। আর ৩৬টা ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। চতুর্থ ইনিংস তাহলে আর বাংলাদেশ ব্যাট করবে কখন! এর মাঝেও যে ছয়জন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন আর ২১টি ফিফটি দেখেছে বাংলাদেশ—এটাও কম কী।
তবে চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের কোনো গৌরবময় মুহূর্ত যে নেই, সেটা নয়। এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই ঢাকায় ৫২০ রানের লক্ষ্যে ৪১৩ করেছিল বাংলাদেশ। চট্টগ্রামেও দুবার ৩০০ রান পাড় করে হেরেছে। গত অক্টোবরেই ২৮৫ তাড়া করে হেরেছিল বাংলাদেশ।
এই শ্রীলঙ্কার মাটিতেই এর চেয়েও কম রানের লক্ষ্য পেয়ে হেরেছে ভারত-পাকিস্তান। ২০০৯ সালে গলে ১৬৮ রানের লক্ষ্যে নেমে ৫০ রানে হেরেছে পাকিস্তান। আর ২০১৫ সালেই ১৭৬ রান করতে পারেনি ভারত, অলআউট হয়েছিল ১১২ রানে। দুবারই ত্রাস হয়ে দেখা দিয়েছিলেন রঙ্গনা হেরাথ।
কালও পরপর দুই বলে সৌম্য-ইমরুলকে ফিরিয়ে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন হেরাথ। তাই কাজটা মোটেও সহজ ছিল না বাংলাদেশের। তামিম ইকবাল আর সাব্বির রহমান অসাধারণ এক জুটি না গড়লে কালও হয়তো হারের বেদনাতেই পুড়তে হতো বাংলাদেশকে। তামিম-সাব্বির কে ধন্যবাদ কঠিন এক কাজকে অত সহজ মনে করানোর জন্য।
জেতা ম্যাচে চতুর্থ ইনিংসের তৃতীয় উইকেটে শতরানের জুটি মাত্র ২৫টি। তামিম-সাব্বিরের জুটিটাও এখন জায়গা পেল সেখানে।