সুখস্মৃতি নিয়ে ওঁদের ফেরা

মেহেদী হাসান মিরাজ
মেহেদী হাসান মিরাজ

দুটি ইতিহাসের শেষ লাইন লেখা হলো তাঁর হাতে। গত অক্টোবরে জেতা ঢাকা টেস্টে ইংল্যান্ডের শেষ উইকেটটি নিয়েছিলেন তিনি। কলম্বোয় শততম টেস্টে জয়ের জয়সূচক দুটি রান এল তাঁর ব্যাট থেকে। টেস্ট জয়ের ক্যানভাসে তুলির শেষ আঁচড়টা দেওয়া যেন এখন মেহেদী হাসান মিরাজেরই কাজ।
গতকাল দুপুরে এই মিরাজ দেশে ফিরেছেন টেস্ট দলের আরও দুই সঙ্গী মুমিনুল হক ও তাইজুল ইসলামের সঙ্গে। ওয়ানডে দলে না-থাকা এই ক্রিকেটাররা এখন ব্যস্ত হয়ে যাবেন ইমার্জিং কাপ নিয়ে। এরপর প্রিমিয়ার লিগ। ওয়ানডে দলে না-থাকা পেসার কামরুল ইসলাম অবশ্য ফেরেননি তাঁদের সঙ্গে। তাঁর নববিবাহিতা স্ত্রী দু-তিন দিন হলো কলম্বো গেছেন। নবদম্পতি দেশে ফিরবেন মধুচন্দ্রিমা করে।
এক অর্থে ‘মধুচন্দ্রিমা’ চলছে মিরাজ-মুমিনুল-তাইজুলদেরও। জয়ের ঘোরের মধ্যে এখন বসবাস তাঁদের। মিরপুরে মিরাজ যেমন সাংবাদিকদের বলছিলেন, ‘বুঝতেই পারছেন এ রকম একটা দিনের সাক্ষী হয়েছি...খুব ভালো লাগছে। শততম টেস্ট খেলা এবং তাতে জয়ের অনুভূতি অন্য রকম।’ মিরাজের বাড়তি আনন্দ জয়সূচক রানটা তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে বলে, ‘শ্রীলঙ্কার মাটিতে এ রকম টেস্ট জয় বাংলাদেশের জন্যই বড় এক অর্জন। তার ওপর আমার ব্যাট থেকে এসেছে শেষ ২ রান, আমার সারা জীবন এটা মনে থাকবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জেতা টেস্টেও শেষ উইকেটটা আমি পেয়েছিলাম। সে জন্য আরও বেশি ভালো লাগছে।’

তাইজুল ইসলাম
তাইজুল ইসলাম

ঐতিহাসিক এই জয়ের জন্য তরুণ এই ক্রিকেটার আলাদা করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের, ‘আমরা সবাই ভালো খেলেছি। তবে বিশেষ করে ধন্যবাদ সিনিয়রদের। সিনিয়ররা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটা রেখেছেন।’
শততম টেস্টে জয়ের রোমাঞ্চে এখনো ডুবে আছেন তাইজুল। মুঠোফোনে প্রতিক্রিয়া জানতেই উল্টো প্রশ্ন করলেন, ‘আগে বলুন, আপনার কেমন লেগেছিল তখন?’ বাংলাদেশ দলের কীর্তিতে গোটা দেশই আনন্দে ভাসছে বলার পর নিজের কথা বললেন বাঁহাতি এই স্পিনার, ‘তাহলে বুঝুন, আমার, আমাদের কেমন লাগছে! আমি বাংলাদেশের শততম টেস্টে জয়ী দলে ছিলাম, জীবনের সেরা পাওয়া এটা।’
তাইজুল জানালেন, শেষ ইনিংসে ১৯১ রানের লক্ষ্য থাকলেও ড্রেসিংরুমে সবার বিশ্বাস ছিল বাংলাদেশ জিতবে, ‘মাঠের ভেতরে-বাইরে সবাই খুব চনমনে ছিলাম। আমাদের বিশ্বাস ছিল, আমরাই জিতব। দেশের পতাকা ওড়াতে যা কিছু করার দরকার করব।’
কলম্বোয় যে বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে দেখেছে সবাই, সেটার শুরু আসলে গলেই। গল টেস্টে হারার পর রাতেই নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেছিলেন খেলোয়াড়েরা। সেখানে কোচ, ম্যানেজার বা অন্য কেউ ছিলেন না। নিজেদের মধ্যে সে আলোচনায় খেলোয়াড়েরা সবাই মনের অর্গল খুলে দেন। জিততে হলে, ভালো খেলতে হলে কী করতে হবে, সে ব্যাপারে সবাই সবার মতামত জানান। মুমিনুলের ধারণা, গলের সেই রাতেই আঁকা হয়ে গিয়েছিল কলম্বোর সাফল্যের চিত্রনাট্য, ‘আমার মনে হয়, প্রথম টেস্টে না হারলে আমরা শততম টেস্টটা জিততাম না। হারের পর ওই রাতে আমাদের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে, সেটা আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটকেই বদলে দিয়েছে।’

মুমিনুল হক
মুমিনুল হক

কিন্তু কী কথা হয়েছিল ক্রিকেটারদের সে সভায়? মুমিনুল বিস্তারিত বলতে চাইবেন না, স্বাভাবিক। তবু যতটুকু বললেন, তাতে সুরটা ধরা যায়, ‘আমাদের কী করা উচিত, এই জিনিসটাই সবাই মিলে আলোচনা করেছি। ভালো খেলার প্রতিজ্ঞা করেছি।’ সতীর্থরা সে প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে পারায় শততম টেস্ট না খেলেও কম আনন্দ নয় মুমিনুলের ‘আমার কোনো আক্ষেপ নেই। ম্যাচ জিতেছি, উন্নতির জায়গাগুলো স্পষ্ট হয়েছে, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু নেই।’