টেস্ট শেষ, এবার অন্য লড়াই

সিরিজ ড্র। কিন্তু ট্রফি তো একটাই। ভাগাভাগি করার উপায়ও নেই! ট্রফিটি তাই বাংলাদেশ দলকেই দিয়ে দিয়েছে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। পরশু ম্যাচ শেষে পি সারায় সেই ট্রফি নিয়ে তাসকিন, সাব্বির, রুবেল, মোসাদ্দেক ও মিরাজ l ছবি: ফেসবুক
সিরিজ ড্র। কিন্তু ট্রফি তো একটাই। ভাগাভাগি করার উপায়ও নেই! ট্রফিটি তাই বাংলাদেশ দলকেই দিয়ে দিয়েছে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। পরশু ম্যাচ শেষে পি সারায় সেই ট্রফি নিয়ে তাসকিন, সাব্বির, রুবেল, মোসাদ্দেক ও মিরাজ l ছবি: ফেসবুক
.
.

সেই সোনালি রঙে রাঙানো চুল। পেশিবহুল শরীর। আরও কয়েক সতীর্থকে নিয়ে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের ভেতর অনুশীলন করলেন লাসিথ মালিঙ্গা। টেস্ট ছেড়ে দিয়েছেন। ওয়ানডেও খেলেন না। চালিয়ে যাচ্ছেন শুধু টি-টোয়েন্টিটা।
মালিঙ্গার অনুশীলন শেষ হলো, আর পাশের ম্যাক্স ক্রিকেট একাডেমির নেটে নামলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। শততম টেস্টে জয়ের অংশ হতে পারেননি বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। তবে মাঠে বসে জয়ের সাক্ষী হতে পেরেছেন, দলের ড্রেসিংরুমে গিয়ে অনুজদের শুভেচ্ছা জানাতে পেরেছেন, এতেই ভীষণ গর্বিত। আর এই গর্বিত মাশরাফিকে কাল টেস্ট জয়ের জন্য হয়তো অভিনন্দন জানিয়ে গেলেন শ্রীলঙ্কার একসময়ের প্রধানতম ফাস্ট বোলার।
অভিনন্দন জানিয়ে গেলেন, নাকি হৃদয়ের একটু রক্তক্ষরণও দেখিয়ে গেলেন! সে শ্রীলঙ্কানদের বুকের গভীরে যতই ক্ষরণ হোক, সেদিকে তাকানোর সুযোগ নেই মাশরাফিদের। টেস্ট সিরিজ শেষ, এখন সীমিত ওভারের ক্রিকেটের ‘যুদ্ধ’। সাদা পোশাক ছেড়ে রঙিন পোশাক, লাল বল ছেড়ে সাদা বল। অধিনায়কত্ব আবার বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়কের হাতে।
২৫ মার্চ তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি। টানা পাঁচটি টেস্ট খেলে নিজেদের সবচেয়ে প্রিয় সংস্করণের ক্রিকেটে ঢুকে পড়তে একটু অস্বচ্ছন্দ লাগছে?
মাশরাফি বললেন, ‘ঠিক অনভ্যস্ত বা অস্বচ্ছন্দ বলব না, তবে মানসিকভাবে একটু তৈরি হতেই হবে। প্রস্তুতি ম্যাচটি তাই গুরুত্বপূর্ণ।’ আগামীকাল ৫০ ওভারের সেই প্রস্তুতি ম্যাচটি হবে কলম্বো ক্রিকেট ক্লাবে। শ্রীলঙ্কার দলটির নাম এখনো জানা যায়নি। হবে হয়তো শ্রীলঙ্কান বোর্ড সভাপতি একাদশ বা ও রকম কিছু।
টেস্টের সাফল্য সীমিত ওভারের ক্রিকেট সিরিজেও বয়ে নিয়ে যাওয়ার তাড়া আছে। মাশরাফি মুখে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি, তবে কে না জানে মুখ দিয়ে কথাটি তাঁকে উচ্চারণ করতে হবে না। তারপরও বললেন, টেস্টের এই জয়ের প্রভাব ওয়ানডে সিরিজেও থাকা উচিত।
শ্রীলঙ্কা শেষ টেস্টে হারের বেদনায় নীল হয়ে আছে। এটা জানাই যে, ওরা সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। সে যতই ওদের দলটা অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে থাকুক না কেন। ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার কয়েকজন নতুন বোলারকে সমীহই করছেন মাশরাফি। যেমন বাঁহাতি চায়নাম্যান বোলার লক্ষ্মণ সান্দাকান, তরুণ ফাস্ট বোলার লাহিরু কুমারা, সঞ্জয় ভিকুম। এ ক্ষেত্রে দলের ব্যাটিংটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অধিনায়ক, ‘যদি একটা জিনিসের কথা বলেন, আমাদের ব্যাটিংটা ভালো হতে হবে। তবে নির্ভার থেকে ব্যাট করলে মনে হয় সমস্যা হবে না।’ সমস্যা নেই মাশরাফির চোট পাওয়া আঙুলেও, ‘আঙুলে কোনো সমস্যা নেই। বোলিংটা যেহেতু পুরো শরীরের ব্যাপার, একটু অনভ্যস্ত লাগছে। তবে ঠিক হয়ে যাবে।’
মাশরাফি সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও সম্ভাবনা দেখছেন দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই টেস্ট দলের বলে, ‘আমার দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই তো টেস্ট খেলে ফিরছে। একটা বড় ফরম্যাটে খেলে মানসিকভাবে তৈরি হয়ে আসছে। এটা অবশ্যই ভালো।’
মাশরাফি বড় অনুপ্রেরণাদায়ী দলনেতা। এমন একজনের কাছে দাবি যে, গোটা দলই যেন চাঙা হয়ে মাঠে নামে। মাশরাফি যখন এ কথা বলছিলেন, পাশেই নেটে বোলিংটা শেষ করলেন মাহমুদউল্লাহ। স্বাভাবিকভাবেই মাহমুদউল্লাহ প্রসঙ্গ উঠল। তাঁর টেস্ট দল থেকে বাদ পড়া, শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফিরে যাওয়া না-যাওয়া নিয়ে কত কিছু ঘটল। মাশরাফি বললেন, ছোট সংস্করণের ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ এই খেলোয়াড়টিকে অনুপ্রাণিত করার কাজটি তিনি যথারীতি করে চলেছেন।
চার বছর আগে গল টেস্টে যেমন বাংলাদেশ দুর্দান্তভাবে ড্র করে নিজেদের চিনিয়েছিল নতুন করে, তেমনি শ্রীলঙ্কায় তাদের বিপক্ষে এসেছিল প্রথম ওয়ানডে জয়টিও। মাশরাফি সেটি ভোলেননি, ভুলে যেতে পারেন না। তবে অতীতের সেই জয়ের স্মৃতি আঁকড়ে বসে থাকার লোক তিনি নন। এবার যে তাঁর নতুন লড়াই।