নেইমারদের রক্তে ফিরছে জয়ের ডিএনএ

নেইমাররা ফেরাবেন জোগো বনিতো? ফাইল ছবি
নেইমাররা ফেরাবেন জোগো বনিতো? ফাইল ছবি

সেই ‘জোগো বনিতো’ আর ফিরবে না বলেই ধরে নিয়েছিল সবাই। ব্রাজিলের আনাচকানাচে শোনা যেত একটা শব্দ—আহা! পেলে-গারিঞ্চা বা জিকো-সক্রেটিসদের যুগের সেই সুন্দর ফুটবল আর নাই-বা দেখা গেল; ব্রাজিলের ফুটবলের ‘শিরা-উপশিরায়’ জয়ের যে নেশা, সেটাও হারিয়ে যাবে! দুঙ্গা, লুইস ফেলিপে স্কলারি, আবার দুঙ্গা...ব্রাজিলের ফুটবল শুধু ধুঁকছিলই। 

দুঙ্গা তো দ্বিতীয় দফায় দায়িত্বে এসে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেই বাদ ফেলে দেন এমন পরিস্থিতি তৈরি করলেন। হারতে হারতে ষষ্ঠ স্থানে নেমে গিয়েছিল ব্রাজিল। গত বছর কোপা আমেরিকার শতবর্ষী আসরের গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে পড়েন নেইমাররা। আর সেই হতাশার ছাইভস্মেই যেন আশার বীজমন্ত্র পোঁতা হয়ে গেল। দুঙ্গার বিদায় ব্রাজিলের ফুটবলে নিয়ে এল নতুন সুবাতাস। তিতের অধীনে ব্রাজিল ঝলকে উঠেছে। টানা ছয়টি ম্যাচ জেতা ব্রাজিলের খেলায় ফিরে এসেছে ছন্দ।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এখন ব্রাজিল শীর্ষে। আগামী বৃহস্পতিবার উরুগুয়ের বিপক্ষে জিতলে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ খেলা এক রকম নিশ্চিত। ব্রাজিলের রক্তে হারিয়ে যাওয়া জয়ের নেশা ফেরত আনার পুরো কৃতিত্বটাই তিতেকে দিলেন নেইমার, ‘পার্থক্য হলো দলের আত্মবিশ্বাস। তিতের অধীনে আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। আমাদের দলটি সব সময়ই ভালো ছিল। কিন্তু আমরা জ্বলে উঠতে পারছিলাম না। অবশেষে আমরা আমাদের ব্রাজিলিয়ান ডিএনএ দেখাতে পারছি।’
ও’গ্লোবো টিভির সঙ্গে নেইমারের সাক্ষাৎকারে উঠে আসে তাঁর ক্লাব বার্সেলোনার প্রসঙ্গও। কেমন কাটছে ন্যু ক্যাম্পে নেইমারের দিন? লিওনেল মেসির সঙ্গে নিজের সম্পর্কের বিষয়ে বলতে গিয়ে নেইমার উদাহরণ হিসেবে টেনে আনেন চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির বিপক্ষে ন্যু ক্যাম্পের ম্যাচটির কথা। সেই ম্যাচের শেষ সময়ে পেনাল্টি থেকে গোল করেন ব্রাজিল ফরোয়ার্ড। ও রকম সময়ে মেসি কেন শট নেননি এই প্রশ্ন অনেকেরই ছিল। বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন নেইমার, ‘মেসির পেনাল্টি নেওয়ার জন্য আমি বলটি ধরে আনি। আর সে বলল, “না, তুমি পেনাল্টিটি নাও”।’ ওই পেনাল্টি ছাড়াও পিএসজির বিপক্ষে আরেকটি গোল করেন নেইমার। বার্সেলোনায় পরস্পরের জন্য তাঁরা এতটাই ছাড় দেন!
সেই ম্যাচের নায়ক অবশ্য নেইমার একটাই। কী অবিশ্বাস্যভাবে বার্সেলোনাকে শেষ আটে তুলে এনেছেন! অসাধারণ সেই পারফরম্যান্সের পর প্রশংসায় ভেসে যাচ্ছেন ব্রাজিলের এই তারকা ফরোয়ার্ড। কিন্তু নেইমার পা মাটিতেই রাখছেন। বয়স মাত্র ২৫ হলেও এর মধ্যেই অনেক দেখেছেন। গত অলিম্পিকেই ব্রাজিলকে সোনা জেতানোর আগে সমালোচনার তীক্ষ্ণ তির সইতে হয়েছে তাঁকে। ব্রাজিলের মানুষ তাঁকে ‘ছেলেদের ফুটবলের মার্তা’ বলেও খোঁচা দিতে চেয়েছে তখন।
ব্রাজিলের মানুষ সহজে তুষ্ট হয় না—নেইমার এটা ভালো করেই জানেন, ‘আমি যা করি, তা অনেকের কাছেই যথেষ্ট নয়। তাই আমি খুব বেশি রোমাঞ্চিত হই না। ফুটবলে পরতে পরতে বিস্ময়। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু বদলে যেতে পারে।’ আইএএনএস।