সরব শ্রীলঙ্কা, নির্ভার বাংলাদেশ

.
.

ড্র এবং ড্র। টেস্ট সিরিজ ড্র হয়েছে। ড্র হয়েছে ওয়ানডে সিরিজ। এবার কি মীমাংসা দেখবে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ? আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি হচ্ছে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। তার আগে কাল কলম্বোর খেত্তারামা এলাকার এই স্টেডিয়ামকেই মনে হলো সিরিজ জয়ের তৃষ্ণায় উন্মুখ।
স্টেডিয়াম কি আর সিরিজ জিততে চায়? জিততে চায় সেটিকে ঘিরে থাকা মানববলয়। এই মানববলয়ের প্রায় পুরোটাই যেহেতু শ্রীলঙ্কান, সুতরাং বুঝতেই পারছেন, সিরিজ জয়ের মুকুটটি কাদের কাছে অতিকাঙ্ক্ষিত বস্তু। টুকটুক ড্রাইভার থেকে শ্রীলঙ্কান সাংবাদিক, মাঠকর্মী থেকে শুরু করে খেলোয়াড়—সবাই জয়ের স্বপ্নে বিভোর। টি-টোয়েন্টি ইদানীং শ্রীলঙ্কার খেলা হয়ে উঠেছে, সুতরাং বাংলাদেশের এখানে কোনো সুযোগ নেই। এমনটাই বলছেন তাঁরা, মানে বলতে চাইছেন আর কী। যেহেতু দুই ম্যাচের সিরিজ, সেটি জিততে হলে দুটি ম্যাচই জিততে হবে—আজ ও পরশু।
শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গা কাল বলে গেলেন, টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ ড্র হলেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। ভুল বলা হলো, আশাবাদীই শুধু নন, আত্মবিশ্বাসী। শেষ ওয়ানডে ম্যাচটি জয়ের পর বলেছিলেন, বললেন কালও, ‘আমরা সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকাকে দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং অস্ট্রেলিয়াকে অস্ট্রেলিয়ায় হারিয়ে এসেছি। এ মুহূর্তে তারাই সেরা দুই দল। তাদের বিপক্ষে জিতেছি বলে একটু বেশি আত্মবিশ্বাস আমাদের থাকবেই।’
থারাঙ্গাদের বর্ধিত আত্মবিশ্বাসের আরও একটি কারণ, লাসিথ মালিঙ্গা, চামারা কাপুগেদারা ও নুয়ান কুলাসেকারার মতো অভিজ্ঞ কজন খেলোয়াড় এই সংস্করণে যোগ হওয়া। কাল সন্ধ্যায় প্রেসবক্সে বসে এই প্রতিবেদন লেখার সময় মালিঙ্গা সেন্টার উইকেটের অনুশীলনে একেকটি বল স্টাম্পে লাগাচ্ছিলেন, আর হাততালিতে মুখর হচ্ছিলেন তাঁর সতীর্থরা।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে চোটের কারণে পাওয়া যাচ্ছে না বলে একটু দুঃখ ঝরে পড়ল থারাঙ্গার কণ্ঠে। তবে একটু পরই সেটি যেন একেবারে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলেন আসেলা গুনারত্নে ও থিসারা পেরেরার কথা তুলে। গুনারত্নে ব্যাটে ঝড় তোলেন ওপরে নেমে, আর থিসারা নিচে। থারাঙ্গার হাতে আগুনে গোলার মতো দুটি অস্ত্র আছে!
বাংলাদেশ এক দিক দিয়ে ভালো আছে। শ্রীলঙ্কা এত বেশি হাঁকডাক ছাড়ছে যে মাশরাফিদের গলা শোনা যাচ্ছে বেশ নিচু স্বরে। এতে চাপ একটু কমে। নিজেদের একটু নির্ভার মনে হয়। বাংলাদেশ দল শেষ ওয়ানডে ম্যাচে হারের পরের দিন দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেছে হোটেলে। কোনো অনুশীলন করেনি। ওই বৈঠকে শেষ ওয়ানডে হারের জন্য কোনো অনুশোচনা ছিল না। ম্যানেজার খালেদ মাহমুদের মাধ্যমে জানা গিয়েছিল, সবাই টি-টোয়েন্টি সিরিজেই মনঃসংযোগ করেছে। কেননা, সবাই তো জানেই নিজেদের ভুলে হাতছাড়া হয়েছে ওয়ানডে সিরিজ। এখন টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে জয় নিয়ে ফেরার ইচ্ছা সবার। শেষ ওয়ানডে ম্যাচের পর বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে অধিনায়ক মাশরাফি বলেছিলেন, এখন তো টি-টোয়েন্টিই প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াল।
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টির পৃথিবীতে প্রথম পা রেখেছিল এই সংস্করণটিই তাদের সবচেয়ে আপন হয়ে উঠবে ভেবে। খেলার ধরন তখন অনেকটা তা-ই ছিল। কিন্তু টি-টোয়েন্টি শুরু থেকেই বাংলাদেশকে বলে দিয়েছে, ‘তোমাদের এখানে মানাচ্ছে না।’ কয়েক বছর এখানকার রুক্ষ জমিতে হাঁটতে হাঁটতে বাংলাদেশ যেন একটু চিনতে পেরেছে টি-টোয়েন্টিকে। এই শ্রীলঙ্কাকেই হারিয়ে ২০১৬ এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠা তার একটি প্রমাণ। ‘বেঙ্গালুরু ট্র্যাজেডি’ না ঘটলে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযানও খারাপ যেত না।
ওই বেঙ্গালুরুই কী এক ‘অভিশাপ’ দিল যে এরপর টানা চারটি টি-টোয়েন্টি হেরেছে বাংলাদেশ। চারটিই নিউজিল্যান্ডের কাছে। ওই হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার জন্যও আজ জয়টা ভীষণ দরকার মাশরাফিদের। আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ এই প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামবে। এটাও একটা উপলক্ষ মাশরাফিদের কাছে।
প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে আরেকভাবেও। এখানে টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার রেকর্ড ভয়াবহ রকমের খারাপ। ১১ ম্যাচ খেলে ১০টিতেই তারা হেরেছে। হার সর্বশেষ ৬ ম্যাচে। সেই ভুলে যাওয়া গন্ধের মতো একমাত্র জয়টা তাদের পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১২ সালে।
প্রেমাদাসায় ফ্লাডলাইটের উজ্জ্বল আলো তাহলে শ্রীলঙ্কার জন্য এক বিভ্রম! যে আলো হয়তো শুধু উজ্জ্বল অভিষেকের ইঙ্গিত দেয় না, পরাজয়ের সংকেতও লিখে রাখে।