তামিমকে ১০ প্রশ্ন

>

.
.

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিম ইকবালের ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরে পেরিয়েছেন ১০ হাজার রানের মাইলফলক। গত মঙ্গলবার বিকেএসপিতে মোহামেডান-কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের ম্যাচ শেষে রানা আব্বাসের ১০ প্রশ্নের উত্তরে তামিম শুধু এই দুই ‘১০’ নিয়েই বলেননি, চোখ রাখলেন ভবিষ্যতের দুরবিনেও—

১. যদি গত ১০ বছরের খেরোখাতাটা উল্টে দেখেন, কী দেখেন সেখানে?

তামিম ইকবাল: যাত্রাটা মোটেও সহজ ছিল না। যখন শুরু করি, ঝটপট কিছু সাফল্য পেয়েছিলাম। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভালো করেছিলাম। পরে ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে তখন আমার অনেক দুর্বলতা ছিল। দুর্বলতা এখনো যে পুরোপুরি কাটিয়ে উঠেছি, তা নয়। তবে মনে করি, অনেক কিছু কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এটা একটা ইতিবাচক দিক। আবার অনেক কিছু এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সব মিলিয়ে ১০টা বছর যেভাবে কেটেছে, আমি খুশি। আর এতটা সময় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করাটাও গর্বের বিষয়।

. বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার আন্তর্জাতিক রান—নিজের এই অর্জনটা কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

তামিম: অবশ্যই এটা একটা মাইলফলক। গর্ববোধ করার মতোই ব্যাপার। তবে এখানেই শেষ নয়। আমার স্বপ্ন আরও বড়। যত দিন খেলব, বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করব, চেষ্টা করব আরও বেশি রান করার।

. নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট কোনো সংস্করণে ১০ হাজার রান করার স্বপ্নও দেখেন?

তামিম: অবশ্যই। কার না এমন স্বপ্ন থাকে! যদি স্বপ্ন না দেখি, সেটা অর্জন করতে পারব না। তবে ১০ হাজার রান করতে হলে আমাকে সেভাবে খেলতে হবে, অনেক পরিশ্রম করতে হবে। এটা এমন নয় যে, ভাবলাম আর হয়ে গেল!

. যেহেতু ফেলে আসা ১০ বছরের কথা বলা হচ্ছে, তৃপ্তি-অতৃপ্তির প্রসঙ্গও আসবে ক্যারিয়ারের অতৃপ্তি কিংবা তৃপ্তির জায়গা কোনটি?

তামিম: আমার জন্য প্রতিটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ, সিরিজ বা টুর্নামেন্ট বিশেষ কিছু। প্রতিটি ম্যাচেই যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করি। আলাদা করে কোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টের কথা বলতে পারব না। তবে একটা আফসোস সব সময়ই মনে কাজ করে—আব্বা (প্রয়াত ইকবাল খান) যদি আমার খেলা দেখতে পারতেন! আর বড় তৃপ্তি হচ্ছে সেঞ্চুরি করা (হেসে)! সেঞ্চুরি করা আর ম্যাচ জেতার চেয়ে তৃপ্তির কিছু হতে পারে না! আপনি যদি ভালো খেলেন আর তাতে দল জেতে, সব সময়ই সেটা ভীষণ আনন্দ দেবে।

. ২৭০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের ৩১৩ ইনিংসের প্রতিটি আপনার কাছে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ তবে এমন ম্যাচ বা ইনিংসের কথা বলুন, যেটা মনে পড়লে মনে সুখের অনুরণন হয়

তামিম: নিজের প্রতিটি ইনিংস আমার কাছে বিশেষ কিছু। তবে কিছু কিছু ইনিংস বা ম্যাচ থাকে, যেটা স্মৃতিতে বিশেষ জায়গা করে নেয়। দেশের মাটিতে গত অক্টোবরে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সেঞ্চুরিটার কথা বলব (যেটাতে প্রথমবারের মতো টেস্টে ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ)। ভীষণ কঠিন উইকেটে সেঞ্চুরি করেছিলাম। কদিন আগে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ৮২ (বাংলাদেশের শততম টেস্টে), লর্ডসের ইনিংসগুলো (৫৫ ও ১০৩), খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি—এই ইনিংসগুলো ‘স্পেশাল’। যদি আমাকে একটা খুঁজে বের করতে বলেন, সেটা কঠিন। এমন নয় যে, আমার ক্যারিয়ার দুর্দান্ত সব ইনিংসে ভরা! আসলে নিজের কোনো ইনিংসকেই কম-বেশি বা ছোট-বড় করে দেখি না। আর ম্যাচের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে ২০০৭ বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে ভারতকে হারানো।

. ২২ গজে আগের তামিম আর এখনকার তামিমে অনেক পার্থক্য এই পরিবর্তনটা কীভাবে এসেছে?

তামিম: হ্যাঁ, গত কয়েক বছরে আমার কিছু কিছু বিষয়ে একটু হলেও পরিবর্তন এসেছে। ফিটনেসে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তিন-চার বছর আগে যেমন ছিলাম, এখন তার চেয়ে ওজন অনেক কমেছে। আর মানসিকভাবেও আগের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থায় আছি। বিশেষ করে, গত দুই বছর আমার দারুণ কাটছে। সব সংস্করণেই বেশ ভালো খেলেছি। এই ছন্দটা কতটা ধারাবাহিক করা যায়, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার পরবর্তী লক্ষ্য এটাই। আপনি দু-তিন বছর ভালো খেলতেই পারেন। যদি সেটা টানা চার-পাঁচ কিংবা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে রাখতে পারেন, অনেক কিছুই অর্জন করতে পারবেন।

. আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬০ ফিফটির বিপরীতে ১৭টি সেঞ্চুরি সেঞ্চুরির সংখ্যা কি আরও বাড়তে পারত না?

তামিম: ফিফটিগুলোর কতটা সেঞ্চুরি হতে পারত, বলতে পারব না। তবে ১৭টির বেশি তো হতেই পারত (হাসি)! এমন নয় যে সুযোগ পাইনি। অনেক সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করেছি। তবে সেঞ্চুরিসংখ্যা ২৪ বা ২৫টি হলে আরও ভালো লাগত।

. এই মুহূর্তে দলের সিনিয়র যাঁরা আছেন, যেমন মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান এবং আপনি নিজে প্রথম তিনজনই বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করেছেন বা করছেন ব্যতিক্রম শুধু তামিম ইকবাল এ জন্য কোনো আফসোস কাজ করে?

তামিম: কোনো আফসোস নেই। এটা নিয়ে একটা মিনিটের জন্যও ভাবি না। অধিনায়কত্ব করতে বিশেষ গুণ দরকার, যেটা সবার মধ্যে থাকে না। আমি বলছি না যে এটা আমার মধ্যে নেই বা আমার মধ্যে আছে। এটা ক্রিকেট বোর্ডের ওপর নির্ভর করে। তারা যাকে যথার্থ মনে করবে, তাকে অধিনায়ক করবে। ভবিষ্যতে হয়তো আমি হতেও পারি। তবে তারা যদি মনে করে আমি উপযুক্ত নই, তাতেও কোনো অভিযোগ নেই। এটা নিয়ে একদমই ভাবি না।

৯. ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

তামিম: শীর্ষ ১০ ব্যাটসম্যানের একজন হতে চাই। ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ১০ ব্যাটসম্যান হওয়া খুবই কঠিন। তবে সমসাময়িক ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেরা দশে থাকতে চাই।

১০. আপনি ক্যারিয়ারের সমাপ্তিরেখা ছোঁয়ার আগে বাংলাদেশের একটা বৈশ্বিক শিরোপা জেতা সম্ভব?

তামিম: সম্ভব, অবশ্যই সম্ভব। (একটু ভেবে) তবে সে জন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হবে। অনেক ভালো খেলতে হবে। বড় টুর্নামেন্টগুলো জেতা-না জেতা ভাগ্যের ওপরও নির্ভর করে। কীভাবে খেলছি, সেটাও একটা ব্যাপার। তবে অসম্ভব আমি বলব না। ক্রিকেট ইজ আ ফানি গেম, এনিথিং ক্যান হ্যাপেন!