আবাহনীকে থামাতে পারেনি ব্রাদার্স

রুবেল মিয়ার নিরীহ শটটা সহজেই ক্লিয়ার করা যেত। সেটা করতে গিয়ে ডিফেন্ডার লিটন বল মারেন সামনে, কিন্তু বল গেল কিনা নিজেদের জালে! এই গোলই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় ব্রাদার্সকে। কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে l প্রথম আলো
রুবেল মিয়ার নিরীহ শটটা সহজেই ক্লিয়ার করা যেত। সেটা করতে গিয়ে ডিফেন্ডার লিটন বল মারেন সামনে, কিন্তু বল গেল কিনা নিজেদের জালে! এই গোলই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় ব্রাদার্সকে। কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে l প্রথম আলো

শেখ জামালের কাছে হেরে বিদায়ের পর মোহামেডান কোচ সৈয়দ নইমুদ্দিনকে ডাগআউটে নেমে শাসান দলটির কিছু উগ্র সমর্থক। পরদিন থেকে ম্যাচ শেষে দুই দলের কোচকে আর মাঠে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না সাংবাদিকদের সঙ্গে। দুই কোচকে নিয়ে আসা হয় স্টেডিয়ামের তৃতীয় তলায় প্রেস সেন্টারে।
কাল সেখানে গোমড়া মুখে প্রথমে এলেন ব্রাদার্সের কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য। কলকাতার মানুষ। ব্রাদার্স দলটার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ১১ মে। নিজেই বললেন, ‘এই কদিনে আর কতটাই বা কী করতে পারি। তবু ফেডারেশন কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছি, সেমিফাইনালে উঠতে পারলে নিশ্চয়ই খুব ভালো হতো।’
কোয়ার্টার ফাইনালে আবাহনীর মতো দলের সামনে পড়ে যাওয়াটাই সুব্রতর জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। ফেডারেশন কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা এমনিতেই শক্তিতে এগিয়ে। তার ওপর এএফসি কাপের ম্যাচ খেলে দলটির প্রস্তুতিও হয়েছে ভালো। ব্রাদার্স তাই শেষ আটের লড়াইয়ে পেরে ওঠেনি আবাহনীর সঙ্গে। দলীয় পারফরম্যান্সটা মাঠে অনুবাদ করে আকাশি-নীলরাই পা রেখেছে সেমিফাইনালে। ২ জুন শেখ জামাল ধানমন্ডির বিপক্ষে তাদের ফাইনালে ওঠার লড়াই।
কাল ব্রাদার্স কোচ যখন সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঢুকছেন, পাশেই ভিআইপি বক্স থেকে বেরোলেন শেখ জামাল কোচ জোসেফ আপুসি। আবাহনীকে দেখে নিলেন নিবিড়ভাবে। প্রত্যয়ী এই আবাহনীর জন্য নিশ্চয়ই ভিন্ন কোনো কৌশল আঁটবেন আপুসি।
কৌশল নিয়েছিলেন সুব্রতও। ঘর সামলে আক্রমণ। কিন্তু কাজ হয়নি তাতে। যদিও ৪৩ মিনিটে আবাহনী এগিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ব্রাদার্স সেটা ভালোই করছিল। কিন্তু বাঁ প্রান্ত ধরে সোহেল রানার বাড়িয়ে দেওয়া বল আলতো টোকায় নাবিব নেওয়াজ জীবন জালে পাঠানোর পর থেকে ব্রাদার্স খেই হারিয়ে ফেলে।
প্রথমার্থের শেষ দিকে এই গোল হজম করে দ্বিতীয়ার্ধে আর সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি সুব্রতর দলকে। তাই আবাহনী চড়াও হয়ে খেলতে পেরেছে। মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ তৈরি হয়েছে অনেক। পাঁচজন মিডফিল্ডার ওই অঞ্চলটা দখলে রেখে ব্রাদার্সকে ওপরে ওঠার সুযোগই তেমন দেয়নি।
৭৬ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি পায় আবাহনী। সেটি অবশ্য আত্মঘাতী গোল। ব্রাদার্সের এক ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে জড়িয়ে দেন জালে। তবে রেফারি গোলটা দিয়েছেন গোলে শট করা উইঙ্গার রুবেল মিয়ার নামে। দুই গোলে পিছিয়ে ব্রাদার্সের আসলে আর ম্যাচে ফেরার সামর্থ্য ছিল না।
একবার অবশ্য সিও জুনাপিউর শট জালে জড়াল ঠিকই, তবে আগেই ফাউলের বাঁশি বাজান রেফারি ভুবন মোহন। পরে অবশ্য নিজের সিদ্ধান্তকে ভুল বলেছেন তিনি। সে যাহোক, অতিরিক্ত সময়ে একটু প্রাণ ফিরে পায় ব্রাদার্স, ফ্রি কিক থেকে গোল করেন সেই সিও জুনাপিউ।
এই গোলটি স্কোরলাইনটাকে ব্রাদার্সের জন্য একটু ভদ্রস্থই দেখাচ্ছে এই যা। কোচ সুব্রত সেটিই বলে গেলেন, ‘আবাহনী যেমন দল তাতে ২-১ গোলে হার আমি বলব সম্মানজনকই। আমি আসলে এটা বলব না যে, আমাদের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব ছিল। অল্প কয়েক দিন সময় পেয়েছি, দলটির ফিটনেসে এখনো বিশাল ঘাটতি। আমাকে এ নিয়ে আরও কাজ করতে হবে।’
যদিও আবাহনী কোচ দ্রাগো মামিচ আস্থা রেখেছিলেন তাঁর খেলোয়াড়দের ওপর। তবে একজনের খেলায় খুশি হতে পারেননি, ‘ল্যান্ডিংকে ফিট মনে হচ্ছে না। তাই ওকে তুলে এমেকাকে নামাই।’
পরের ম্যাচে ল্যান্ডিংকে একাদশে না রাখার ইঙ্গিত দিলেন মামিচ। দুই বিদেশি কোটায় ডিফেন্ডার সামাদের সঙ্গে রাখবেন স্ট্রাইকার এমেকাকে। ফেডারেশন কাপের শিরোপা ধরে রাখার মিশনে যে একটা পরীক্ষাই দিতে হবে শেখ জামালের কাছে!