মন্ত্রী যখন ফুটবল কোচ

ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে! প্রবাদটা মনে করিয়ে দিলেন আরিফ খান জয়। গরমের মধ্যে পল্টন মাঠে অনূর্ধ্ব-১৬ পাইওনিয়ার ফুটবল লিগের খেলা দেখতে এসে নিজেই হয়ে গেলেন কোচ! বিরতির সময় তিন কিশোরকে টিপস দেওয়া শুরু করলেন। ওই তিন কিশোরের একজন আবার তাঁরই ছেলে জিদান (১৪ নম্বর জার্সি)! বাপ-বেটার কোচিং ক্লাস উপভোগ করছিলেন উপস্থিত সবাই।
ন্যাড়া মাথার জয়কে বাংলাদেশের ফুটবলে আলাদা করে পরিচিত করার কিছু নেই। জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। অনেকের মতে , ‘মারদাঙ্গা ফুটবলার।’ ২০০৩ সাফ জয়ী দলের গর্বিত এই সদস্য এখন নেত্রকোনার সংসদ সদস্য। রাজনীতির মাঠে অল্প সময়ে বাজিমাত করে বর্তমান সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রীও হয়েছেন। তবে সব পরিচয় ছাপিয়ে লোকে তাঁকে চেনে ফুটবলার হিসেবেই। নিজের ফুটবলার পরিচয়টাই গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রী পরিচয়কেও ছাপিয়ে গেল।

ছেলে জিদানকে ফুটবলার বানাচ্ছেন আরিফ খান জয়। ছবি: প্রথম আলো
ছেলে জিদানকে ফুটবলার বানাচ্ছেন আরিফ খান জয়। ছবি: প্রথম আলো

পল্টন ময়দানে পাইওনিয়ার ফুটবলের খেলা সঙ্গী-সাথিসহ দেখছিলেন মগ্ন হয়েই। হঠাৎই খেলা দেখতে একটু যেন উত্তেজিত হয়েই নির্দেশনা দেওয়া শুরু করলেন মাঠে খেলা একটি দলকে। সেটি বোধগম্যই। ড. ওয়াজেদ মিয়ার নামে গঠিত সেই দলে খেলছে জয়ের ছেলে জিদান। ছেলে খেলছে বলেই নয়, এই দলটা তাঁর হাতেই গড়া। সেটা অকপট জয় স্বীকারও করলেন, ‘মন্ত্রী হিসেবে আমার সব দলকেই সমর্থন করা উচিত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বামী, পরমাণুবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার নামে এই দলটা আমার হাতেই গড়া। এর ভালো-মন্দ দেখাশোনার দায়িত্বটাও আমার। তাই নির্দেশনা দিচ্ছি।’
বিরতির সময় আরও বড় চমক। মন্ত্রী আর বসে থাকতে পারলেন না। হঠাৎ ছুটলেন মাঠের দিকে। তিন নবীন ফুটবলারকে ডেকে টিপস দিতে লাগলেন। পরিপাটি পোশাক পরে ফুটবল কোচিং করানো যায় না। কিন্তু তাতে কী, জয় করালেন। গলায় টাই, ফুটবল মাঠে ফুটবল শেখাচ্ছেন তিন ভাবি ফুটবলারকে। জয় বলেই আসলে সম্ভব!
নিজে খেলেছেন শীর্ষ স্তরে। স্বপ্ন দেখেন নিজের ছেলেও ভালো ফুটবলার হবে। ছোট থেকেই জয়ের ছেলে ফুটবলে বুঁদ। বাবা দেশের নামী ফুটবলার, তার ছেলে ফুটবল খেলবে, এটাই তো স্বাভাবিক। জিদান ফুটবলটা গুরুত্বের সঙ্গেই খেলছে, এগিয়ে চলেছে ফুটবলার হওয়ার পথেই। পাইওনিয়ার লিগে ড. ওয়াজেদ মিয়া দলে নাম লিখিয়ে সে চোখ কেড়েছে অনেকেরই। ছেলের খেলা দেখতে প্রায়ই পাশেই সচিবালয়ে কাজ ফেলে ছুটে আসেন বাবা।
জয়ের দুই ভাই অমিত খান শুভ্র ও মাসুদ খান জনিও ছিলেন ওখানে। এই দুজনও জাতীয় দলে খেলেছেন। জনি মনে করিয়ে দেন, একটা সময় পাইওনিয়ার লিগে সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন তিনি। শুভ্র মাইকে খেলার ধারাবর্ণনা দিচ্ছিলেন। ভাতিজার পায়ে বল পড়লে গলার স্বরটাও যেন একটু চড়ে যাচ্ছিল। জয় তো পারলে লাফিয়ে ওঠেন! ছেলের খেলা বলে কথা! যেখানে মন্ত্রী বলে কেতাদুরস্ত হয়ে বসে থাকার কোনো মানেই দেখেন না জয়। ঢেঁকি আসলেই স্বর্গে গেলেও ধান ভানে!