আবাহনীর পেনাল্টি-দুঃখ

আবাহনীর উদ্‌যাপনের মধ্যমণি এমেকা ডার্লিংটন (সামনে, মাঝে)। নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকারের গোলে কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এএফসি কাপে মোহনবাগানের বিপক্ষে শুরুতে এগিয়ে গেলেও আবাহনী শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র করেছে l শামসুল হক
আবাহনীর উদ্‌যাপনের মধ্যমণি এমেকা ডার্লিংটন (সামনে, মাঝে)। নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকারের গোলে কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এএফসি কাপে মোহনবাগানের বিপক্ষে শুরুতে এগিয়ে গেলেও আবাহনী শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র করেছে l শামসুল হক

দুই বাংলার লড়াই শুরুর ৩ মিনিট ৫ সেকেন্ড পরই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ঝুম বৃষ্টি। যে-ই না বজ্রপাতের আওয়াজ পেলেন রেফারি, বন্ধ করে দিলেন এএফসি কাপের এই ম্যাচ। বৃষ্টির অঝোর কান্না থামলে এক ঘণ্টা পর ম্যাচ আবার শুরু।

মাঠে কাদা হয়তো সেভাবে ছিল না। তবে ঘাসের নিচে জমে ছিল পানি। সেটাই সুবিধা করে দেয় আবাহনীকে। খেলা আবার মাঠে গড়াতেই পঞ্চম মিনিটে গোলের আনন্দে ভাসল স্বাগতিক দল। অধিনায়ক মামুন মিয়ার ক্রস থেকে বল বাতাসে রেখেই সাইড ভলিতে লক্ষ্যভেদ নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার এমেকা ডার্লিংটনের।

দুই মিনিট পর এ কী করলেন জোনাথন ডেভিড! অপ্রতিরোধ্য এমেকাকে বক্সে ফেলে দেন মোহনবাগানের এক ডিফেন্ডার। কিন্তু পেনাল্টিতে জোনাথনের শট গেল পোস্ট ঘেঁষে বাইরে। এভাবে ভারী মাঠে মাটি কামড়ানো স্পটকিক কেন নিলেন, ভালো বলতে পারবেন ইংল্যান্ডের এই মিডফিল্ডার।

ওই পেনাল্টি নষ্টই লাইফলাইন দিল মোহনবাগানকে। প্রথমার্ধে দাঁড়াতে না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে ভিন্ন চেহারায় দেখা দেয় কলকাতার দলটি। আবাহনী একটু রক্ষণাত্মক হয়ে যায়, শেষ দিকে তাতে গোটা দলই একরকম দাঁড়িয়ে পড়ে মাঠে। ৮১ মিনিটে তাই আর শেষ রক্ষা হলো না।

মোহনবাগানের আক্রমণে কিছুটা ব্যতিব্যস্ত আবাহনীর রক্ষণে জটলার মধ্য ডাফিকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে বাজল বাঁশি। পেনাল্টি! নিজেরা পেনাল্টিতে গোল করতে না পারলেও পেনাল্টিতে গোল খেল আবাহনী!

স্পটকিকে ভুল করেননি কাতসুমি। গোলরক্ষকের বাঁ দিক দিয়ে পাঠান জালে। এই পেনাল্টি নিয়ে আবাহনী কোচ দ্রাগো মামিচ ক্ষুব্ধ, ‘দ্বিতীয়ার্ধে ওরা ১২ জন নিয়ে খেলেছে। ওটা তো পেনাল্টি কোনোভাবেই হয় না। ওখানে হ্যান্ডবল হয়েছে, যা রেফারি এড়িয়ে যেতে পারত।’ রেফারি সিঙ্গাপুরের হলেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাই তাঁকে এই ম্যাচের দায়িত্ব দেওয়া সহজভাবে নিতে পারেননি আবাহনী কোচ। কারণ, ওই পেনাল্টি গোলেই ম্যাচ শেষ পর্যন্ত ১-১ হয়ে আবাহনীকে হতাশ করেছে।

বিরুদ্ধ পরিবেশে ড্র করে নৈতিক জয়টা আসলে মোহনবাগানেরই। কোচ সঞ্জয় সেন তাঁর দল নিয়ে আজ সকালে হাসিমুখেই ফিরছেন কলকাতায়। কাল ম্যাচের পর বলেও গেছেন, ‘এমন বৃষ্টিভেজা মাঠে খেলা অনেক কঠিন ছিল। তবু আমরা ড্র নিয়ে যাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য স্বস্তির।’

বৃষ্টিভেজা মাঠে শুরুর দিকে অবশ্য অস্বস্তিতে ছিল কলকাতার দলটি। আবাহনী তখন দারুণ খেলছে! বল ঠেলে-ধাক্কিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বক্সে। মোহনবাগান ডিফেন্ডাররা বল ক্লিয়ার করতে এসে হয় পানিতে পিছলা খাচ্ছেন, নয়তো পরাস্ত হচ্ছেন।

এটা দেখে কেউ একজন প্রেসবক্সে মজা করে বলছিলেন, আজ আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল এলেও পারবে না আবাহনীর সঙ্গে। এমেকা হয়ে ওঠেন দুর্বার। একাধিক গোল তাঁর পায়ে দেখা গেল না কেন, সে-ই বরং অবাক ব্যাপার।

কিন্তু জোনাথন? রাত প্রায় পৌনে ১১টায় যখন শেষ বাঁশি বাজল, নিশ্চয়ই নিজেকে অভিসম্পাত দিচ্ছিলেন। পেনাল্টি নষ্ট করেছেন, বক্সের ভেতর থেকে বল আকাশে তুলে দিয়ে যেন অনুচ্চারে বললেন, যা যা, আকাশের দিকে যা...।

কিন্তু কাতসুমির খুশিই হওয়ার কথা। সনি নর্দে না থাকায় বাড়তি দায়িত্ব নিতে চাইছিলেন মোহনবাগানের এই জাপানি ফরোয়ার্ড। ভারী মাঠে অসাধারণ খেলেছেন সবুজ মেরুণ অধিনায়ক।

টুর্নামেন্টে মোহনবাগানের পয়েন্ট যেখানে ৭, আবাহনীর ৪। মোহনবাগানকে হারাতে পারলে গ্রুপে আবাহনীর অবস্থানটা একটু ভদ্রস্থ হতো। আহা, প্রথমার্ধের গতিটা ধরে রেখে এমেকারা যদি জেতাতে পারতেন আবাহনীকে!