'অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রমাণের কিছু নেই'

টানা ক্রিকেটের পর কয়েক দিনের বিশ্রাম। ছুটির সময়টা কাজে লাগাতে কাল রাতে সপরিবার সিঙ্গাপুর উড়ে গেলেন তামিম ইকবাল। ফিরে আসবেন ঈদের আগেই l শামসুল হক
টানা ক্রিকেটের পর কয়েক দিনের বিশ্রাম। ছুটির সময়টা কাজে লাগাতে কাল রাতে সপরিবার সিঙ্গাপুর উড়ে গেলেন তামিম ইকবাল। ফিরে আসবেন ঈদের আগেই l শামসুল হক
স্ত্রী-পুত্র নিয়ে কাল রাতে উড়ে গেছেন সিঙ্গাপুর। ফিরবেন ঈদের আগেই। যাওয়ার আগে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ দলের ওপেনার তামিম ইকবাল বলে গেলেন আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনার কথা। বলেছেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজের পারফরম্যান্স, সেমিফাইনালে খেলার সাফল্য এবং তরুণ ক্রিকেটারদের ব্যর্থতা নিয়েও—

প্রশ্ন: দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। ওয়ানডেতে আপনার ব্যাটিং এখন অনেক পরিণত। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আসন্ন সিরিজে কি টেস্টেও সেটির ছাপ পড়বে?

তামিম: অস্ট্রেলিয়া সেরা দুটি দলের মধ্যে একটি। আমি মনে করি, সেটাই আমাদের জন্য একমাত্র চ্যালেঞ্জ। তাদের বোলিং আক্রমণ খুবই ভালো। তবে আমার মনে হয়, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমার প্রমাণের কিছু নেই।

প্রশ্ন: একমাত্র অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই এখনো টেস্ট খেলেননি। বিশেষ কোনো লক্ষ্য নিয়েই কি তাদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলতে নামবেন?

তামিম: সে রকম কোনো লক্ষ্য থাকবে না। একটা জিনিসই চাইব, আমি এখন যে রকম সুশৃঙ্খল ব্যাটিং করছি, যে প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করছি, এটাকে আরও ভালো করে আরও বেশি সফল হওয়া। নিজের প্রতি আমার একটা চ্যালেঞ্জই থাকবে, যেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ভালো খেলতে পারি। টেস্ট সিরিজটা যেহেতু দেশের মাটিতে, আমরা ফলাফলও ভালো আশা করব।

প্রশ্ন: এর আগে অনেক টুর্নামেন্টই খেলেছেন। বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপও খেলেছে পাঁচটি। তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেই এবার সেরা সাফল্যটা এল। অন্য টুর্নামেন্টগুলোর সঙ্গে এই টুর্নামেন্টের কী পার্থক্য দেখেন?

তামিম: তিন বছর আগে আমরা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম, সেরা আটটি দলের মধ্যে থেকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলব। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। টুর্নামেন্টের আগেও নিজেদের মধ্যে এ আলোচনাটা করি। আমরা একটা লক্ষ্য পূরণ করেছি, কিন্তু এতেই আটকে থাকলে টুর্নামেন্টে কিছু করতে পারব না। শেষ পর্যন্ত আমরা সেমিফাইনাল খেলেছি, এটা ছোটখাটো ব্যাপার নয়। বাংলাদেশ টুর্নামেন্টের সেরা চার দলের একটি। আমরা অবশ্যই চেয়েছি আরেকটা ধাপ ওপরে যেতে। সেটা হলে আমাদের ক্রিকেটের জন্য আরও ভালো হতো।

প্রশ্ন: এই টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশ দল কী শিখল?

তামিম: এই পর্যায়ে আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে আমাদের খেলাটা এখন যে অবস্থায় আছে, তার চেয়ে আরেক ধাপ ওপরে নিতে হবে। আমি নিশ্চিত দলের সবাই-ই এটা উপলব্ধি করেছে।

প্রশ্ন: বছর দুয়েক ধরেই আপনি অনেক ধারাবাহিক। ব্যাটিং অনেক পরিণত। নিজের ব্যাটিং নিয়ে আপনার নিজের উপলব্ধি কী?

তামিম: আপনি যখন ১০-১২ বছর ধরে খেলবেন, ব্যাটসম্যান হিসেবে অবশ্যই কিছু উন্নতি হবে। ব্যাটিং পরিণত হতে থাকবে, অভিজ্ঞতা বাড়বে। এই জিনিসগুলোকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি সব সময় সেই চেষ্টাটাই করি। আমি যেন আমার অভিজ্ঞতা, পরিণতিবোধকে সঠিক কাজে লাগাতে পারি। আমি সব সময়ই বলি আমি নিখুঁত নই। আমাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে।

প্রশ্ন: সৌম্য-সাব্বিরের সামর্থ্য নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কোনো কারণে হয়তো তাঁরা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। মাঠে থেকে তাঁদের খেলা দেখে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

তামিম: তারা অসম্ভব প্রতিভাবান। আমি এটাও বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য তারা দুজনই যথেষ্ট যোগ্য। তবে এটাও ঠিক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যখন আপনি শুরু করবেন তখন কাজটা অনেক সহজ থাকে। প্রতিপক্ষ আপনাকে হয়তো ওভাবে গুরুত্ব দেবে না। সে সুযোগে আপনি কিছু সাফল্য পাবেন। সৌম্য-সাব্বির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে সাফল্য পেলেও এখন হয়তো তাদের নিয়ে প্রতিপক্ষরা আরও ভালোভাবে কাজ করছে। সৌম্য, সাব্বিরেরই এখন দায়িত্ব, ওদের খেলাটাকে আরও ভালো করা।

প্রশ্ন: তাহলে মোস্তাফিজের বোলিংও কি এখন সবাই বুঝে গেছে?

তামিম: মোস্তাফিজ যে ধরনের বোলিং করে সেটা উপমহাদেশের উইকেটে বেশি কার্যকর। তবে বিদেশের উইকেটেও তার পক্ষে ভালো করা সম্ভব। কিন্তু ও একটা চোট থেকে ফিরেছে। পুরো ছন্দে ফিরতে সময় লাগছে। আর মানুষ যদি আশা করে শুরুতে সে যেভাবে উইকেট নিয়েছে এভাবে প্রতিদিনই নেবে, সেটা অন্যায়। তাহলে তো ও বিশ্বের সব রেকর্ড ভেঙে দেবে!

প্রশ্ন: উইকেট পরের কথা, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তো মোস্তাফিজের সেই বোলিংটাই তো দেখা যায়নি...

তামিম: দেখুন, মোস্তাফিজ নিজেও বুঝতে পারছে ওকে আরও ভালো কিছু করতে হবে। যেখানে যে রকম বল করলে ভালো হবে, সেভাবেই বল করতে হবে। ওকে আল্লাহ যে প্রতিভা দিয়েছেন, আমার বিশ্বাস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে। সমস্যা ওর নয়, সমস্যা আমাদের। আমরা ধরে নিয়েছি মোস্তাফিজ বল হাতে নিলেই ৬ উইকেট নেবে, যেটা সম্ভব নয়। মোস্তাফিজ মানেই ১০ ওভার, ২৫ রান, ৪ উইকেট নয়।

প্রশ্ন: চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দলের অভিজ্ঞরা মোটামুটি সফল। পরের ধাপে যেতে যেটুকু ঘাটতি ছিল, সেটা কি তরুণদের জ্বলে না ওঠার কারণে?

তামিম: যাদের জন্য টুর্নামেন্টটা ভালো যায়নি, তারা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তাদের পারফরম্যান্স আরেকটু ভালো হলে হয়তো আমাদের ফলাফলও আরেকটু ভালো হতো। কিন্তু একজন ক্রিকেটারের বাজে ফর্ম যাবেই। সৌম্য আয়ারল্যান্ডে ভালো খেলেছে, অথচ সেখানেই রান করাটা কঠিন ছিল। এসব নিয়ে আলোচনা যত কম হয় তত ভালো। বেশি কথা হলেই সৌম্য-সাব্বিরদের ফিরে আসা কঠিন হবে।