নিকার্কের জয়ে জড়িয়ে গেল বিতর্ক

ট্র্যাকেই হাঁটু গেড়ে একটু জিরিয়ে নেওয়া। পরশু ৪০০ মিটার জয়ের পর ওয়েড ফন নিকার্ক l রয়টার্স
ট্র্যাকেই হাঁটু গেড়ে একটু জিরিয়ে নেওয়া। পরশু ৪০০ মিটার জয়ের পর ওয়েড ফন নিকার্ক l রয়টার্স

লন্ডন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে না থেকেও আছেন মাইকেল জনসন! ১৯৯৫ গোটেনবার্গ চ্যাম্পিয়নশিপের ২০০ ও ৪০০ মিটার জিতে যে ‘ডাবল’-এর কীর্তি গড়েছিলেন আমেরিকান এই অ্যাথলেট, সেটিকে ছুঁয়ে ফেলার পথে ওয়েড ফন নিকার্ক। ২৫ বছর বয়সী দক্ষিণ আফ্রিকান এই অ্যাথলেট পরশু ৪০০ মিটারে জিতেছেন। আজ ২০০ মিটারের ফাইনালে জিতলেই জনসনের সে কীর্তি ছুঁয়ে ফেলবেন নিকার্ক। ঘুরেফিরে আমেরিকান গ্রেটের নামটা তাই আসছেই। তবে পরশু যেন নিজেই হাজির হলেন মাইকেল জনসন! না, ৪০০ মিটারের চ্যাম্পিয়ন ফন নিকার্ককে অভিনন্দন জানিয়ে নয়, জনসন নিজের উপস্থিতি জানিয়েছেন একটা বিতর্ক উসকে দিয়ে!

সেটি কী? লন্ডনের ট্র্যাকে ৪০০ মিটারে ফন নিকার্কের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বতসোয়ানার আইজ্যাক ম্যাকওয়ালা। ছোঁয়াচে ‘নরোভাইরাস’-এ আক্রান্ত হওয়ায় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনস (আইএএএফ) ফাইনালে ট্র্যাকেই নামতে দেয়নি ম্যাকওয়ালাকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জনসন বলেছেন, ‘ম্যাকওয়ালাকে অযোগ্য ঘোষণা করে কী সাংঘাতিক ভুল হয়েছে, তা শিগগিরই বুঝতে পারবে আইএএএফ। এটা কি অন্য অ্যাথলেটদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? যদি তুমি পড়ে যাও, তাহলে তুমি ঠিক আছ; কিন্তু তুমি যদি বমি করো, তুমি ঠিক নেই।’ এখানেই থেমে থাকেননি জনসন। ইঙ্গিত করেছেন, এর পেছনে অন্য কিছুও থাকতে পারে, ‘আসল কথা হলো, সে-ই ছিল ২০০ ও ৪০০ মিটারে ওয়েড ফন নিকার্কের একমাত্র চ্যালেঞ্জার। তাকেই দৌড় থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো। ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব কিন্তু বাতাসে উড়ছে। নীরবতা তা আরও বাড়াবে।’

জনসনের আগে বতসোয়ানা দলের পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়, ম্যাকওয়ালা সুস্থ হওয়ার পরও তাঁকে দৌড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়নি। ইংল্যান্ডের আইটিভিতে বতসোয়ানার অ্যাথলেটের লাইভ ভিডিও সম্প্রচার করা হয়েছে, যেখানে ম্যাকওয়ালা দাবি করছেন, ‘তারা বলেছে, তুমি দৌড়াতে পারবে না, কারণ তুমি অসুস্থ। আমার তো মনে হয়, এটা একটা অন্তর্ঘাত।’

‘ষড়যন্ত্র’ কিংবা ‘অন্তর্ঘাত’ যে যা-ই মনে করুন না কেন, আইএএএফ তাদের ‘সঠিক’ অবস্থানের পক্ষে অনড়। সংস্থার পক্ষে বলা হয়েছে, নরোভাইরাস ছোঁয়াচে রোগ, যা সহজেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই রোগ হলে রোগীকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। কিন্তু ১৮ ঘণ্টার মধ্যেই বমি করেছেন ম্যাকওয়ালা, যা তাঁর আক্রান্ত হওয়ার কথাই বলে। আইএএএফের প্রধান চিকিৎসক পান ভেমিংয়ের ব্যাখ্যা, ‘চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা আছে আমার। এখানকার প্রত্যেক অ্যাথলেটের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাটা আমার দায়িত্ব। আর এটা এমন একটা রোগ, যা দ্রুত সংক্রমিত হয়।’

ম্যাকওয়ালাকে নিয়ে এই বিতর্ক বাদ দিলে দিনের নায়ক কিন্তু ফন নিকার্কই। রিও অলিম্পিকের ৪০০ মিটারে মাইকেল জনসনের ১৭ বছরের পুরোনো ৪৩.১৮ সেকেন্ডের রেকর্ড ভেঙে গড়েছিলেন ৪৩.০৩ সেকেন্ডের নতুন রেকর্ড। সে তুলনায় পরশু অবশ্য অনেক বেশি সময় নিয়ে ফেলেছেন ফন নিকার্ক—৪৩.৯৮ সেকেন্ড। তা লাগুক, পরশুর জয়ে জনসনের হাতছোঁয়া দূরত্বে চলে এসেছেন। ১০ সেকেন্ডের নিচে ১০০, ২০ সেকেন্ডের নিচে ২০০ এবং ৪৪ সেকেন্ডের নিচে ৪০০ মিটারে দৌড় শেষ করা ইতিহাসের একমাত্র অ্যাথলেট ফন নিকার্ককেই যে বেশি মানায় জনসনের ডাবলের কীর্তিটা।

ফন নিকার্কে ক্রমেই আড়াল হয়ে যাওয়া থেকেই কি আইএএএফের ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছেন জনসন! এএফপি, রয়টার্স, আইএএএফ।