'শক্তভাবে' ফিরবেন শফিউল

অনুশীলনে দুষ্টুমির ছলেই রুবেলের ভার নিলেন শফিউল। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ভার নিতে চান দলের পেস বোলিংয়েরও। কাল মিরপুরে l প্রথম আলো
অনুশীলনে দুষ্টুমির ছলেই রুবেলের ভার নিলেন শফিউল। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ভার নিতে চান দলের পেস বোলিংয়েরও। কাল মিরপুরে l প্রথম আলো

শফিউল ইসলামের জন্য কোর্টনি ওয়ালশের পরামর্শ দুটি।

এক. বোলিং করার সময় শরীরের ভারসাম্য যতটা সম্ভব ঠিক রাখতে হবে। ভারসাম্য যত ঠিক, বল হবে তত নিখুঁত।

দুই. নিজেকে অনেক ফিট রাখতে হবে শারীরিক-মানসিকভাবে। শিখতে হবে কঠিন সময়ে নির্ভার থাকার কৌশল।

শফিউল নিজেও নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সব দুর্বলতা কাটিয়ে দলে হারানো জায়গা পাকা করে নিতে হবে। এবার ফিরলে সেটা যেন হয় ‘শক্তভাবে’ ফেরা।

২০১০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা। শুরুটা আশা-জাগানিয়াই ছিল। ভালো গতি আর সুইং করানোর ক্ষমতা শফিউলকে দেখিয়েছিল সম্ভাবনার অসীম আকাশ। অথচ সাড়ে সাত বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এই পেসার খেলেছেন মাত্র ৯টি টেস্ট আর ৫৬টি ওয়ানডে! ৫ উইকেট নেই কোনো ধরনের ক্রিকেটেই। জাতীয় দলে নতুন নতুন পেসার এসেছেন। কখনো চোট-আঘাত, কখনো ফর্মহীনতায় তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পেরে ওঠেননি শফিউল।

পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ শফিউলের পিছিয়ে পড়ার মূল কারণটা ধরতে পেরেছেন বলেই মনে হচ্ছে। নইলে ফিটনেস আর শারীরিক ভারসাম্য ঠিক রাখার কথাই কেন জোর দিয়ে বলবেন! ছোট-বড় চোট তাঁর পিছু ছাড়ছে না। ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬-এর অক্টোবর—ক্যারিয়ার থেকে এই দুটি বছর হারিয়ে গেছে এসব কারণেই!

চোট নিয়ে দুশ্চিন্তা তাই শফিউলের অবচেতন মনেরও সঙ্গী। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কাল অনুশীলন শেষে ২৭ বছর বয়সী পেসারের কথায় খুঁজে পাওয়া গেল সেই ছাপ, ‘যখনই আমি দলে ফিরি, একটা না একটা চোটে পড়ে যাচ্ছি। এখানে আমার কিছু করারও নেই। চেষ্টা করছি চোট থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু পারছি না।’

শফিউলের দাবি, এ মুহূর্তে তিনি সম্পূর্ণ ফিট। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে খেলার সুযোগ হবে কি না জানেন না। তবে হলে সামর্থ্যের পুরোটা ঢেলে দিতে প্রস্তুত, ‘আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি। অনুশীলনে, প্রস্তুতি ম্যাচে—সব জায়গাতেই আমি আমার কাজটা ঠিকমতো করছি। জাতীয় দলে থাকব কি না, সে ব্যাপারে আমি শুধু চেষ্টা করে যেতে পারি।’

চট্টগ্রামে হওয়া তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে সে চেষ্টারই ফল মিলেছে। এক ইনিংসে ১৭ রানে পেয়েছেন ৫ উইকেট। অনেক দিন পর নতুন বলের এই সাফল্যে উজ্জীবিত শফিউল, ‘নতুন বলে অনেক দিন পর বল করলাম। আমি চেষ্টা করেছি বলটাকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে, যাতে ভালো সুইং পাই। যা চেয়েছি সেটাই হয়েছে।’

এ রকম উন্নতির আরও অনেক জায়গা দেখেন শফিউল। শুধু নিজের নয়, বাংলাদেশ দলের সব পেসারেরই। তাঁর যেমন মনে হচ্ছে, পেসারদের শুরু থেকেই আরও আক্রমণাত্মক বোলিং করা উচিত। প্রয়োজন দেখেন গতির সঙ্গে বোলিংয়ে আরও বৈচিত্র্য আনারও, ‘আমাদের দেশে টেস্টে স্পিনাররাই বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে। সে তুলনায় পেসাররা সেভাবে ব্রেক থ্রু দিতে পারি না। পেসারদের অবশ্যই এই জায়গায় উন্নতি করতে হবে। ভালো জায়গায় বল ফেলে উইকেট নেওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে।’

সামর্থ্য কাজে লাগাতে পারলে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে পেসারদের সাফল্যই দেখেন শফিউল, ‘আমাদের পেস বোলিং বিভাগ অনেক শক্তিশালী। যে-ই খেলুক, তাদের সামর্থ্য আছে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াই করার।’ উইকেট যেমনই হোক, প্রতিপক্ষ শিবিরে শুরুতে আঘাত আনার দায়িত্বটা পেসারদের বলেই মনে করেন তিনি। স্পিনারদের পক্ষে ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরা তখন সহজ হয়ে যায়।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই দায়িত্বটা নিজেই পালন করতে উদ্‌গ্রীব শফিউল। সুযোগ পেলে এবার লক্ষ্যই হলো দলে জায়গা ধরে রাখা, ‘দলে আমাকে যে জন্য নেবে, সেই প্রত্যাশাটা পূরণ করতে চাই। সবচেয়ে বড় কথা আমি শক্তভাবে দলে ফিরতে চাই।’

দুঃসময় কাটিয়ে ওঠার প্রথম শর্তই হলো নিজের ওপর নিজের আস্থা। শফিউলের মধ্যে সেটার কোনো কমতি নেই।