বায়ার্নকে ঠেকাতে বোল্টই প্রেরণা!

শুধু শুধুই লিগটা আয়োজন করছে জার্মান ফুটবল লিগ কর্তৃপক্ষ। নয় মাস ধরে লিগ চলবে, ১৮ দলের প্রত্যেকে ৩৪টি করে ম্যাচ খেলবে...কী দরকার? আগেভাগেই শিরোপাটা বায়ার্ন মিউনিখকে দিয়ে দিলেই তো হয়!

লিগ শুরুর আগের জরিপ বায়ার্ন মিউনিখকেই চ্যাম্পিয়ন বলছে। বায়ার্নের প্রতিদ্বন্দ্বী ১৭ দলের ১৩টির কোচের চোখেই এবারও ‘ফেবারিট’ কার্লো আনচেলত্তির দল। সেটি হলে টানা শিরোপা জয়ের রেকর্ডটা ছয়ে নিয়ে যাবে বাভারিয়ান ক্লাবটি। অবশ্য একটা ‘কিন্তু’ আছে। কোচরা জরিপে বায়ার্নকে ‘হট ফেবারিট’ বললেও বাভারিয়ানদের টপকে শিরোপা জয়ের অন্য একটা প্রেরণাও তাঁদের আছে। উসাইন বোল্ট!

এবারের লন্ডন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ক্যারিয়ারে শেষবারের মতো দৌড়াতে গিয়েই দুর্ভাগ্যের ফেরে পড়েছেন বোল্ট। ব্যক্তিগত ১০০ মিটারে হয়েছেন তৃতীয়, আর ৪^১০০ মিটারে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ে দৌড়ই শেষ করতে পারেননি জ্যামাইকান কিংবদন্তি স্প্রিন্টার! জার্মান লিগের ‘বোল্ট’ বায়ার্নেরও একই পরিণতি কামনা করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী কোচরা। ‘যদি উসাইন বোল্ট ১০০ মিটারে হারতে পারে, তাহলে জার্মানিতেও যে কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে পারে’—কোলন কোচ পিটার স্টোজার আশাটা অনুচ্চারিতও রাখেননি।

যদিও স্প্রিন্ট নয়, ফুটবল লিগ একটা ম্যারাথন। ৩৪ ম্যাচের সেই ‘ম্যারাথনে’ বায়ার্ন কদাচিৎই হোঁচট খায়। গত ১০ বছরে খেয়েছে মাত্র তিনবার, সাতবারই লিগ জিতেছে। লিগে দ্বিতীয় হওয়াই যে তাদের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা! ক্লাবের সভাপতি উলি হোয়েনেস জানিয়েও দিয়েছেন, ‘বুন্দেসলিগার শিরোপা জেতাটাই আমাদের মানদণ্ড।’ অবশ্য অবসরে চলে যাওয়া ফিলিপ লাম, জাবি আলোনসোদের এবার পাচ্ছে না বায়ার্ন। দলে নতুন আসা হামেস রদ্রিগেজ, কোরেন্তিনো তোলিসোরা কেমন করেন, তা একটা প্রশ্ন।

প্রতিদ্বন্দ্বীরাও তো আর ছেড়ে কথা বলবে না! বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের কোচ পিটার বশ, হফেনহাইমের ‘মিনি মরিনহো’ ইউলিয়ান নাগলসমান ও স্টুটগার্টের হানেস ওলফ—জরিপে এই তিনজনই শুধু বায়ার্নকে ফেবারিট বলেননি। আর লেভারকুসেন কোচ হেইকো হেনরিখের চোখে, ডর্টমুন্ডই এবার শিরোপার ফেবারিট।

তবে গত মৌসুমে চমক দেখিয়ে দ্বিতীয় হওয়া আরবি লাইপজিগ এবার যুদ্ধে নামার আগেই যেন সাদা পতাকা ওড়াচ্ছে। কোচ রালফ হাসেনহাটলের কথায় তেমনই আভাস, ‘সব স্বাভাবিকভাবে চললে বায়ার্নই আবারও জিতবে। আমরা আবার চমক দেখাতে চাইব, তবে এই মৌসুমটা অনেক কঠিনই হবে।’

সহজ কবেই বা ছিল! এএফপি।

 নতুন লোগো

১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে শুরু হওয়া বুন্দেসলিগা প্রথম লোগো পেয়েছে ১৯৯৬ সালে। এবার ষষ্ঠবারের মতো লোগোর রঙে-ঢঙে বদল এসেছে। এর মধ্যে শুধু ২০১২-১৩ মৌসুমের লোগোটি ছিল বিশেষ—সেটি ছিল বুন্দেসলিগার ৫০তম মৌসুম।

 বায়ার্ন-লিগা!

লিগের নামটা বুন্দেসলিগা না রেখে একবারে বায়ার্ন-লিগা রেখে দিলেই হতো। বুন্দেসলিগা নাম হওয়ার পর ৫৫ মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখই লিগ জিতেছে ২৭ বার, বাকি ২৮ বার ভাগাভাগি করে জিতেছে ১১টি দল। সর্বশেষ ২০ মৌসুমেই ১৩ বার লিগ জিতেছে বায়ার্ন। এর বাইরে ডর্টমুন্ড ও মনশেনগ্লাডবাখ পাঁচবার করে জিতেছে। ভেরডার ব্রেমেন চারবার, স্টুটগার্ট ও হামবুর্গ জিতেছে তিনবার করে। দুবার করে জিতেছে কোলন ও কাইজারস্লটার্ন। আর টিএসভি ১৮৬০, ব্রনশোয়াইগ, নুর্নবার্গ ও ভলফ্‌সবুর্গ জিতেছে একবার করে।

যেখানে প্রথম

প্রিমিয়ার লিগে অঢেল টাকা আছে, স্প্যানিশ লিগে মেসি-রোনালদো আছেন, জার্মান লিগের কী আছে? কেন, দর্শক! শুধু ইউরোপ নয়, বিশ্বের যেকোনো লিগের চেয়েই ম্যাচপ্রতি গড় দর্শকের সংখ্যা বুন্দেসলিগায় বেশি। ১৮টি ক্লাবের জার্মান লিগে গত মৌসুমে ম্যাচপ্রতি গড় দর্শক ছিল প্রায় ৪১ হাজার ৫০০। আর ২০ ক্লাবের প্রিমিয়ার লিগে সেটি ৩৫ হাজার ৮০০। স্প্যানিশ লিগে ২৭ হাজার ৭০০! এর বড় কারণ অবশ্যই টিকিটের দাম। ইংল্যান্ড ও স্পেনে ম্যাচ দেখতে গড়ে ৫০ পাউন্ডের বেশি খরচ হয় (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ২০০ টাকা), জার্মানিতে খরচ এর অর্ধেক। স্টেডিয়ামের আকারেরও ভূমিকা আছে এতে। বুন্দেসলিগায় গত মৌসুমে ১১টি ক্লাবের স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতাই ছিল ৫০ হাজারের ওপরে। স্প্যানিশ লিগে তেমন স্টেডিয়াম ছিল ৭টি ক্লাবের, প্রিমিয়ার লিগে ৫টির।