ব্যাটসম্যানদের তিন চ্যালেঞ্জ

মুশফিকুর রহিম
মুশফিকুর রহিম

ওয়েলিংটন, ক্রাইস্টচার্চ, হায়দরাবাদ আর গলের কথা ভুলে যান। এই চারটি টেস্টের ঠিক আগের আর পরের টেস্ট দুটিকে স্মৃতির আয়নায় ভাসিয়ে তুলুন। কী দেখতে পাচ্ছেন?

নিজেদের খেলা সর্বশেষ টেস্টে বাংলাদেশ কলম্বোয় হারিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। যেটি ছিল বাংলাদেশের শততম টেস্ট। এর চার টেস্ট আগে দেশের মাটিতে সর্বশেষ টেস্টেও জয় এসেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ২৭ আগস্ট মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে স্টিভ স্মিথের দলের মুখোমুখি হওয়ার আগে মুশফিকুর রহিমের দল তাই উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাসী থাকবে। ঘরের মাঠ, পরের মাঠ—সব জায়গাতেই যে ‘সর্বশেষ’ টেস্টটি জয়ের আলোয় আলোকিত!

টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের বিশ্বাস, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ভিন্ন কিছু হবে না। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ২-০ লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছেন। সে রকম কিছু না বললেও সাহসী উচ্চারণ অধিনায়কের কণ্ঠে, ‘প্রতিটি বিভাগেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সিরিজ জিততে চাই। ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকেই বলুন অথবা দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটাই আমার লক্ষ্য।’

তা এতটা আত্মবিশ্বাসী কীভাবে হতে পারছেন অধিনায়ক? পারছেন এই কারণে যে, অস্ট্রেলিয়ানদের যে জিনিসটা নিয়ে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বেশি ভয় পাওয়ার কথা, সেই বোলিং ঠেকিয়ে দেওয়ার মূলমন্ত্রটা পেয়ে গেছেন ব্যাটসম্যানরা।

 ব্যাটসম্যানদের তিন চ্যালেঞ্জ

অধিনায়কের বিশ্লেষণ, অস্ট্রেলিয়ান বোলিং আক্রমণের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তিন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন। তাঁর মুখেই শুনুন—

এক.নতুন বলের চ্যালেঞ্জ। ওরা চেষ্টা করবে সুইং করিয়ে আমাদের বিপদে ফেলতে। এটাতে ব্যর্থ হলে বাউন্সারে ঘায়েল করার চেষ্টা করবে। বিশেষ করে প্যাট কামিন্সকে দিয়ে এটা করানোর চেষ্টা হতে পারে।

দুই.উইকেট সোজা বল আর রিভার্স সুইং। এ সময় ক্যাচের জন্য ফিল্ডারদের হয়তো একটু সামনে এগিয়ে আনবে।

তিন.স্পিনও ওদের একটা শক্তি। বিশেষ করে অভিজ্ঞ অফ স্পিনার নাথান লায়নকে ওরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে।

অস্ট্রেলিয়ান বোলিং আক্রমণ উপমহাদেশে কিছুটা অনভিজ্ঞ হলেও মুশফিক মনে করিয়ে দিলেন, ‘ওরা সম্প্রতি ভারতে লম্বা একটা সিরিজ খেলেছে। আমাদের উইকেটের চরিত্র হয়তো ভারতের উইকেটের চেয়ে একটু ভিন্ন হবে, তারপরও ওরা মোটামুটি অভ্যস্ত হয়েই আসবে।’

 চ্যালেঞ্জ জয় করার মন্ত্র

অস্ট্রেলিয়ার বোলিং অস্ত্র ভোঁতা করে দেওয়ার প্রস্তুতিটা কাজে লাগাতে পারলে সিরিজে সোনালি সাফল্য দেখছেন অধিনায়ক। সেটার ছকও তৈরি। তাতে কিছু নাম আলাদাভাবেই এল—লায়ন, অ্যাগার, সুইপসন, হ্যাজলউড। এঁদের কাকে কীভাবে সামলানোর পরিকল্পনা? মুশফিক নাম ধরে ধরেই জানালেন সেটা, ‘লায়নকে পা ব্যবহার করে খেললে সফল হওয়া যাবে। অ্যাগার ও সুইপসন যদি খেলে, ওরা অনেক বাজে বল দেবে বলে আমার ধারণা। কাজেই ধৈর্য ধরে খেললে সাফল্য আসবে। লায়ন ও হ্যাজলউড অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ উইনিং বোলার। ওদের বেশি উইকেট না দিয়ে একটু সতর্ক হয়ে খেলতে হবে।’

অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ের বিপক্ষে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের, এই বিশ্বাস নিয়েই এখন সিরিজের অপেক্ষায় টেস্ট অধিনায়ক। যেটুকু ঘাটতি ছিল, গত কয়দিনের প্রস্তুতিতে পূরণ হয়ে গেছে সেটাও, ‘ওই তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্যই দুই মাস ধরে আমরা অনুশীলন করছি। নতুন বলটা দ্রুত পুরনো হয়ে রিভার্স সুইং শুরু হয়ে না গেলে অনেক ভালো করবে আমাদের ব্যাটসম্যানরা।’

মুশফিকের চোখে প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়া দলের একটা বড় দুর্বলতা তারা নিজেরাই। অর্থাৎ যে কারণে তারা প্রতাপশালী, সেই আক্রমণাত্মক মানসিকতা। অধিনায়কের ভাষায়, ‘অস্ট্রেলিয়া এমন একটা টেস্ট দল, যারা শুধু আক্রমণই করতে থাকে। এসব দলের বিপক্ষে রান করাটা তুলনামূলকভাবে সহজ। ব্যাটসম্যানরা প্রথম ২০-৩০টি বল টিকতে পারলে ইনশা আল্লাহ বড় ইনিংস খেলা যাবে। প্রথম ইনিংসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হবে।’

মুশফিকের কথায় পরিষ্কার, বাংলাদেশ দলের অস্ট্রেলিয়া-পরীক্ষার প্রস্তুতিটা হচ্ছে দুর্দান্ত। চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ক্লাসে রীতিমতো প্রশ্ন ধরে ধরে চলছে সমাধান। এখন প্রশ্নগুলো ‘কমন’ পড়লেই হয়।