ইমরুল-শামসুরকে তামিমের পরামর্শ

আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রস্তুতি শুরু হবে ২৪ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু তার আগে থেকেই নিজেদের প্রস্তুত রাখতে চাইলে দোষ কী! কাল ঐচ্ছিক অনুশীলন শেষে মিরপুরের ইনডোর থেকে এভাবেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বের হচ্ছিলেন সাকিব ও মাশরাফি। প্রথম আলো
আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রস্তুতি শুরু হবে ২৪ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু তার আগে থেকেই নিজেদের প্রস্তুত রাখতে চাইলে দোষ কী! কাল ঐচ্ছিক অনুশীলন শেষে মিরপুরের ইনডোর থেকে এভাবেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বের হচ্ছিলেন সাকিব ও মাশরাফি। প্রথম আলো

শরীরে বাড়তি মেদ বলে কিছু নেই। থাকবে কী করে? ওজন যে আট কেজি কমে গেছে! নিয়মিত ফিটনেস ট্রেনিংয়ের সঙ্গে গত কয়েক মাস সাইকেলও চালাচ্ছেন খুব। ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ডিওএইচএসের রাস্তায় রীতিমতো সাইক্লিস্ট!

তবে মাঠে ক্রিকেটারই। আর সতীর্থদের সঙ্গে মাঝে মাঝে বড় টিপ্পনিবাজও। কাল মিরপুর স্টেডিয়ামের বাইরে ইমরুল কায়েসকে সামনে পেয়েই যেমন খোঁচাতে শুরু করলেন, ‘ভাব খুব বাড়ছে, তাই না? আগে তো...।’ গাড়ি নিয়ে তখনই স্টেডিয়াম থেকে বের হচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান। তামিম কথা শেষ করার আগেই তিনিও যোগ দিলেন দুষ্টুমিতে। ইমরুল কোনো জবাব না দিয়ে মুখে লাজুক হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন।

‘ভাব বাড়ার’ অভিযোগটা কপট। দুই বছর পর আবার জাতীয় দলে ডাক পাওয়া ইমরুলকে দুষ্টুমির ছলে ওই কথা বলে আসলে স্বাগতই জানালেন সাকিব-তামিম। সাকিব চলে যাওয়ার পর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে তামিম আরও খানিকটা সময় কথা বললেন ইমরুলের সঙ্গে। কী কথা—ওপেনিং জুটিটা আবার দাঁড় করাতে হবে?

সামনে শ্রীলঙ্কা সিরিজ। তার আগে দুজনের মধ্যে এমন আলোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। খুব বেশি দিন আগের কথা তো নয়, বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি মানেই ছিল তামিম-ইমরুল। ২০১১ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের পর ইমরুল চলে যান জাতীয় দলের বাইরে। এরপর তামিমের সঙ্গে অনেককেই চেষ্টা করানো হলেও থিতু হতে পারেননি কেউ। ইমরুলের দলে ফেরায় তামিমের তাই খুশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। সে জন্য আগে থেকে ইমরুলের পক্ষে একটু ব্যাটও করে রাখলেন, ‘ইমরুল ওপেনার হিসেবে প্রমাণিত। দলে যখন একজন ওপেনার ফিরে আসে, তাঁকে একটু সময় দেওয়া উচিত। হয়তো সে আগে বিশটা ম্যাচ খেলেছে, কিন্তু মাঝখানে এত লম্বা বিরতি পড়েছে যে ওর অবস্থা থাকবে অভিষেক ম্যাচ খেলার মতোই।’

মেদ ঝরিয়ে নতুন চেহারায় তামিম। প্রথম আলো
মেদ ঝরিয়ে নতুন চেহারায় তামিম। প্রথম আলো

ইমরুল-শামসুরকে দলে এনেছে ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স। দুজনকে তামিমের পরামর্শ, টেস্ট ক্রিকেটেও যেন তাঁরা একই মানসিকতা নিয়ে খেলেন, ‘আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলি এক রকম, টেস্ট ক্রিকেটে খেলি আরেক রকম। আমি বলব, বিসিএলে ওরা যেভাবে রান করেছে, টেস্টেও ঠিক সেভাবে খেলতে। ওখানে যেভাবে রান করেছে, সেভাবে খেললেই সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়বে।’

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি মূলত বিসিএলের এই দুটি চার দিনের ম্যাচই। তামিম খুব প্রশংসা করলেন বিসিবির এমন উদ্যোগের, ‘স্বল্প সময়ের আয়োজনে বোর্ড দুটি চার দিনের ম্যাচ আয়োজন করায় সবাই খেলার মধ্যে আছে। প্রস্তুতিটা এখন অনেক ভালো। অনেকেই বড় ইনিংস খেলেছে। এখন বিসিএলের আত্মবিশ্বাসটা টেস্ট ম্যাচে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।’ সঙ্গে নিয়ে যেতে বললেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজের স্মৃতিও। টেস্টে যে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের সামনে বরাবরই এক দৈত্য, সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তাদের মাটিতেই টেস্ট ড্র করার স্মৃতি তো বড় অনুপ্রেরণাই।

শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর পরই এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আগামী তিন মাস তাই বাংলাদেশ দলের জন্য একই লক্ষ্যের ফ্রেমে বন্দী। তামিমের ভাষায়, ‘খেলতে হবে গত এক-দেড় বছরের ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে।’ তবে সবার আগে যেহেতু শ্রীলঙ্কা সিরিজ, আর সবার মতো সাফল্যের মশাল দৌড় সেটা দিয়ে শুরু করতে চান তামিমও।
কিন্তু একটার পর একটা খেলার চাপের সঙ্গে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড মিলে যে নতুন চাপও তুলে দিচ্ছে বাংলাদেশ দলের ওপর! তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কুক্ষিগত করার ছক সফল হলে টেস্ট মর্যাদা নিয়েও টেস্টে ব্রাত্য হয়ে যাবে বাংলাদেশ। ব্যাপারটা বিসিবিকে আদৌ ভাবাচ্ছে কি না, তা কাল পর্যন্তও স্পষ্ট বোঝা যায়নি। তবে ক্রিকেটাররা পড়ে গেছেন শঙ্কার মধ্যে। তামিম যেমন ‘মন্তব্য করব না, করব না’ করেও বললেন, ‘আইসিসি ক্রিকেটের প্রসার চাচ্ছে, এখন যদি এখান থেকে ক্রিকেট চলে যায়, তাহলে আর সেটা কীভাবে হলো? আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করব, এটা যেন না হয়।’
তামিমের অনুরোধ প্রতিধ্বনিত হবে তো দুবাইয়ের বোর্ড সভায়?