সাকিব যদি না থাকেন

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট থেকে ‘ছুটি’ চেয়েছেন সাকিব। ছবি: শামসুল হক
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট থেকে ‘ছুটি’ চেয়েছেন সাকিব। ছবি: শামসুল হক

আনুষ্ঠানিকভাবে দল ঘোষণা করেনি ক্রিকেট বোর্ড। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় সাদা পোশাকে সাকিব আল হাসানকে দেখার আশা না করাই ভালো। একজন ক্রিকেটার যখন নিজে থেকেই বিশ্রাম চান, তখন তাঁকে জোর করে খেলানোর নজির ক্রিকেটে খুব একটা দেখা যায় না। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কঠিন এক পরীক্ষাতেই পড়ছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের শূন্যস্থান পূরণ করবেন কে?

র‍্যাঙ্কিং-সেরা অলরাউন্ডার বলেই এ প্রশ্ন জাগছে না। সাকিবের শূন্যস্থান যে আসলেই বাংলাদেশের পক্ষে পূরণ করা অসম্ভব। র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ চার অলরাউন্ডারের বাকি তিনজনই বোলিং কিংবা ব্যাটিংয়ের সুবাদে দলে জায়গা পাকা করেছেন। ইদানীং ব্যাটিং-বোলিং দুদিকেই নিজেদের প্রতিভা দেখাচ্ছেন। সাকিবের ব্যাপারটা পুরো উল্টো। ব্যাটিং হোক কিংবা বোলিং—দুই দিক থেকেই যে দলের মূল ভরসা সাকিব। ২০০৭ সালে অভিষেকের পর ৫১টি টেস্ট খেলেছেন সাকিব। তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশ মাঠে নেমেছে মাত্র সাতবার।

সাকিব খেলেছেন এমন টেস্টে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ বোলার

বোলার

ম্যাচ

ইনিংস

উইকেট

গড়

৫ উইকেট

সাকিব আল হাসান

৫১

৮৬

১৮৮

৩২.৩৭

১৭

শাহাদাত হোসেন

২৭

৪৪

৫১

৫০.১৩

তাইজুল ইসলাম

১৩

২৪

৪৬

৩৩.৩

মেহেদী হাসান মিরাজ

১৭

৪৩

৩১.৩৪

মাহমুদউল্লাহ

১৭

৪১

৩২

৪৩.৮৪

যে ৫১ টেস্টে মাঠে নেমেছেন এই অলরাউন্ডার, ব্যাটে কিংবা বলে তাঁকে ছাড়াতে পারেননি কেউ। ৩ হাজার ৫৯৪ রান তোলা সাকিবের চেয়ে পিছিয়ে আছেন নিখাদ ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালও। তবে এটা ঠিক সাকিবের সঙ্গে ৪ টেস্টে নামতে পারেননি তামিম। কিন্তু একজন ওপেনারের সঙ্গে সাকিবের এমন তুলনা বলে দিচ্ছে, দলে তাঁর গুরুত্ব কতটা।

বোলিংয়ে নজর দিলে অবশ্য এটা বুঝতে বাড়তি কিছু বলার দরকারও হয় না। যে ৫১ টেস্ট খেলেছেন সাকিব, তাতে বাংলাদেশের বোলাররা উইকেট পেয়েছেন ৬৪৩টি, সাকিব একাই নিয়েছেন এর ১৮৮টি। অর্থাৎ দলের ২৬.৬৭ ভাগ সাফল্য আসে সাকিবের হাত ধরে। দ্বিতীয় সফল বোলারের নাম স্মৃতি থেকে হারিয়ে না গেলেও বহুদিন হলো বাংলাদেশ দলের স্কোয়াড থেকে তিনি হারিয়ে গেছেন। ২৭ টেস্টে শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৫১ উইকেট। ৪৬ উইকেট নিয়ে তিনে আছেন তাইজুল। সে তুলনায় মিরাজ সাকিবের ভালো বিকল্প হয়ে উঠে আসছেন। মাত্র ৯ টেস্টে ৪৩ উইকেট নিয়ে দলের দ্বিতীয় ভরসার বোলার এখন মিরাজই।

এসবই সংখ্যার হিসাব-নিকাশ। সাকিবকে ছাড়া দল গড়তে গেলে এসব হিসাব-নিকাশও কোনো কাজে আসবে না। একজন খেলোয়াড় দিয়ে দুটো শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য এখন ঢেলে সাজাতে হবে পুরো দলকেই। এর আগে চোট ও নিষেধাজ্ঞার কারণে শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে যেতে পারেননি সাকিব। প্রতিবারই দলের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছিল। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কায় মাহমুদউল্লাহ, নাসির হোসেন ও সোহাগ গাজী মিলে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। সেবার অবশ্য মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মুদ আশরাফুলের এক অসাধারণ জুটিতে একটি টেস্ট ড্র করেছিল বাংলাদেশ।

২০১৪ সালেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নাসির, মাহমুদউল্লাহ ও শুভাগত হোমকে দিয়ে দল সাজানোর চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ। লাভ হয়নি কোনো, ব্যাটিংয়ে তবু সামলে নেওয়া গেছে, বোলিংয়ে কেউ ভরসা দিতে পারেননি দলকে।

সাকিব খেলেছেন এমন টেস্টে বাংলাদেশের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান

ব্যাটসম্যান

ম্যাচ

ইনিংস

রান

গড়

সেরা

১০০/৫০

সাকিব আল হাসান

৫১

৯৬

৩৫৯৪

৪০.৩৮

২১৭

৫/২২

তামিম ইকবাল

৪৭

৯০

৩৪৭৫

৩৯.০৪

২০৬

৮/১৯

মুশফিকুর রহিম

৪৭

৮৭

২৮৫৯

৩৫.২৯

১৫৯

৩/১৭

মাহমুদউল্লাহ

২৯

৫৫

১৬৭৫

৩১.৬

১১৫

১/১১

মুমিনুল হক

১৯

৩৫

১৪৭০

৪৭.৪১

১৮১

৪/৭

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এমনিতেই দলের কম্বিনেশনে বদল আসার কথা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজেই দলের ব্যাটিং কম্বিনেশন নিয়ে ঝামেলায় পড়েছিল দল। তবু একে তামিম ও পাঁচে সাকিবকে নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না বাংলাদেশের। এখন সাকিবের ভরসাটাও আপাতত মাথা থেকে সরিয়ে রাখতে হচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচকদের। দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন বিবেচনা করে তিনজন পেসার নামানো হলে মিরাজ ও তাইজুলের মধ্যে যেকোনো একজনকে বাদ পড়তে হবে। বাংলাদেশ দল যে একজন ব্যাটসম্যানও কমাতে রাজি নয়।

স্পিনের জন্য তখন কার দিকে তাকাবে দল? সাব্বির রহমান যে জাতীয় দলে এসে বোলিং প্রায় ভুলেই গেছেন, সৌম্য সরকারও তাই। সদ্য দলে ফেরা নাসির দলে জায়গা ধরে রাখতে পারবেন, সে নিশ্চয়তা নেই। আর সাকিবের দায়িত্ব অতীতে যাঁর কাঁধে বর্তাত, সেই মাহমুদউল্লাহ তো দলে ডাকই পাচ্ছেন না হালে!

প্রোটিয়াদের বিপক্ষে কঠিনতম পরীক্ষাই দিতে হবে বাংলাদেশকে।