'একটা বিরতি তো নিতেই পারি'

বনানীর বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব l প্রথম আলো
বনানীর বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব l প্রথম আলো

সাকিব আল হাসানের বিশ্রাম নিয়ে গত কিছুদিনে বেশ হইচই দেশের ক্রিকেটে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ছুটি নিয়ে এরই মধ্যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিসিবির দায়িত্বশীল কর্তারা। কিন্তু সাকিবের কথাও তো শোনা দরকার। কাল দুপুরে তাঁর বনানীর বাসায় সংবাদমাধ্যমের ভিড়টা সে কারণেই। সাকিব অস্বস্তিকর সব প্রশ্নের বিশদ উত্তর দিলেন হাসিমুখেই।

বিশ্রামের ভাবনাটা হুট করে নয়। সাকিব এটা ভেবেছেন অনেক আগে থেকেই। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে আলোচনা করেছেন কাছের মানুষদের সঙ্গে। জানালেন, অনেক ভেবেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন, ‘যেহেতু অনেক বেশি খেলা হয়, মানসিকভাবে চাঙা থাকার যে ব্যাপারটি আছে, সেটি হয় না। এমন তো নয়, দু-এক দিন খেলেই ছেড়ে দিচ্ছি। ১০-১১ বছর হয়ে গেল, একটা বিরতি তো নিতেই পারি। এটা আমার পাওনা।’

টানা ক্রিকেট খেলতে খেলতে ক্লান্তির কথা বলে টেস্ট ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের ছুটি চেয়েছিলেন সাকিব। বিসিবি আপাতত তাঁকে ছুটি দিয়েছে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের জন্য। ছুটির বিষয়টা বিসিবিকে বোঝাতে খুব একটা কষ্ট হয়নি সাকিবের। যেহেতু ছয় মাসের ছুটি চেয়েছিলেন, ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে ফিরবেন তো? সেটি এখনই বলতে পারলেন না তিনি, ‘ওটা এখনো ঠিক করিনি। আপাতত ছুটি দুই টেস্টের। এটা নিয়েই খুশি। তখন যদি মনে হয় খেলতে পারব খেলব।’

কন্ডিশন ও প্রতিপক্ষ বিবেচনায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটা বাংলাদেশের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। ছুটিটা তাই এই সিরিজের পরও নিতে পারতেন সাকিব। কেন সেটি এখনই জরুরি হয়ে পড়ল, সেটির যুক্তি দিলেন সাকিব, ‘পরে নিলেও যদি হতো, তাহলে পরেই নিতাম। আমার কাছে মনে হলো, এখনই বিশ্রামের উপযুক্ত সময়। সবার মতের সঙ্গে মতের মিল হবে না, এটাই স্বাভাবিক। আপনি আমার অবস্থানে থাকলে হয়তো আমার অবস্থাটা বুঝতে পারতেন।’

টেস্ট থেকে দূরে থাকার দৃষ্টান্ত ক্রিকেটে যথেষ্ট আছে। ওয়ানডে, আন্তর্জাতিক ও ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি নিয়ে ব্যস্ত অথচ বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট থেকে দূরে থাকায় তাঁরা সমালোচিত কম হননি। সাকিবও একই পথে হাঁটছেন কি না, এই প্রশ্নে বাঁহাতি অলরাউন্ডার অবাকই হলেন, ‘এই যে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে বিশ্রাম নিলাম না বা বাইরের কোনো টি-টোয়েন্টিতে কেন বিশ্রাম নিলাম না, এই প্রশ্নগুলো যখন ওঠে, অবাকই লাগে। বাইরের টি-টোয়েন্টিতে কোনো চাপ নেই। অনেকটা ছুটি কাটানোর মতো। আর্থিক দিকটা অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। টেস্টে যেহেতু ব্যাটিং-বোলিং দুটিই করি। চার ইনিংসেই আমাকে অবদান রাখতে হয়। অর্ধেক দিলাম, অর্ধেক দিলাম না—তাহলে দলের চাহিদা পূরণ করতে পারলাম না। যখন চারটি ইনিংসে ভালো করতে পারব, তখনই সেরা সময় খেলার।’

সাকিবের হাত ধরে একটা রীতির বোধ হয় গোড়াপত্তন হয়ে গেল দেশের ক্রিকেটে। খেলতে খেলতে যখন ক্লান্তি এসে যাবে, চাইলেই বিশ্রাম নিতে পারবেন খেলোয়াড়েরা। সাকিব যদিও এতে খারাপ কিছু দেখছেন না, ‘যদি কখনো কারও মনে হয় যে খেলা বেশি হয়ে যাচ্ছে, একটি বিরতি দরকার, আমি মনে করি তাদের অবশ্যই মন থেকে বলা উচিত। এতে ক্যারিয়ার আরও ভালো হতে পারে। ধরুন, এখন ইচ্ছে হচ্ছে না, তবু জোর করে খেললাম, দুই টেস্ট খারাপ খেললে আপনারাই বলবেন ওকে বাদ দেওয়া হোক। কী দরকার আছে?’

সাকিবকে ছাড়াই প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে পিছিয়ে থাকবে, পরশু সেটি দল ঘোষণার সময় স্বীকার করে নিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। তবে সাকিব মনে করেন না, তাঁর অনুপস্থিতি খুব একটা প্রভাব ফেলবে দলে। বাংলাদেশ ভালো করবে, এটাই আশা বাঁহাতি অলরাউন্ডারের, ‘দুনিয়াতে কোনো কিছুই কারও জন্য অপেক্ষা করে না। মন থেকে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ অনেক ভালো করবে দক্ষিণ আফ্রিকায়। যে ধারাটা আছে, সেটা ধরে রাখবে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরটা সবার জন্য চ্যালেঞ্জিং, সবার তাই বাড়তি চেষ্টা থাকবে ভালো করার।’

আমার আরও অনেক দিন খেলার বাকি। এই সময়ে যদি ভালো খেলতে চাই, বিশ্রামটা আমার জরুরি। চাইলেই খেলতে পারি। এখন আপনারা কী চান? পাঁচ-সাত বছর খেলি, নাকি দুই বছর খেলি! যদি এভাবে খেলতে থাকি, এক-দুই বছর পর ওভাবে খেলতে পারব না।

যে কারণে টেস্টে

সীমিত ওভারের ক্রিকেট এক দিন কিংবা তিন ঘণ্টার হয়। টেস্ট পাঁচ দিনের হয়। এটার জন্য প্রস্তুতি আরও ১০-১৫ দিনের। একটা টেস্ট সিরিজ যদি বিশ্রাম নেন, এক মাসের বিরতি পাবেন।...আমার একটু বড় বিরতি দরকার।

যেভাবে ছুটি কাটাবেন

পরিবারের সঙ্গে সময় দেওয়া, …ঘুরতে-টুরতে যাওয়া, পরিবার-বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া...। মাঝেমধ্যে ক্রিকেট থেকে বাইরে থাকা খুবই জরুরি। চেষ্টা থাকবে যত বেশি সম্ভব ক্রিকেটের বাইরে থাকতে।