জোড়া গোলেই বুফন-ধাঁধা মেলালেন মেসি

মেসিই ব্যবধান গড়ে দিলেন দুই দলের। ছবি: রয়টার্স
মেসিই ব্যবধান গড়ে দিলেন দুই দলের। ছবি: রয়টার্স

ধাঁধাটায় বিস্মিত হতো সবাই। ক্যারিয়ারে পাঁচ শর ওপরে গোল করেছেন লিওনেল মেসি। এর একটিও জিওনলুইজি বুফনের বিপক্ষে নয়! এ বাক্যটি আজ থেকে আর বলা যাচ্ছে না। বুফন-ধাঁধা কেটেছে মেসির। ন্যু ক্যাম্পে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে মেসির জোড়া গোলে জুভেন্টাসকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে বার্সেলোনা।
গত এপ্রিলেই দেখা হয়েছিল দুই দলের। সেবার ন্যু ক্যাম্পের ম্যাচটি শেষ হয়েছিল গোলশূন্য সমতায়। ‘এমএসএন’ত্রয়ী চেষ্টাচরিত করেও গোলের মুখ খুলতে পারেনি সেদিন। করতে দেয়নি জুভেন্টাসের রক্ষণ। আর জুভেন্টাস নিজেদের মাঠে ৩-০ গোলে জিতে উঠে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। আজ অবশ্য জুভেন্টাসের রক্ষণটাও বদলে গিয়েছিল অনেক। দানি আলভেজ এখন পিএসজিতে, বোনুচ্চি চলে গেছেন এসি মিলানে, কিয়েলিনি চোটাক্রান্ত।
প্রায় নতুন এই রক্ষণকে অবশ্য খুব একটা পরীক্ষায় পড়তে হয়নি প্রথমার্ধে। ৪৫ মিনিটে মেসি-মুহূর্তের আগপর্যন্ত। মাঝমাঠের একটু পরে ডেমবেলের কাছ থেকে বল পেলেন মেসি। সেটা নিজে অনেকটা টেনে নিয়ে ডি-বক্সের সামনে এসে সুয়ারেজের সঙ্গে ‘ওয়ান-টু’ করে ঢুকে পরলেন বক্সে। বাঁ দিক থেকে তাঁর ডান দিকের পোস্টঘেঁষা গড়ানো শট আটকানো সম্ভব ছিল না বুফনের পক্ষে। শুধু এমন এক মুহূর্তের কারণেই প্রথমার্ধটা জুভেন্টাস নয়, এগিয়ে থেকে শেষ করল বার্সেলোনা।
অথচ ম্যাচের শুরু থেকেই সুযোগ সৃষ্টি করেছে বেশি ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। বলের দখলে বার্সা এগিয়ে থাকলেও বারবার শটের সামনে পড়তে হয়েছে টের-স্টেগানকেই। ১৯ মিনিটে গিয়ে প্রথম শট নিতে দেখা গেছে সুয়ারেজকে। এর আগেই তিনটি গোলের সুযোগ পেয়েছে জুভেন্টাস। বাকি সময়টা দুই দলই বেশ কিছু সুযোগ সৃষ্টি করেও কাজে লাগাতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ম্যাচে ফিরতে পারত জুভেন্টাস। ৪৭ মিনিটে সহজ সুযোগটি হাতছাড়া করেছেন পাওলো দিবালা। ৫২ মিনিটে মেসির শট পোস্টে লেগে ফিরে আসায় কিছুক্ষণের জন্য স্বস্তি পায় জুভেন্টাস। এর মাঝে ৫৪ মিনিটে ঘটে ম্যাচের মোড় ঘুড়িয়ে দেওয়া ঘটনা। পিয়ানিচ মেসিকে ফাউল করলে বাঁশি বাজান রেফারি। মেসি এতেও সন্তুষ্ট না হয়ে হলুদ কার্ডের দাবি জানিয়ে রেফারির ঘাড়ে হাত দেন। এতে হলুদ কার্ড জোটে মেসির। মিনিট খানেক পরেই নিজের ক্ষোভ অন্যভাবে প্রকাশ করলেন মেসি। ডান প্রান্ত দিয়ে একের পর এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সে পাস দেন মেসি। সে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে রাকিটিচের পায়ে বল তুলে দেন বদলি নামা ডিফেন্ডার স্তুরারো। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বার্সা।
ব্যবধানটা ৩-০ হলো ৬৯ মিনিটে। মেসির আরেকটি রক্ষণ ধ্বংস করে দেওয়া দৌড়ে বুফনকে ফাঁকি দিলেন মেসি। তবে সে শট নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার দায় বারজাল্লিকে নিতে হবে। মেসিকে আটকানোর কোনো চেষ্টাই দেখা যায়নি এই ডিফেন্ডারের মাঝে। এ গোলেই ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ৯৯তম গোলটি হয়ে গেল মেসির।
এরপরও ম্যাচে ফেরারর চেষ্টা করেছে জুভেন্টাস। ৮০ মিনিটে দিবালার শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন টের-স্টেগান। সে শট থেকে পাওয়া কর্নার থেকেও গোল পেতে পারত জুভেন্টাস। কিন্তু বেনেশিয়ার হেড প্রশ্নবিদ্ধভাবে ঠেকিয়ে দেন পিকে। অন্য কোনো দিন হলে বলটা কি ইচ্ছা করে হাতের ওপরের অংশ দিয়ে ঠাকালেন পিকে—এ প্রশ্ন উঠত। কিন্তু কাল দ্বিতীয়ার্ধের জুভেন্টাসের খেলা দেখে সে প্রশ্ন তোলার সুযোগ কোথায়?
মেসিই যে সেসব প্রসঙ্গ ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছেন ম্যাচ শেষ হওয়ার ২০ মিনিট আগে।
চ্যাম্পিয়নস লিগের অন্য ম্যাচগুলোতেও গোলবন্য হয়েছে রীতিমতো। কারাবাগকে ৬ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে চেলসি। সেল্টিককে তাদেরই মাঠে ৫ গোল দিয়েছে নেইমার-এমবাপ্পে-কাভানির পিএসজি। গোল পেয়েছেন ত্রয়ীর সবাই। বায়ার্ন মিউনিখ ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও নিজেদের ম্যাচে পেয়েছে তিন গোলের জয়।

এক নজরে ফল

বার্সেলোনা ৩-০ জুভেন্টাস

সেল্টিক ০-৫ পিএসজি

চেলসি ৬-০ কারাবাগ

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৩-০ বাসেল

রোমা ০-০ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ

বেনফিকা ১-২ সিএসকেএ মস্কো

অলিম্পিয়াকস ২-৩ স্পোর্টিং লিসবন

বায়ার্ন মিউনিখ ৩-০ আন্ডারলেখট