দুজনের একই পরীক্ষা

অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পর বাংলাদেশ দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড় যখন ছুটিতে, সৌম্য সরকার-ইমরুল কায়েসের অবসর নেই। তাঁরা অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোরে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজটা ভালো যায়নি দুই বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের। দুজনের তাই একই চ্যালেঞ্জ—ভালো করতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকায়।

ইমরুলকে হাথুরুর অভয়

০, ২, ৪, ১৫—অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চার ইনিংসে ইমরুলের রান ২১। শুধু ঢাকা টেস্ট খেলা পেসার শফিউলও তাঁর চেয়ে বেশি রান (২২) করেছেন। দলের জন্য সিরিজটা স্মরণীয় হয়ে থাকলেও ব্যক্তিগত ব্যর্থতায় এটি ভুলেই থাকতে চাইবেন ইমরুল!

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভালো করতে না পারলেও এই বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের ওপর আস্থা হারায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশেষ করে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সিরিজটা বাজে যাওয়ার পরও যে কোচের সুদৃষ্টিতে আছেন, সেটি ইমরুলকে জোগাচ্ছে বাড়তি আত্মবিশ্বাস, ‘কোচ বলেছেন, অসুবিধা নেই। একজন ব্যাটসম্যান চারটি ইনিংস খারাপ করলেই তাকে বাদ দিতে পারি না। তুমি খেলো।’

বছরটা খারাপই যাচ্ছে ইমরুলের। গত চার টেস্টে করেছেন ৯২ রান। কোথায় তালটা কেটেছে, সেটি খুঁজতে গিয়ে জানুয়ারিতে ওয়েলিংটন টেস্টে পাওয়া চোটটা চলে আসছে ইমরুলের সামনে, ‘যেভাবে ছন্দে ছিলাম চোটে না পড়লে পারফরম্যান্সটা আরও ভালো হতো। এখন যেভাবে খেলছি এভাবে খেলাটা আসলে কঠিন। নিজেও জানি, একটা সিরিজ খারাপ করলেই আমার ওপর অনেক চাপ এসে পড়ে।’

দল ঘোষণার দিন ইমরুলের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছিলেন, ‘যেহেতু সে অনেক অভিজ্ঞ, আশা করছি রানে ফিরবে।’ ইমরুল পারবেন নির্বাচকদের এই আস্থার প্রতিদান দিতে? ৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তাঁকে অবশ্য এমন কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয়েছে অনেকবার। চ্যালেঞ্জটা তাই তাঁর কাছে নতুন নয়, ‘গত সিরিজটা যেহেতু ভালো খেলিনি, আমার জন্য সিরিজটা অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে আমি নিজেও জানি। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা না, প্রতিটি সিরিজই আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়।’

উপায়টা জানেন সৌম্য

কদিন আগে ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করেছেন সৌম্য। পেছন থেকে তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাঁহাতি ওপেনার একঠায় বসে দৃষ্টি মেলেছেন সুদূরে। তা ছবিতে মুখ দেখা যাচ্ছে না কেন সৌম্যর? কাল আড্ডাচ্ছলেই বললেন, ‘পেছনে অনেকে অনেক কথা বলে, তাই ওভাবে তোলা!’

ছবিটা যেন বর্তমান সৌম্যকেই বোঝাচ্ছে। যতক্ষণ তিনি উইকেটে থাকেন, তাঁর ব্যাটিং ভীষণ দৃষ্টিগ্রাহী। সমস্যাটা হচ্ছে তাঁর উইকেটে টিকে থাকা নিয়ে। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ছন্দে ফিরেছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সিরিজে আবারও আটকে গেছেন ব্যর্থতার চোরাবালিতে। দুই টেস্টে করেছেন ৬৫ রান। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের যে ধারাবাহিকতা ছিল, সেটি এখন দেখা যাচ্ছে কোথায়? ধারাবাহিকতা না থাকলেই প্রশ্ন ওঠে, কোচ হাথুরুর সমর্থনেই কি খেলে যাচ্ছেন তিনি!

তবে সমালোচনায় উদ্বিগ্ন নন সৌম্য। বাঁহাতি ওপেনার বিষয়টিকে নেন ইতিবাচকভাবেই, ‘ভালো খেললে তাকে নিয়েই সবাই কথা বলে। খারাপ খেললেও বলে। এ সময় ইতিবাচক চিন্তা করি। যেন মনোবল হারিয়ে না ফেলি, শক্তভাবে আবার ফিরে আসতে পারি। ভালো করলে সবাই বাহবা দেবে। খারাপ করলে পেছনে কথা বলবে। কথা বলার অধিকার সবারই আছে। তাদের থামানোর একটাই উপায়, আমাকে রান করতে হবে।’

নিজেকে ফিরে পাওয়ার মোক্ষম সুযোগ এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। সৌম্য সেটা জানেন, ‘কঠিন সময়ের মধ্যে ভালো করলে নিজের কাছে অন্য রকম তৃপ্তি কাজ করবে। চেষ্টা করব ওখানে ভালো কিছু করার। পেছনের ম্যাচগুলো ভুলে যেতে হবে।’

অস্ট্রেলিয়া সিরিজ ভুলে যেতে চাইলেও সৌম্য নিশ্চয়ই ভুলবেন না ২০১৫ সালে দেশের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই ওয়ানডে সিরিজটা। তাঁর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজটা বাংলাদেশ জেতে অনায়াসে। প্রতিপক্ষ সেই দক্ষিণ আফ্রিকা। দেখা কি মিলবে দুর্দান্ত সেই সৌম্যর?