'ধোনি' হলেন পান্ডিয়া, ধোনি ধোনিই রইলেন

স্মিথের সব পরিকল্পনা ধূসর করে দিল এই জুটি। ছবি : রয়টার্স
স্মিথের সব পরিকল্পনা ধূসর করে দিল এই জুটি। ছবি : রয়টার্স

ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া কাকে বলে, সেটা আজ বোঝা গেল অ্যাডাম জাম্পাকে দেখে—৪১তম ওভারে যখন আরেকটি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন হার্দিক পান্ডিয়া। অবশেষে থামল পান্ডিয়া–ঝড়! যে ঝড়ে আরেকটুর জন্য তছনছ হতে বসেছিল অস্ট্রেলিয়া। পান্ডিয়া–ঝড় থামলেও ভারত থামেনি। অস্ট্রেলিয়াকে ২৮২ রানের লক্ষ্য দিয়েই ছেড়েছে ভারত।

মহেন্দ্র সিং ধোনির সেই উত্তাল তারুণ্যের দিনগুলোর ছবি যেন ফিরে এল পান্ডিয়ার মধ্যে। ঝড়ের মধ্যেও নির্ভার, অবিচল। কী ঠান্ডা মাথা। আর তার সাক্ষী হয়ে অন্য প্রান্তে থাকলেন ধোনি নিজে। যে ধোনি এই বুড়ো বয়সেও ক্ল্যাসিক! পান্ডিয়া করলেন ৬৬ বলে ৮৩, ধোনি ৮৮ বলে ৭৯। দুজনের ষষ্ঠ উইকেটের ১১৮ রানের জুটি ইনিংসের রংটাই বদলে দিল। হয়তো ম্যাচের রংও।
৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর দুজনে মিলে সতর্ক শুরু করেছিলেন। পান্ডিয়া-ঝড়ের শুরু ৩৭তম ওভারে। ওই জাম্পাকে দ্বিতীয় বলে মিড অন দিয়ে চার মেরে শুরু। সেটা যে শুধু ‘অ্যাপাটাইজার’ ছিল, সেটা বোঝা গেল পরের তিন বলে। পরের বলটা উড়ে গেল লং অফ দিয়ে। চতুর্থ বলটা উড়ে গেল লং অন দিয়ে। এ ছক্কাতেই পঞ্চাশ পেলেন পান্ডিয়া। ৪৮ বলে! তখনো অবশ্য গল্প বাকি আছে। পঞ্চম বলটা খুব খারাপ ছিল না জাম্পার। কিন্তু পান্ডিয়ার অত কিছু ভাবতে বয়েই গেছে। লং অন দিয়ে আরেকটা বিশাল ছয়ে জাম্পার দুঃস্বপ্ন পূরণ হলো।
ছক্কার হ্যাটট্রিক করার পরও পান্ডিয়াকে দেখে সেটা বোঝার উপায় ছিল না। অবশ্য পান্ডিয়ার জন্য যে ছক্কার হ্যাটট্রিকও খুব মামুলি ব্যাপার। গত জুনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভিন্ন দুই ম্যাচেই ছক্কার হ্যাটট্রিক করেছিলেন এই অলরাউন্ডার। পরে টেস্টেও একই কীর্তি করে দেখিয়েছেন। শ্রীলঙ্কায় তাঁর সে ঝড়ের সামনে পড়েছিলেন মালিন্দা পুষ্পকুমারা। আজ জাম্পার দুর্ভাগ্য পান্ডিয়ার কোপটা তাঁর ওপর দিয়েই গেল।
মাঝখানে স্টয়নিসকে একটা ছক্কা মারলেন। ৪১তম ওভারে জাম্পাকে পেয়েই তৃতীয় বলে আবার ছক্কা। পরের বলেই আবার চার। পঞ্চম বলটি উড়িয়ে মারতে গিয়েই আর হলো না ব্যাটে বলে। ৬৬ বলে ৮৩ রান করে ফিরলেন পান্ডিয়া। ২০৫ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারাল ভারত। এবার আর পথ হারাল না স্বাগতিক দল। অন্য প্রান্তে এতক্ষণ চুপচাপ থাকা ধোনি দায়িত্ব বুঝে নিলেন। তবে ভুবনেশ্বর কুমারও কম গেলেন না। শেষ ওভারে আউট হলেও এর আগেই আসল কাজটা করে গেছেন ধোনি। আর ৩০ বলে ৩২ রানে ভুবনেশ্বর দলকে এনে দিয়েছেন ২৮১ রানের বড় স্কোর।
ইনিংসের প্রথমার্ধেও ব্যাপারটা অসম্ভব ছিল। ৮৭ রানেই প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যান চলে গেছেন ড্রেসিংরুমে। প্রথম ছয় ওভারের কথা চিন্তা করে একেও অবশ্য ভদ্রস্থ দেখাচ্ছিল। কোহলি যে অনন্য এক রেকর্ডের অংশ হতে আজকের দিনকেই বেছে নিলেন। ওয়ানডেতে মাত্র চারবার ভারতের তিন ও চার নম্বরে নামা ব্যাটসম্যান শূন্য হাতে ফিরেছেন। ২০০৭ সালে রবিন উথাপ্পা ও রাহুল দ্রাবিড় দেখিয়েছিলেন এমন ঘটনা। পরবর্তী তিন ঘটনাতেই একটি নাম ‘কমন’ পড়ে যাচ্ছে, বিরাট কোহলি। নাথান কোল্টার-নাইলের দুটি দুর্দান্ত বলে কোহলি ও মনিষ পান্ডে ফিরে যাওয়ায় মাত্র ১১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বসল ভারত।
পান্ডিয়া-ঝড়ের পর অবশ্য এসব এখন প্রাগৈতিহাসিক ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে!

ভারত:

 

রান

বল

রাহানে ক ওয়েড ব কোল্টার-নাইল

১৫

রোহিত ক কোল্টার-নাইল ব স্টয়নিচ

২৮

৪৪

কোহলি ক ম্যাক্সওয়েল ব কোল্টার-নাইল

মনীষ ক ওয়েড ব কোল্টার-নাইল

যাদব ক কার্টরাইট ব স্টয়নিচ

৪০

৫৪

ধোনি ক ওয়ার্নার ব ফকনার

৭৯

৮৮

পান্ডিয়া ক ফকনার ব জাম্পা 

৮৩

৬৬

ভুবনেশ্বর অপরাজিত

৩২

৩০

কুলদ্বীপ অপরাজিত

অতিরিক্ত

১৪

মোট ৫০ ওভারে, ৭ উইকেটে

২৮১

উইকেট পতন: ১-১১, ২-১১, ৩-১১, ৪-৬৪, ৫-৮৭, ৬-২০৫, ৭-২৭৭।

বোলিং: কামিন্স ১০-১-৪৪-০ (ও২), কোল্টার-নাইল ১০-০-৪৪-৩ (ও১, নো ১), ফকনার ১০-১-৬৭-১ (নো২), স্টয়নিচ ১০-০-৫৪-২ (ও২), জাম্পা ১০-০-৬৬-১।