মৃত্যু তো শুধু একার নয়!

এমনই মানিকজোড় ছিল। মৃত্যু ভেঙে দিয়েছে সেই বন্ধন
এমনই মানিকজোড় ছিল। মৃত্যু ভেঙে দিয়েছে সেই বন্ধন

পুতুলের বিয়ে দেওয়ার বয়স থেকে তাদের বন্ধুত্ব। শৈশবের সেই বন্ধুর মৃত্যু ঘটেছে চোখের সামনে। মনের মধ্যে তাই প্রলয় ঘটে চলাই স্বাভাবিক। তহুরা খাতুনের মুখ দেখলেই তা পড়ে নেওয়া যায়। পুতুল খেলার সঙ্গী সাবিনাকে হারিয়ে দিশেহারা জাতীয় নারী দলের এই খুদে ফুটবলার। সাবিনার দেহত্যাগের সঙ্গে যে মনে মনে তারও মৃত্যু ঘটেছে! একে তো ছোটবেলার বন্ধু, তার ওপর জাতীয় দল সতীর্থ সাবিনার স্মৃতি কুরে কুরে খাচ্ছে তহুরার কিশোরী মনকে।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমায় ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের মেয়ে সাবিনা। ঘরের সঙ্গে ঘর লাগোয়া হওয়ায় সাবিনার সঙ্গে হাত ধরাধরি করে বড় হয়েছে তহুরা। স্কুল যাওয়া থেকে ফুটবল-পাঠ—সবই একসঙ্গে হওয়ায় দুজনে ছিল ‘মানিকজোড়’। সাবিনা যেদিন মারা গেল, সে রাতেও একসঙ্গে ঘুমিয়েছিল দুজন। সেই ঘটনা বলতে গিয়ে তহুরার কণ্ঠ বাষ্পরুদ্ধ, ‘সন্ধ্যার আগে আমি সাবিনাদের বাড়ি যাই। ও আমাকে বলল, তুই চাচিকে বলে আমার সঙ্গে ঘুমাবি। আমি মাকে বলে চলে এলাম। সেই রাতেই...।’

রাত পোহানোর পর দুপুর গড়ানোর আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল সাবিনা। মৃত্যুর ওপরে কারও হাত নেই, কিন্তু সাবিনার মৃত্যুতে প্রশ্ন উঠেছিল আমাদের সামর্থ্যের দৈন্য নিয়েও। অনেকের কাছে এখনো প্রশ্ন—কী এমন জ্বর হয়েছিল সাবিনার, যে জ্বরে ঝরে গেল বাংলাদেশের একজন সম্ভাবনাময় ফুটবলার?

তহুরা বেশ কয়েক বছর ধরেই জাতীয় বয়সভিত্তিক ও নারী দলের চেনা মুখ। অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে থাইল্যান্ডে গিয়েছিল। যাওয়ার আগে বান্ধবী সাবিনাকে বলেছিল, ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৫ ক্যাম্পে আসার সময় বাড়ি থেকে তার জন্য যেন চারটি খাতা নিয়ে আসে। খাতা কিনলেও আর ক্যাম্পে আসা হয়নি। বরং তহুরাকেই ছুটে যেতে হয়েছিল নিজের বান্ধবী অসুস্থ জেনে।

সেই চারটি খাতা এখন তহুরার কাছে বান্ধবীর শেষ স্মৃতি। সে খাতায় না হোক, অন্তত আয়তাকার সবুজ গালিচার খেরোখাতায় এখন বড় বড় ইতিহাস লেখার চ্যালেঞ্জ সাবিনার। মাঠে নামলে তাকে গোল করতে হবে। প্রিয় বান্ধবী যে মৃত্যুর আগে বলেছিল, ‌‘‌তহুরা, তোকে ভালো খেলতে হবে।’

বান্ধবীর ভালোবাসা তহুরা ফিরিয়ে দেওয়ার আগেই প্রয়াত সাবিনাকে বড় পুরস্কার উপহার দিল তার অন্য বান্ধবীরা। জেএফএ কাপ অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে ফাইনালে ময়মনসিংহের মেয়েরা মাঠে নামার আগে পণ করেছিল, শিরোপা জিতে উৎসর্গ করা হবে সাবিনাকে। কথা রেখেছে তারা। ঠাকুরগাঁওকে হারিয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপাটি উৎসর্গ করা হয়েছে সাবিনাকে। বাছাইপর্বে সাবিনা ছিল এই দলেরই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। কিন্তু মৃত্যুর কাছে হেরে যাওয়ায় শিরোপাটা তাকে ছুঁয়ে দেখতে হলো পরপারে থেকে!