দীপিকা পাড়ুকোনের চেয়ে কম নন দীপিকা কুমারী

এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করতে এসেছেন দীপিকা। সংগৃহীত ছবি
এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করতে এসেছেন দীপিকা। সংগৃহীত ছবি

‌‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি...দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ’।

রবীন্দ্রনাথের সেই কল্পিত কৃষ্ণকলিই বুঝি ঘুরে বেড়াচ্ছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। গানের মতোই তাঁর মাথায় ঘোমটা ছিল না মোটেও, আছে হ্যাট, কাঁধে ঝোলানো তির। যার টোল পড়া হাসিতে বিদ্ধ হচ্ছে কুড়ি থেকে বুড়ো—সবাই-ই। নাম দীপিকা কুমারী। বলিউড নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোনের চেয়ে কোনো অংশেই কম নন তাঁর স্বদেশি তিরন্দাজ।

এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে ঢাকা আগমন ভারতের ঝাড়খন্ডের মেয়ের। কোরিয়ান অলিম্পিক তারকা কি কো বায়ের জন্য সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নিতে না পারলেও তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশি গণমাধ্যমের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। কেননা আর্চারিতে ভারতীয় এই কৃষ্ণকলির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। কী নেই তাঁর ঝুলিতে!

বর্তমানে মহিলা ব্যক্তিগত রিকার্ভ র‍্যাঙ্কিংয়ে পাঁচে অবস্থান করলেও ২০১২ সালে হয়েছিলেন বিশ্বসেরা। বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে জিতেছেন সোনা। ২০১০ কমনওয়েলথ গেমসে এককে ও দলগত ইভেন্টে সোনা। ২০১১ থেকে ২০১৩-র মধ্যে তিনবার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। অলিম্পিকেও আছে পদক। ঢাকায় এসেও বলে দিলেন তাঁর চাওয়া, ‘লক্ষ্য একটাই, সোনা জেতা।’ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজই নেমে পড়েছেন লড়াইয়ে।

সাফল্য মানেই স্বীকৃতি। দীপিকার শোকেসে শোভা পাচ্ছে বড় বড় সব পুরস্কার। ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অর্জন পুরস্কারসহ আছে পদ্মশ্রী পুরস্কারও। ২৩ বছর বয়সী মেয়ের জন্য এর চেয়ে বেশি আর কী চাই!

ঝাড়খন্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসে তারকা হওয়ার রাস্তাটা মোটেই সহজ ছিল না দীপিকার। বাবা ছিলেন অটোরিকশাচালক। আর মা মেডিকেল কলেজের নার্স। অভাব ঘুচিয়ে সংসারে সচ্ছলতা এনে দিয়েছেন তাঁদের একমাত্র মেয়ে দীপিকাই। মেয়ে এখন চাকরি করছে টাটা স্টিল কোম্পানিতে। সঙ্গে নামীদামি স্পনসরসহ সাফল্যসূচক আর্থিক পুরস্কার তো আছেই।

শুরুটা হয়েছিল গ্ল্যামার গার্ল দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে তুলনা দিয়ে। বলিউডের এ অভিনেত্রী রূপ ও অভিনয় দিয়ে অনেক উচ্চতায় উঠে গেছেন অনেক আগেই। কিন্তু গরিবের ঘর থেকে উঠে এসে তিরন্দাজ দীপিকাও কম যাচ্ছেন কিসে। যেভাবে একের পর এক পদক জয় করে গর্বিত করে যাচ্ছেন দেশকে, ব্যাডমিন্টন তারকা প্রকাশ পাড়ুকোনের মেয়ে অভিনেত্রী দীপিকার চেয়ে আর পার্থক্য কোথায়।
কী সাফল্যে, কী রূপে-গুণে!