বাংলাদেশের আখতারের জাস্টিন হেনিন একাডেমির কোচ হওয়ার গল্প

সাতটি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী জাস্টিন হেনিনের সঙ্গে আখতার হোসেন।
সাতটি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী জাস্টিন হেনিনের সঙ্গে আখতার হোসেন।

জাস্টিন হেনিন নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভাসে সোনালি চুলের এক সুন্দরীর র‍্যাকেট হাতে কোর্ট দাপিয়ে বেড়ানো। সাতটি গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন বেলজিয়ামের এই টেনিস তারকা। র‍্যাকেট তুলে রেখে নিজ দেশে নির্মাণ করেছেন একটি একাডেমি এবং অংশীদার হয়েছেন চীনের পোটার্স হুইল একাডেমির। চীনের খেলোয়াড় তৈরির কারখানাটির কোচিং স্টাফের একজন বাংলাদেশের আখতার হোসেন।

গ্র্যান্ড স্লামজয়ী তারকার একাডেমির কোচ হিসেবে কাজ করছেন টেনিসের একেবারেই পেছনের সারির বাংলাদেশের এক তরুণ। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য সুসংবাদই বটে।

আখতারের স্বপ্ন ছিল বড় টেনিস তারকা হবেন। কিন্তু বাংলাদেশে জন্মে টেনিস তারকা হওয়ার স্বপ্নটা ‌‘ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে কোটি টাকার স্বপ্ন দেখা’র মতো বিষয়। তবু বড় আশা নিয়ে ২০০৫ সালে বেইজিংয়ের পোটার্স হুইল একাডেমির আমন্ত্রণে তিন মাসের চুক্তিতে চীনে পাড়ি জমিয়েছিলেন বাংলাদেশের হয়ে ডেভিস কাপে অংশগ্রহণ করা আখতার। কথা ছিল সেখানে নিজেও অনুশীলন করবেন আবার বাচ্চাদেরও করাবেন অনুশীলন। কিন্তু শৃঙ্খলা ও নিবেদিতপ্রাণের আখতারকে প্রতিষ্ঠানটি পছন্দ করে কোচ হিসেবে। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) পড়াশোনা শেষ করে আখতারেরও দরকার ছিল একটি মাথা গোঁজার জায়গা। ফলে সুযোগ পেয়ে তাদের অধীনেই কোচিং ডিপ্লোমা করে খেলোয়াড় তৈরির কাজ শুরু।

কার্লোস রদ্রিগেজের সঙ্গে আখতার হোসেন।
কার্লোস রদ্রিগেজের সঙ্গে আখতার হোসেন।

একাডেমিটির সঙ্গে দুই বছর কাজ করার পরে অন্যত্র পাড়ি জমান আক্তার। এরই মাঝে ২০১০ সালে পোটার্স হুইলের সঙ্গে জাস্টিন হেনিনের পাঁচ বছরের অংশীদারি চুক্তি হলে একাডেমির নাম হয় জাস্টিন হেনিন একাডেমি। খেলোয়াড় তৈরির কারখানাটির পরিসর বড় হলে কোচ নিয়োগ পরীক্ষায় পুনরায় ডাক পড়ে আখতারের। ২০১০ সালে তিন মাসের পরীক্ষা উতরে পাঁচ বছরের চুক্তিতে আবদ্ধ হন আক্তার। শুরু হলো হেনিনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা, ‘শুরুর দিকে হেনিন নিজেই কোচিংয়ের খুঁটি নাটি বিষয় দেখিয়ে দেওয়ার জন্য ক্লাস করাতেন। এ ছাড়া একাডেমিটি দাঁড় করানোর জন্য প্রথম দিকে অনেক শ্রমও দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতো বিশ্বসেরা তারকার সঙ্গে কাজ করার আনন্দই আলাদা।’

তবে বাংলাদেশের ছেলের ভবিষ্যৎটা দাঁড়িয়ে আছে অন্য এক বিশ্বসেরার হাতে। তিনি হলেন আর্জেন্টাইন কোচ কার্লোস রদ্রিগেজ। যিনি পুরো একাডেমির পরিচালক। যাঁর জাদুকরি স্পর্শেই বিশ্বসেরা হয়েছেন জাস্টিন হেনিন। একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরে গুরু কার্লোসকে পরিচালক পদে নিয়ে আসেন হেনিন। ২০১২ সালে কার্লোসের কাছে এসে নিজেকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আবিষ্কার করতে পেরেছেন চীনা টেনিস তারকা লি না। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের আগে লি নার প্রস্তুতিটা তো আখতারের চোখের সামনেই, ‘লি না আমাদের একাডেমিতে চুক্তিতে অনুশীলন করার জন্য আসে। কার্লোসের কাছে অনুশীলন করেই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চ্যাম্পিয়ন হয়। তার সাফল্যে আমাদের একাডেমির কদর যায় আরও বেড়ে।’

পাঁচ বছরের চুক্তি শেষে জাস্টিন হেনিন একাডেমি আবার পোটার্সফিল্ড হুইল আন্তর্জাতিক একাডেমির নামে ফিরেছে। তবে নামের পরিবর্তন হলেও চুক্তি নবায়ন হয়েছে আখতারের। মাসিক বেতনের অঙ্কটা এখন সাড়ে তিন হাজার ডলার। দায়িত্ব বেড়ে তিনি এখন অনূর্ধ্ব-১৪ দলের হেড কোচ। তাঁর শিষ্যরাই মাতাচ্ছে আমেরিকার ‘অরেঞ্জ বল এডি হার্ড’ টুর্নামেন্ট। মায়ামি ও ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত হওয়া বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট সাফল্যের সঙ্গে যাত্রা শুরু করে খ্যাতির চূড়ায় উঠেছে পিট সাম্প্রাস ও আন্দ্রে আগাসির মতো বড় তারকারা। নিজের শিষ্যরাও একদিন বিশ্ব মাতাবে, এই আশায় নিরলসভাবে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের আখতার।