ভাবতেও পারেননি মাশরাফি, তামিমের 'ভয়'

সিলেটে রাজশাহী কিংসকে ছয় উইকেটে হারিয়ে টুর্নামেন্টে শুরুটা ভালোই হয়েছিল রংপুর রাইডার্সের। পরে টানা তিন ম্যাচে হেরে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে। ক্রিস গেইল-ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মতো বড় তারকা ব্যাটসম্যান এসেও শুরুতে জয়ের ধারায় ফেরাতে পারেননি দলকে। ১২ ম্যাচে ৬ জয় নিয়ে কোনোভাবে শেষ চারে জায়গা পাওয়া রংপুরই এখন শিরোপার দাবিদার!

কোয়ালিফায়ার-এলিমিনেটরে দাপুটে দুই জয়ে রংপুর মঙ্গলবার বিপিএলের ফাইনালে খেলবে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে। লিগ-পর্বে পারফরম্যান্স আহামরি না হলেও শেষ চারে রংপুর আবির্ভূত হয়েছে দুর্দান্ত এক দল হিসেবে। আর এর পেছনে অবশ্যই বড় অবদান মাশরাফি বিন মুর্তজার। সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন দলকে। বোলিংয়ে ধারাবাহিক ভালো করেছেন। দলের প্রয়োজনে দেখা গেছে তাঁর ব্যাটিংঝলকও। তবুও মাশরাফি ভাবতে পারেননি তাঁর দল পৌঁছাবে ফাইনালে।

মাশরাফির ভাষ্য, ‘টুর্নামেন্টের মাঝে যদি তাকাই, ফাইনাল খেলব চিন্তাও করতে পারিনি। কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের দেব। বিশেষ করে বিদেশি খেলোয়াড়দের। তারা চেষ্টা করেছে। শুধু নিজের জন্য নয়, দলের জন্য। আমাদের স্থানীয় যারা আছে তাদের কৃতিত্ব দেব। এই সংস্করণে যারা (বিদেশি) ভালো খেলে, তারা স্থানীয়দের বুঝিয়েছে কীভাবে খেলতে হবে। পুরো দলীয় প্রচেষ্টায় আমরা এ পর্যন্ত এসেছি।’

দলীয় প্রচেষ্টা তো অবশ্যই। হারের বৃত্তে আটকে পড়া একটা দল কীভাবে ঘুরে দাঁড়াল, কীভাবে শেষ পর্যন্ত চলে এল শিরোপার লড়াইয়ে, আজ সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি সেটির রহস্য উন্মোচন করলেন এভাবে, ‘আমাদের দলের ভারসাম্য ভালো ছিল। দলে খুব একটা পরিবর্তন করিনি। আরেকটা বিষয়, আপনি যখন জানবেন চতুর্থ দল হিসেবে খেলছেন (শেষ চারে) তখন চাপটা নিজের ওপর থাকে না। যখন এক-দুইয়ে থাকবেন, পুরো টুর্নামেন্টে ভালো খেলবেন তখন নিজেদের ওপর একটা বাড়তি চাপ থাকে। আমরা জানি আমাদের দুইটা সেমিফাইনাল খেলতে হবে। আমাদের মানসিক প্রস্তুতি ছিল প্রথমটা খেলেই চলে যেতে হতে পারে। মাঠে অলআউট খেলা, গেইলের আগের ম্যাচটা যদি দেখেন প্রথম থেকেই মেরেছে। চার্লসও তাই। আমাদের পরিকল্পনা ছিল শুরু থেকেই আক্রমণ করা। তাতে ম্যাচ আমাদের পক্ষে আসতেও পারে নাও আসতে পারে। প্রথম দিকে দেখে-শুনে ব্যাটিং করার চেষ্টা করেছি, হয় না। আমাদের তারকা ওপেনাররা চেয়েছে তারা এভাবেই ব্যাটিং করবে। শেষ পর্যন্ত এটা আমাদের পক্ষে এসেছে।’ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে চলা একটা দল হঠাৎই দুর্দান্ত হয়ে ওঠার গল্প নতুন করে লিখল রংপুর। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের গল্পটা ঠিক বিপরীত।

টুর্নামেন্টজুড়ে অসাধারণ খেলা একটা দল শেষ চারে টানা দুই ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েও যেতে পারেনি ফাইনাল। যদিও রোববার বৃষ্টি-নাটকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে। কিন্তু অধিনায়ক তামিম ইকবাল সেটি এড়িয়েই গেলেন। বরং রংপুর নিয়ে তাঁর ‘ভীতি’র কথা বললেন, ‘যারা এভাবে ১-২ রান, ১-২ উইকেটে জিতে ওঠে, তাদের ভয় পাই সব সময়ই। আমার কাছে মনে হয় এ দলগুলোকে ভাগ্য সব সময়ই সহায়তা করে। তাদের বড় তারকারা একটা সময় ভালো খেলেনি। যেভাবে হোক সেটা তারা সামলে নিয়েছে। ম্যাচ জিতেছে। মাশরাফি ভাই যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারকারা ভালো না খেলার পরও যেভাবে দলকে জিতিয়েছেন তাঁকে কৃতিত্ব দিতে হবে। তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, নকআউট পর্বে এসে দলের বড় দুই তারকা একাই ম্যাচ বের করে নিয়েছে। কৃতিত্ব তাদের দিতে হবে।’ কৃতিত্ব কুমিল্লাকেও দিতে হবে। ‘ফেয়ার প্লে’র পুরস্কার যদি থাকত, সেটা তামিমরা পেতেই পারতেন!