বাংলাদেশকে 'বিপদে' ফেলে যাননি হাথুরু

হাথুরু বনাম মাশরাফি! ছবি: প্রথম আলো
হাথুরু বনাম মাশরাফি! ছবি: প্রথম আলো

বিসিবি তাঁর চেনা, চেনা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। শুধু মাঠ কেন, বাংলাদেশই তো ভালোভাবে চেনা চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের। পুরোনো ঠিকানায় আজ তিনি নতুন অতিথি। হঠাৎ সম্পর্কচ্ছেদ করে শ্রীলঙ্কার কোচ হলেও মন থেকে দ্রুত বাংলাদেশ দলের নামটা নিশ্চয়ই মুছে যায়নি!

তাই তো অভ্যাসবশত আজ সংবাদ সম্মেলনে হাথুরু একবার বলেও ফেললেন, ‘গত আড়াই বছরে একটি ছাড়া আমরা কোনো সিরিজ হারিনি!’ পরে নিজেই সংশোধনী দিলেন, ‘আমরা মানে যখন আমি বাংলাদেশে ছিলাম।’ একসময়ের ‘আমরা-আমাদের’ এখন হয়ে গেছে ‘ওরা-ওদের’। তবুও বাংলাদেশকে শুভকামনা জানাতে ভোলেননি হাথুরু।

কিন্তু বাংলাদেশের অধ্যায়টা আকস্মিক চুকিয়ে ফেলতে একটুও কি আবেগ স্পর্শ করেনি হাথুরুকে? পুরোনো কথাটা তিনি মনে করিয়ে দিলেন, ‘এখানে যে সাড়ে তিন বছর ছিলাম, নিশ্চয়ই জানেন আমি আবেগী নই। আবেগ খুব বেশি নেই। তবে এখনো চাই বাংলাদেশ ভালো করুক। ক্রিকেটারদের শুভকামনা জানাই। ওদের সঙ্গে অনেক ঘনিষ্ঠ ছিলাম, খুব ভালো জানাশোনা হয়ে গিয়েছিল। ওরা আরও সাফল্য পাবে, সেটাই চাই। একই সঙ্গে এখন আমার যা কাজ, আমি চাই শ্রীলঙ্কা ভালো করুক।’

হাথুরু অবশেষে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের সামনে এসেছেন। গত মাসে ঢাকায় এসেছিলেন ঠিকই, তবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি এ শ্রীলঙ্কান কোচ। ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার নতুন কোচ হয়ে বাংলাদেশে আসা হাথুরুকে তাই আজ যতটা সিরিজ নিয়ে, তার চেয়ে বেশি বলতে হলো আকস্মিক পদত্যাগ নিয়ে। পড়তে হলো অপ্রিয় সব প্রশ্নের মুখে।
বাংলাদেশকে ‘বিপদে’ ফেলে যাওয়া কতটা যৌক্তিক হয়েছে, এই প্রশ্নে হাথুরুর সোজাসাপটা উত্তর, ‘আমি তা মনে করি না। না হলে চলে যেতাম না।’ কিন্তু সফরের (দক্ষিণ আফ্রিকা) মাঝে কেন পদত্যাগ? এটি অবশ্য এড়িয়ে যেতে চাইলেন শ্রীলঙ্কান কোচ, ‘আমার পেশাদার দায়িত্ব নিয়ে বা বিসিবির সঙ্গে কীভাবে আলোচনা করেছি, সেটি বিস্তারিত বলতে চাই না। আগেও বলিনি, এখনো বলব না। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না।’

হাথুরুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, বাংলাদেশ দলের কোচ থাকতে কয়েকজন খেলোয়াড়ের প্রতি তাঁর দৃষ্টিকটু পক্ষপাত ছিল। অনুশীলনে তাঁদের তিনি বেশি সময় দিতেন। বাজে খেলার পরও বারবার সুযোগ দিতেন। এই অভিযোগ হাথুরু খণ্ডালেন এভাবে, ‘বাংলাদেশ দল এক-দুজন ক্রিকেটারের নয়। অনেক ভালো ক্রিকেটার আছে। পাঁচজন ক্রিকেটার না থাকলেও তারা ভালো করতে পারে। আমার প্রিয় বলে কেউ ছিল না। যখন কেউ ভালো করে, তখনই সে আমার প্রিয়। এভাবেই দেখি বিষয়টা।’

কদিন আগেও যেহেতু বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন। মাশরাফি-সাকিবদের সবই হাথুরুর জানা। এই সুবিধা হাথুরু যেমন পাবেন, বাংলাদেশও পাবে। তবে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে খুব ভালো জানা-বোঝাকে বড় করে দেখছেন না হাথুরু, ‘এই যুগে তথ্য পাওয়া খুব কঠিন কিছু না। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগগুলো কাজ আরও সহজ করে দিয়েছে। অনেক শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারও এখানে (বাংলাদেশ) খেলে। তারা সবাই পরস্পরকে খুব ভালোভাবে জানে। যথেষ্ট তথ্য সহজেই পাওয়া যায়। বাড়তি সুবিধা তাই খুব বেশি নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও জানে আমি কীভাবে পরিকল্পনা করি, আমার ভাবনা কেমন। সেদিক থেকে খুব বেশি বাড়তি সুবিধা নেই।’

সাংবাদিকদের সহাস্যে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সংবাদ সম্মেলনকক্ষ থেকে বের হলেন হাথুরু। শ্রীলঙ্কান কোচ চাইবেন হাসিটা সিরিজ শেষেও ধরে রাখতে। আর বাংলাদেশ? না বললেও চলছে! হাথুরুর সব প্রচেষ্টাকে দেখাবে বুড়ো আঙুল!