বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে এখন আর টানে না!

কালোবাজারিদের আজ মাথায় হাত! টিকিট নিয়ে ঘুরছেন। বিক্রি করার দর্শক পাচ্ছেন না। এই প্রতিবেদককে দর্শক ভেবে কানের কাছে নিচু স্বরে এক কালোবাজারি বলে গেলেন, ‘ল্যায্য দামই দিয়েন!’ ব্যবসার এমনই করুণ অবস্থা, ‘ল্যায্য’ দামে টিকিট বিক্রির দর্শকও পাচ্ছেন না!
কালোবাজারিদের এই ‘দুর্দিনে’ সাধারণ দর্শকদের মুখে চওড়া হাসি। টিকিট বুথের সামনে নেই লম্বা লাইন। অনলাইনে কাটতেও কোনো ঝক্কি নেই। দর্শকেরা টিকিট পাচ্ছেন গায়ের দামেই। বাংলাদেশের ম্যাচে যে টিকিট প্রায়ই হয়ে যায় সোনার হরিণ, সেটাই এত সহজলভ্য! এর পেছনে কোনো যুগান্তকারী উদ্যোগ নয়, আজকের ম্যাচটার প্রতি মানুষের কম আগ্রহই কারণ।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা প্রায় ২৫ হাজার। বেলা দুইটার সময় খাঁ খাঁ গ্যালারি কিছুটা ভরলেও দর্শকসংখ্যা ৫ হাজারও হবে না। এবারও অনলাইনে সিরিজের টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পেয়েছে সহজ ডটকম। সহজ ডটকমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সন্দীপন দেবনাথ টিকিট বিক্রি নিয়ে বেশ হতাশ, ‘আমরা বিক্রির জন্য ২০ শতাংশ টিকিট পেয়েছি (প্রায় ৫ হাজার)। সেটির ৫০ শতাংশ (আড়াই হাজার) বিক্রি করতে পেরেছি। একটু হতাশ। বাংলাদেশের ম্যাচ অথচ টিকিটের কাটতি নেই! পরের ম্যাচটা যেহেতু শ্রীলঙ্কার সঙ্গে (শুক্রবার), আশা করি ভালো দর্শক হবে।’
১৫ মাস পর দেশের মাঠে ওয়ানডে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে ৮ বছর পর ত্রিদেশীয় সিরিজ, তবু সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচ নিয়ে দর্শকের আগ্রহ কম! উত্তর গ্যালারির টিকিট কাটা মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী পারভেজ বললেন, ‘সিরিজের প্রথম ম্যাচেই জিম্বাবুয়ে বলে আজ দর্শকদের আগ্রহ একটু কম। যেদিন মানুষের অনেক আগ্রহ থাকে, ৫০০ টাকার টিকিট ২ হাজার টাকায় কিনতে হয়। আজ ১৫০ টাকাতেই পেয়েছি। পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। তখন আবার টিকিট পাওয়া কঠিন হবে।’
দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচ জমজমাট হবে না—এ ধারণাতেই ম্যাচটা নিয়ে আজ দর্শকদের আগ্রহ কম হলেও একটা সময় ছবিটা ছিল ভিন্ন। সেই ছবিটা কেমন ছিল, সেটি জিম্বাবুয়ের বর্তমান কোচ হিথ স্ট্রিকের ভালোই জানা। খেলোয়াড়ি জীবনে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়েকেই ফেবারিট দেখেছেন। বাস্তবতা মেনে স্ট্রিক সিরিজের আগেই স্বীকার করে নিয়েছেন, জিম্বাবুয়ে ‘আন্ডারডগ’।
শক্তিমত্তায় দুই দল কাছাকাছি কিংবা সমান না হলে লড়াই জমে না। কিন্তু প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, নিজের দলকে সমর্থন করার আগ্রহে তাতে ভাটা পড়েছে কেন, সেটির একটি ব্যাখ্যা দিলেন প্রায় ফাঁকা গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে বসে খেলা দেখতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ফজলে রাব্বী, ‘প্রতিপক্ষ কতটা দুর্বল, এই ম্যাচে সেটা এরই মধ্যে দেখেছি। আজ ছুটির দিন নয়, সেটাও একটা কারণ। বিকেলে দর্শক হয়তো আরেকটু বাড়ব। তবে ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ দর্শকেরা কিন্তু ঠিকই মাঠে এসেছে। আর প্রতিপক্ষের (জিম্বাবুয়ে) কথা যদি বলেন, তারা যেমন ছিল, তেমনই আছে। ক্রিকেটে আমরা উন্নতি করেছি আগের চেয়েও বেশি।’
জিম্বাবুয়ের একেকটা উইকেট পড়ার পর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দর্শকদের যে হর্ষধ্বনি শোনা যাচ্ছে, সেটির অধিকাংশ আসছে পূর্ব গ্যালারি থেকে। বরাবরের মতো আজও ‘আমজনতা’র এ গ্যালারিই যা একটু ভরেছে। দামে একটু কম বলে এই গ্যালারিটাই বেশি ভরে। টিভিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাংলাদেশের দর্শকদের উল্লাস দেখাতে ব্যবহার করা হচ্ছে এই গ্যালারিটাই।
এ ছাড়া ভিড় আছে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে। বাকি সব গ্যালারি ও স্ট্যান্ড ফাঁকা থাকার অর্থ হয়তো একটাই। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের লড়াই এখন আর দর্শকদের সেভাবে টানে না!