যুব বিশ্বকাপে আউট নিয়ে বিতর্ক

বিতর্কিতভাবে আউট করা হয়েছে পিল্লায়কে। ছবি: আইসিসি
বিতর্কিতভাবে আউট করা হয়েছে পিল্লায়কে। ছবি: আইসিসি

ওয়েস্ট ইন্ডিজের তরুণ ক্রিকেটারদের প্রিয় কাজ কী? হারানো ক্যালিপসো সুরে ব্যাটিং করে মোহ জাগানো, উদ্‌যাপনের ভিন্ন স্বাদে মাঠ রাঙানো আর অবশ্যই ক্রিকেটের চেতনার পক্ষে-বিপক্ষের বিতর্ক উসকে দেওয়া! অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান জীভেশন পিল্লায়কে এমনভাবে আউট করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাতে আর ‘ভদ্রলোকের খেলা’ বলা যাচ্ছে না ক্রিকেটকে!

দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ১৭ তম ওভারের ঘটনা সেটি। ওপেনার পিল্লায় একটি বল খেলার পর বলটি নিরীহভাবে চলে যাচ্ছিল পিচের অন্যদিকে। যেহেতু বলটি স্টাম্পের ধারেকাছেও ছিল না এবং সেদিকে যাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই, তা দেখে পিল্লায় ভদ্রতা করলেন। বলটি ধরে ফিল্ডারদের দিকে বাড়িয়ে দিতে চাইলেন। এ ভদ্রতার মূল্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ বুঝলে তো! দলের অধিনায়ক এমানুয়েল স্টুয়ার্ট ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউটের আবেদন জানালেন আম্পায়ারের কাছে। হতভম্ব দুই আম্পায়ার টিভি আম্পায়ারের শরণাপন্ন হলেন। টিভি আম্পায়ার অনেকক্ষণ চিন্তাভাবনা করে আউট দিয়ে দিলেন!

আম্পায়ারকে দোষ দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ নিয়মেই আছে, বল ডেড না হওয়ার আগে ব্যাটসম্যান কোনোভাবে বল ধরলে এবং প্রতিপক্ষের যদি মনে হয়, তাতে ফিল্ডিংয়ে বাধা দেওয়া হয়েছে তবে তাঁকে আউট ঘোষণা করা হবে। শুধুমাত্র ক্যারিবীয় দল আউটের আবেদন প্রত্যাখ্যান করলেই বেঁচে যেতেন পিল্লায়।

পাঠককে দুই বছর আগে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের কথা মনে করিয়ে দেওয়া যাক। সেবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিততেই হবে এমন ম্যাচে জিম্বাবুয়ের শেষ ব্যাটসম্যানকে ‘মানকাড়’ আউট করেছিলেন। অর্থাৎ বল করতে এসে ব্যাটসম্যানকে বাইরে দেখে বল না ছেড়ে স্টাম্প ভেঙে দিয়েছিলেন পেসার কিমো পল। সেদিনও এমন কাণ্ডে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব কেঁপে উঠেছিল। কারণ, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতায় যেখানে সৌহার্দ্যই গুরুত্ব পাওয়ার কথা, সেখানে এমন আউট। তবে সেদিন সমালোচনার মাঝেও এক ব্যক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে কথা বলেছিলেন। সেই ইয়ান বিশপও অবশ্য আজ চরম বিরক্ত হয়েছেন।

সাধারণত ব্যাটসম্যানকে ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ আউট দেওয়া হয়, যখন বল স্টাম্পের দিকে যাওয়ার সময় ব্যাট বাঁ হাত দিয়ে থামানোর চেষ্টা করা হয়। পিল্লায়ের সেরকম কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। ইয়ান বিশপ তাই উত্তরসূরিদের এমন আচরণে কষ্ট পেয়েছেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ব্যাটসম্যান কোনো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেনি। সে অবৈধ কিছু করছিল না। আম্পায়ার যা করা দরকার তা করেছে। কিন্তু বল থেমে গিয়েছিল, সেটা স্টাম্পের দিকে যাচ্ছিল না। ব্যাটসম্যান ফিল্ডিং দলকে সাহায্য করছিল। আমি ফিল্ডিং দলের অধিনায়ক হলে আরও গভীরভাবে ভাবতাম। সে খুব বুদ্ধিমান ছেলে এবং আইন বোঝে। কিন্তু আমার কাছে গত বিশ্বকাপের তুলনায় এটি ভিন্ন।’

এমন ঘটনাতেও অবশ্য লাভ হয়নি উইন্ডিজের। গতবার অমন কাণ্ডের পর বিশ্বকাপ জিতে গিয়েছিল ক্যারিবীয়রা। কিন্তু আজ দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৭৬ রানে হেরে গেছে তারা। ফলে এবার চ্যাম্পিয়ন নয়, সর্বোচ্চ নবম দল হওয়াটাই তাদের লক্ষ্য হতে যাচ্ছে।