মিরপুরের ১০০ - গৌরবের নাকি ব্যর্থতার?

১০০ ওয়ানডের আয়োজক হওয়ার কীর্তি গড়েছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। ছবি: বিসিবি
১০০ ওয়ানডের আয়োজক হওয়ার কীর্তি গড়েছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। ছবি: বিসিবি

ইতিহাসের দ্রুততম সময়ে ১০০ ওয়ানডের আয়োজক হওয়ার কীর্তি গড়েছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। নির্দিষ্ট কোনো মাঠে ১০০ ওয়ানডে হওয়ার কীর্তিই আছে আর মাত্র পাঁচটি স্টেডিয়ামের। দ্রুততম সময়ে ওয়ানডের ‘সেঞ্চুরি’—মিরপুরের গৌরব নাকি উদ্বেগের, প্রসঙ্গটা উঠেছিল আজ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সংবাদ সম্মেলনে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের আটটি ভেন্যুতে হয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম রাজনীতির বলি হয়ে অনেক আগে থেকেই পরিত্যক্ত। ২০০৬ সাল থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু হওয়ার পর অপাঙ্‌ক্তেয় হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের আরেক স্টেডিয়াম এমএ আজিজ। ফতুল্লা, সিলেট, খুলনার ভাগ্যে কিছু ম্যাচ জুটলেও সেটি অনিয়মিত। ২০০৬ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম থেকে ক্রিকেট মিরপুরে চলে আসার পর গত এক যুগে শুধু মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই আয়োজিত হচ্ছে একটার পর একটা ম্যাচ।
যত চাপ মিরপুরের। দ্বিপক্ষীয়, ত্রিদেশীয়, আইসিসি কিংবা এসিসির টুর্নামেন্ট—বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হলেই সবকিছুর কেন্দ্রে থাকবে মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। ১২ বছরের মধ্যে এ ভেন্যু তাই দেখে ফেলেছে ১৬ টেস্ট, ১০০ ওয়ানডে ও ৩৬ টি-টোয়েন্টি—সব মিলিয়ে হয়ে গেছে ১৫২ ম্যাচ। মিরপুরের ১০০ ওয়ানডে নিয়ে সাকিব আল হাসান দুই দিন আগে ঠিকই বলেছিলেন, ‘মিরপুরে আমাদের অনেক ম্যাচ হয়। স্বাভাবিকভাবেই এখানে ১০০ ম্যাচ হবে, ১৫০ ম্যাচ হবে, ২০০ ম্যাচ হবে।’
একটা মাঠে এত বেশি ম্যাচ দেখতে দেখতে দর্শকেরাও যেন ক্লান্ত। তাই তো মিরপুরে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের ম্যাচ দর্শকদের এখন টানে না। স্বাগতিক দলের খেলা দেখতেই যেখানে আসে না, সেখানে দুই সফরকারীর ম্যাচ! কিন্তু একটা মাঠেই কেন এত ম্যাচ আয়োজন করতে হবে? প্রশ্নটার সহজ উত্তর—মিরপুরের সঙ্গে সমান ম্যাচ পায় না দেশের অন্য আন্তর্জাতিক ভেন্যুগুলো।
মিরপুরের শততম ওয়ানডে নিয়ে বেশ গর্ব অনুভব করলেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন নাজমুল হাসানও, ‘এটা অবশ্যই একটা চিন্তার বিষয়। যে বিশ্রামের দরকার হয় আন্তর্জাতিক মাঠগুলোয়, তার কিছুই দিতে পারছি না। প্রচুর খেলা হওয়ায় মাঠটা নিয়ে আমরা যে স্বপ্ন দেখি, যা করার ইচ্ছা আমাদের আছে, সেটি করতে পারছি না। বিরতিই পাওয়া যাচ্ছে না। একটা বিরতি লাগবে।’
মিরপুরের চাপ কমাতে বিসিবির ভাবনায় আছে রাজধানীতে নতুন আরেকটি স্টেডিয়াম নির্মাণ। বিসিবি সভাপতি জানালেন পূর্বাচলে নির্মীয়মাণ স্টেডিয়ামটির সর্বশেষ খবর, ‘পূর্বাচলে স্টেডিয়ামের জায়গা নিয়ে যে ইস্যুটা ছিল, সেটা এরই মধ্যে আমাদের বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিল। ওটা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সব জায়গায় অনুমোদন হয়ে গেছে। ফাইলটা ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে আবার প্রধানমন্ত্রীর অফিসে গেছে। প্রক্রিয়াটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। একদিন আমাদের বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
পূর্বাচলে স্টেডিয়াম হলে মিরপুরের ওপর হয়তো চাপ কমবে। কিন্তু সেই তো একই ঢাকাকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা। কিন্তু তাতে কি দর্শকখরা কাটবে? কাটবে তখনই, যখন ঢাকার বাইরের স্টেডিয়ামগুলোয় সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করা যাবে। যে শহরের মানুষের কাছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দুর্লভ একটা অভিজ্ঞতা, শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ হলেও তাঁরা ছুটে আসবেন খেলা দেখতে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে ফুটবল ম্যাচ দিলে মানুষকে জায়গা দেওয়া যায় না, এমন অভিজ্ঞতা নিকট অতীতে অনেকবারই হয়েছে।

ভেন্যু

ওয়ানডে ম্যাচ

মিরপুর স্টেডিয়াম

১০০

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম

৫৮

জহর আহমেদ স্টেডিয়াম

১৭

ফতুল্লা স্টেডিয়াম

১০

এম.এ.আজিজ স্টেডিয়াম

১০

বগুড়া স্টেডিয়াম

খুলনা স্টেডিয়াম