হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন সাকিব

সেঞ্চুরির সুবাস পেয়েও আউট হয়ে যান তামিম। ছবি: শামসুল হক
সেঞ্চুরির সুবাস পেয়েও আউট হয়ে যান তামিম। ছবি: শামসুল হক

সাবেক কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ। ভালো খেলার তাড়নাটা একটু বেশি থাকারই কথা। ব্যাটিংয়ে আপাতত সেই প্রমাণই রাখল বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭ উইকেটে ৩২০ রানের স্কোর গড়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। জবাবে দ্রুতই ৭ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২৬ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার স্কোর ৭ উইকেটে ১১৭ রান।

শ্রীলঙ্কার ইনিংসে তৃতীয় ওভারে নাসির হোসেনের ঘূর্ণিতে ফিরে যান কুশল পেরেরা (১*)। এরপর উপুল থারাঙ্গা ও কুশল মেন্ডিসকে তুলে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৬২ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় দিনেশ চান্দিমালের দল। লঙ্কানদের এই চাপকে পাহাড়সম করে তোলেন মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান। ১৯তম ওভারে নিরোশান ডিকভেলাকে বোল্ড আউট করেন মোস্তাফিজ। এর ৬ ওভার পরই লঙ্কান অধিনায়ক চান্দিমালকে রান আউট করেন সাকিব। ২৬তম ওভারে পরপর দুই বলে গুনারত্নে ও হাসারঙ্গাকে তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুলেছিলেন বাংলাদেশের এ অলরাউন্ডার।

এর আগে জিতে মাশরাফির ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তকে প্রথম ১০ ওভারেই যৌক্তিক প্রমাণ করে দেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও এনামুল হক। কোনো উইকেট না হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ৫০ রান যোগ করেন তাঁরা। কিন্তু ১৫তম ওভারেই ধৈর্যচ্যুতি ঘটে এনামুলের। থিসারা পেরেরা বাউন্সার অযথাই খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। এনামুলের ৩৭ বলে ৩৫ রানের ইনিংসটি তাই শুধু আক্ষেপই বাড়িয়েছে।

আক্ষেপ ঝরেছে তামিমের ব্যাটিংয়েও। সেটা অবশ্য সেঞ্চুরি না পাওয়ার জন্য। আগের ম্যাচে জিম্বাবুয়ে বড় স্কোর গড়তে না পারায় ৮৩ রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তামিমকে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তামিমের সেঞ্চুরির মঞ্চ তৈরিই ছিল। এ ছাড়া ওয়ানডেতে এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ার সুযোগ ছিল তামিমের। কিন্তু রেকর্ডের জন্য সেই ১২৬ রান থেকে মাত্র ৪২ রানের দূরত্বে তামিম আউট!

১০২ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলেছেন তামিম। ৭ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় সাজিয়েছেন ৪০তম ওয়ানডে ফিফটির ইনিংস। আরও কিছুক্ষণ উইকেটে থাকলে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে তুলে নিতে পারতেন ১০ সেঞ্চুরির কীর্তি। কিন্তু ৩০তম ওভারের প্রথম বলে তামিম ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। তামিম ছাড়াও আরও দুটি ফিফটির ইনিংস রয়েছে বাংলাদেশের স্কোরে। কিন্তু আক্ষেপের ব্যাপার হলো, ফিফটি পাওয়ার পর ইনিংসকে টেনে নিতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যানই।

সাকিবের কথাই ধরুন। এনামুল আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে গড়েছেন ৯৯ রানের জুটি। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে এসেছে আরও ৫৭ রানের জুটি। কিন্তু সাকিবও তাঁর ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি। ৭ বাউন্ডারিতে ৬৩ বলে ৬৭ রান করে ফিরেছেন গুনারত্নকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। তিনে ব্যাটিংয়ে নেমে এটাই তাঁর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। সাকিব আউট হওয়ার সময় (৩৭.৫ ওভার) বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ২২৭।

এখান থেকে চতুর্থ উইকেটে ৪৯ বলে ৫০ রানের জুটি গড়েন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। মুশফিক ৫২ বলে ৬২ রান করে ২৮তম ফিফটি তুলে নিলেও শেষ করে আসতে পারেননি। শেষ করে আসতে পারলে হয়তো ওয়ানডেতে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পেতে পারত বাংলাদেশ। ৪৭তম ওভারে মুশফিক আউট হওয়ার আগের ওভারে ফিরে যান মাহমুদউল্লাহও (২৪)।

৪০ ওভারের আগে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ ১০ ওভারে সেই চিরাচরিত রূপ। ৪০ ওভার শেষে রান ছিল ৩ উইকেটে ২৪৩। এখান থেকে তারা হারিয়েছে আরও ৪ উইকেট! অর্থাৎ ভালো শুরু করেও অলআউট হওয়ার শঙ্কা পেয়ে বসেছিল। অধিনায়ক মাশরাফি (৬) ও নাসির (০) দাঁড়াতে পারেননি।

প্রথম ১০ ওভারে এসেছে ৫০ রান। পরের ১০ ওভারে আরও ৫৭। ২০ থেকে ৩০ ওভার পর্যন্ত এসেছে আরও ৬৪ রান। অর্থাৎ ৩০ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১৭১। এখান থেকে পরের ১০ ওভারে যোগ হয়েছে আরও ৭২ রান। তবে শেষ ১০ ওভারে সবচেয়ে বেশি রান তুলেছে বাংলাদেশ। এই ৬০ বলে এসেছে ৭৭ রান। এর মধ্যে শেষ দিকে সাব্বিরের ১২ বলে ২৪ রানের ঝোড়ো ইনিংসে তিনশোর্ধ্ব স্কোর পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ৬০ রানে ৩ উইকেট নেন লঙ্কান পেসার থিসারা পেরেরা। নুয়ান প্রদীপের শিকার ২ উইকেট।

ওয়ানডেতে এটা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। সব মিলিয়ে যুগ্মভাবে পঞ্চম সর্বোচ্চ স্কোর। কিন্তু আক্ষেপ থেকেই গেল। তিনজন ব্যাটসম্যান ফিফটি পেলেও কেউ তা সেঞ্চুরিতে রূপান্তর করতে পারেননি। আবার ছোট দুটি প্রাপ্তিও আছে। এ ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডেতে ১০০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন সাব্বির ও এনামুল।

শ্রীলঙ্কা (লক্ষ্য ৩২১)

 

রান

বল

তামিম কট ডিকভেলা বল ধনঞ্জয়া

৮৪

১০২

এনামুল ক ডিকাভােলা বল থিসারা পেরেরা

৩৫

৩৭

সাকিব কট ও বল গুনারত্নে

৬৭

৬৩

মুশফিক বোল্ড থিসারা পেরেরা

৬২

৫২

 মাহমুদউল্লাহ কট থিসারা পেরেরা বল নুয়ান প্রদীপ ২৪ ২৩ ২ ১
 সাব্বির নট আউট ২৪ ১২ ৩ ১
 মাশরাফি কট ধনঞ্জয়া বল নুয়ান প্রদীপ ৬ ৫ ১ ০
নাসির এলবিডব্লু থিসারা পেরেরা
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন

অতিরিক্ত

১২ (বাই ৪, লেগ বাই ১, ওয়াইড ৭)

মোট (৫০ ওভারে)

৩২০/৭

উইকেট পতন: ১/৭১ (এনামুল ১৪.৫ ওভার), ২/১৭০ (তামিম ২৯.১), ৩/২২৭ (সাকিব ৩৭.৫) ৪/২৭৭ (মাহমুদউল্লাহ ৪৫.১) ৫/২৮৪ (মুশফিক ৪৬.৩ ওভার), ৬/২৯৭ (মাশরাফি ৪৭.৬) ৭/২৯৮ (নাসির ৪৮.২ ওভার)

বোলিং: লাকমল ৯-০-৬০-০, প্রদীপ ১০-০-৬৬-২, ধনঞ্জয়া ১০-০-৪০-১, গুনারত্নে ৫-০-৩৮-১, হাসারাঙ্গে ৭-০-৫১-০।