মাশরাফি-সাকিবের বাঁধা দামের ভালো-মন্দ

বিপিএলে কোটি টাকার কাছাকাছি পারিশ্রমিক পাওয়া মাশরাফি-সাকিবরা প্রিমিয়ার লিগ খেলবেন ৩৫ লাখে। ছবি: প্রথম আলো
বিপিএলে কোটি টাকার কাছাকাছি পারিশ্রমিক পাওয়া মাশরাফি-সাকিবরা প্রিমিয়ার লিগ খেলবেন ৩৫ লাখে। ছবি: প্রথম আলো

শাইনপুকুরের কোচ ফয়সাল হোসেন ভীষণ খুশি। খুশি হবেন না কেন! ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আজ ‘প্লেয়ার বাই চয়েজের’ প্রথম ডাকের সুযোগ পেয়েই তাঁরা দলে ভিড়িয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। প্রথম বিভাগ থেকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে উন্নীত শাইনপুকুর দলটা হয়েছে একেবারেই তারুণ্যনির্ভর। সেই দলের অধিনায়ক মাশরাফি।

যদি আগের মতো প্লেয়ার বাই চয়েজ না থাকত, মাশরাফি কি স্বেচ্ছায় শাইনপুকুর বেছে নিতেন? প্লেয়ার বাই চয়েজের মূল কথা, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলোয়াড়ের স্বাধীনভাবে যে দল বেছে নেওয়া ও নিজেদের দরদাম ঠিক করার যে রেওয়াজ ছিল, সেটি এবার নেই। প্লেয়ার বাই চয়েজ আগেও দুবার দেখা গেছে প্রিমিয়ার লিগে। প্রতিবারই আপত্তি উঠেছে খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে। আপত্তি উঠেছে এবারও।

প্রিমিয়ার লিগের গত দুই মৌসুমেই বোলারদের মধ্যে শীর্ষে পাঁচে ছিলেন এমন এক বোলারের পারিশ্রমিক এবার ১৫ লাখ টাকা। বেশ দুঃখ নিয়েই দুদিন আগে তিনি বলেন, ‘ভালো খেললে খেলোয়াড়ের দাম বাড়ে। আর আমাদের দাম দেখি দিনে দিনে কমছে! লিগে ভালো খেলে তাহলে লাভ কী?’

বিপিএলে যেখানে আইকন খেলোয়াড়েরা কোটি টাকা কিংবা কোটি টাকার কাছাকাছি পাচ্ছেন প্রিমিয়ার লিগে সেটির অর্ধেকও কম। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্লেয়ার্স বাই চয়েজ নিয়ে আগেও খেলোয়াড়দের পাশে ছিলেন। এবারও দাঁড়াচ্ছেন, ‘আমি কখনোই এটার পক্ষে নই। খেলোয়াড়েরা যেন স্বাধীনভাবে খেলতে পারে, ইচ্ছেমতো দল বেছে নিতে পারে সেটাই চাই। এটা নিয়ে অনেক খেলোয়াড়ই খুশি নয়। আমি নিজেও খুশি নই। এখানে খেলোয়াড়দের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে।’

প্লেয়ার বাই চয়েজ শুধু আর্থিকভাবে নয়, এটি একজন খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সেও যে প্রভাব পড়তে পারে সেটিও বললেন ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সফল কোচ সালাউদ্দিন, ‘একজন খেলোয়াড় যখন নিজের স্বাধীনমতো দল পছন্দ করে খেলতে পারবে না, সে তখন মানসিক চাপে থাকবে। আগের মৌসুমে যে ক্লাবে সে খেলেছে সেখানে বাজে অভিজ্ঞতা হতে পারে, পারিশ্রমিকে সমস্যা হতে পারে, অফিশিয়াল, কোচিং-স্টাফকে পছন্দ না-ও হতে পারে। সেখানে একজন খেলোয়াড়ের স্বাধীনতা আছে আরেক ক্লাবে যাওয়ার। এখানে সেই সুযোগ খেলোয়াড়কে দেওয়া হচ্ছে না।’

২০১৬ প্রিমিয়ার লিগেও প্লেয়ার বাই চয়েজে দল গড়েছিল ক্লাবগুলো। লিগ শেষে সেবার কিছু ক্লাবের বিরুদ্ধে পারিশ্রমিক পরিশোধ না করার অভিযোগ উঠেছিল। বিসিবির দুয়ারে খেলোয়াড়েরা দিনের পর দিন ঘুরেছেন পারিশ্রমিকের জন্য। শেষ পর্যন্ত বিসিবিকে টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে খেলোয়াড়দের।

এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার পর আবারও কেন একই পথে হাঁটা? ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস (সিসিডিএম) বলছে, খেলোয়াড়দের আকাশচুম্বী চাহিদার কারণে অনেক ক্লাব অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। আর্থিক বিষয়ে ভারসাম্য আনতেই খেলোয়াড়দের লাগাম পরানোর সিদ্ধান্ত। সিসিডিএম চেয়ারম্যান কাজী এনাম বললেন, ‘অনেক ক্লাবের টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলোয়াড়দের যে চাহিদা সেটি অনেক ক্লাব দিতে পারছিল না। অনেক ক্লাবের দলই করতে পারছিল না। এটা নিয়ে নির্বাচকেরা, পরিচালকেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে বারবার কথা বলেছেন।’

যোগ্যতা অনুযায়ী পারিশ্রমিক না পাওয়ার যে অভিযোগ তুলেছেন খেলোয়াড়েরা, সেটির সঙ্গে একমত নন কাজী এনাম, ‘দুই বছর আগে যখন প্লেয়ার বাই চয়েজ হয়েছিল, তখন যে পারিশ্রমিক ধরা হয়েছিল সেখান থেকে অনেক খেলোয়াড়ের দাম বাড়ানো হয়েছে। খেলোয়াড়দের যে পারিশ্রমিক ধরা হয়েছে সেটা নিশ্চিতও করা হচ্ছে। ক্লাবগুলো যেমন ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক এরই মধ্যে দিয়ে দিয়েছে।’
সব ঠিক থাকলেই ভালো। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, প্রিমিয়ার লিগ শুরুর পর ঠিক থাকে না অনেক কিছুই।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কে কোন ক্লাবে—

গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স

ধরে রেখেছে: মুমিনুল হক, জহুরুল ইসলাম, নাদিফ চৌধুরী, মেহেদি হাসান, আবু হায়দার।

ড্রাফট থেকে: ইমরুল কায়েস, আসিফ আহমেদ, কামরুল ইসলাম রাব্বি, জাকের আলী, নাঈম হাসান, টিপু সুলতান, শহিদুল ইসলাম, নুরুজ্জামান, শফিউল হক, রাসেল আল মামুন।

প্রাইম দোলেশ্বর

ধরে রেখেছে: ফরহাদ রেজা, ইমতিয়াজ হোসেন, মার্শাল আইয়ুব, আরাফাত সানি, মোহাম্মদ শরিফউল্লাহ।

ড্রাফট থেকে: লিটন দাস, মুস্তাফিজুর রহমান, ফজলে রাব্বি, ইমরান আলী, ফরহাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ, আরাফাত সানি জুনিয়র, দেওয়ান সাব্বির।

আবাহনী

ধরে রেখেছে: মোসাদ্দেক হোসেন, নাজমুল হোসেন শান্ত, সানজামুল ইসলাম, সাইফ হাসান, মোহাম্মদ মিঠুন।

ড্রাফট থেকে: নাসির হোসেন, তাসকিন আহমেদ, সাকলাইন সজীব, মেহেদী হাসান মিরাজ, হাসান মাহমুদ, হোসেন আলি, মোহাম্মদ রাকিব।

প্রাইম ব্যাংক

ধরে রেখেছে: মেহেদী মারুফ, জাকির হাসান, আরিফুল হক, আল-আমিন জুনিয়র, নাহিদুল ইসলাম।

ড্রাফট থেকে: মাহমুদউল্লাহ, রুবেল হোসেন, মনির হোসেন খান, দেলোয়ার হোসেন, সাজ্জাদুল হক রিপন, এনামুল হক জুনিয়র, মেহরাব হোসেন জুনিয়র, শানাজ আহমেদ।

মোহামেডান

ধরে রেখেছে: তাইজুল ইসলাম, রকিবুল হাসান, শামসুর রহমান, রনি তালুকদার, শুভাশীষ রায়।

ড্রাফট থেকে: সাকিব আল হাসান, ইরফান শুক্কুর, কাজী অনিক ইসলাম, এনামুল হক, মোহাম্মদ আজিম, এবাদত হোসেন, বিশ্বনাথ হালদার, জনি তালুকদার, আমিনুল ইসলাম, সাঈদ সরকার।

শেখ জামাল ধানমন্ডি

ধরে রেখেছে: জিয়াউর রহমান, সোহাগ গাজী, নুরুল হাসান সোহান, তানবীর হায়দার, ইলিয়াস সানি।

ড্রাফট থেকে: আবু জায়েদ চৌধুরী, নাজমুল ইসলাম অপু, সৈকত আলী, সাজেদুল ইসলাম, পিনাক ঘোষ, মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, রবিউল হক, শেখ নাজমুল হোসেন, মাহমুদুল হক সেতু।

লিজেন্ড অব রূপগঞ্জ

ধরে রেখেছে: মোশাররাফ হোসেন, নাঈম ইসলাম, মোহাম্মদ শরিফ, আসিফ হাসান, হামিদুল ইসলাম।

ড্রাফট থেকে: মুশফিকুর রহিম, আব্দুল মজিদ, তুষার ইমরান, অভিষেক মিত্র, মোহাম্মদ শহীদ, নাঈম শেখ, নাজমুল হোসেন মিলন, মেহেদী হাসান, সালাউদ্দিন পাপ্পু, রুবেল মিয়া।

ব্রাদার্স

ধরে রেখেছে: অলক কাপালি, জুনায়েদ সিদ্দিক, মিজানুর রহমান, মাইশুকুর রহমান, নিহাদ-উজ-জামান।

ড্রাফট থেকে: ইয়াসির আলী চৌধুরী, খালেদ আহমেদ, সোহরাওয়ার্দী শুভ, ইফতেখার সাজ্জাদ, মেহেদী হাসান রানা, শাকিল হোসেন, মেহরাব হোসেন জোশি, রনি হোসেন, নাজমুস সাদাত।

কলাবাগান

ধরে রেখেছে: মোহাম্মদ আশরাফুল, তাসামুল হক, মুক্তার আলী, নাবিল সামাদ, আবুল হাসান।

ড্রাফট থেকে: তামিম ইকবাল, তাইবুর রহমান, রাহাতুল ফেরদৌস, জসিম উদ্দিন, সঞ্জিত সাহা, মাহমুদুল হাসান, ফারুক হোসেন, মুনিম শাহরিয়ার, শাহাদাত হোসেন, মাহবুবুল আলম।

খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতি

ধরে রেখেছে: নাফিস ইকবাল, রবিউল ইসলাম রবি, অমিত মজুমদার, তানভির ইসলাম, রাফসান আল মাহমুদ।

ড্রাফট থেকে: এনামুল হক বিজয়, নূর আলম সাদ্দাম, মইনুল ইসলাম, মাহিদুল ইসলাম ভূইয়া, হাবিবুর রহমান জনি, মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন, নির্জন ভদ্র, মাসুম খান, জাকারিয়া মাসুদ।

শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব

ধরে রেখেছে: আফিফ হোসেন, সাদমান ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, শুভাগত হোম ও তৌহিদ হৃদয়।

প্লেয়ার ড্রাফট থেকে: মাশরাফি বিন মুর্তজা, রায়হান উদ্দিন, তৌহিদ তারেক খান, নাঈম ইসলাম জুনিয়র, ফারদিন হাসান অনি, আলী  আহমেদ মানিক, সুজন হাওলাদার।

অগ্রণী ব্যাংক

 ধরে রেখেছে: সৌম্য সরকার, শাহরিয়ার নাফীস, আব্দুর রাজ্জাক, শফিউল ইসলাম, আজমীর আহমেদ।

 ড্রাফট থেকে: আল আমিন হেসেন, ধীমান ঘোষ, সালমান হোসেন, শাহবাজ চৌহান, সাইমন আহমেদ, ইসলামুল আহসান, গোলাম কবীর।

আরও পড়ুন...