বিদেশের মাটিতে এ কোন রোহিত!

বিদেশের মাটিতে মোটেও ভালো করতে পারছেন না রোহিত। ছবি: এএফপি
বিদেশের মাটিতে মোটেও ভালো করতে পারছেন না রোহিত। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে কখনোই টেস্ট সিরিজ জেতেনি ভারত। দেশে বিরাট কোহলিদের আশার পারদ যতটুকু থাকে, বিদেশে তার ধারেকাছেও থাকে না। খেলোয়াড়েরাও কেমন যেন চুপসে যান। যেমন ধরুন রোহিত শর্মার কথা। কিছুদিন আগেই দ্বিশতক পেয়েছেন ঘরের মাটিতে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই টেস্টে চার ইনিংস মিলিয়ে ব্যর্থ। কোনো ইনিংসেই ছাড়াতে পারেননি পঞ্চাশের কোটা।

রোহিত শর্মার টেস্ট অভিষেক ২০১৩ সালে। তারপর থেকে ২৫ টেস্টে ৪৩ ইনিংসে গড় ৪০ ছুঁইছুঁই, যা কিনা একজন ব্যাটসম্যানের জন্য ভালোই বলা যেতে পারে। কিন্তু তাঁর এই রানগুলোকেই আতশি কাচের নিচে রাখলে দেখা যাবে অনেক কিছুই। ২৫ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ৯ ম্যাচ খেলেছেন ঘরের মাটিতে, যেখানে তাঁর গড় ৮৫.৪৪। ৩টি শতক আর ৫টি অর্ধশতক নিয়ে দেশের মাটিতে সেরা।

কিন্তু দেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে নজর দিলেই চোখে পড়বে মুদ্রার অপর পিঠ। ঘরের বাইরে সেই একই ব্যাটমসম্যানের টেস্ট গড় মাত্র ২৫। দেশের ভেতরে আর বাইরে এ যেন আলাদা দুই ব্যাটসম্যান! দেশের বাইরে তাঁর ফিফটি মাত্র চারটি। সেঞ্চুরি নেই। তার ওপর চেনা পরিবেশ এশিয়ার মধ্যে শ্রীলঙ্কার মাটিতে দুটি। আর বাকি দুটিও প্রায় এশিয়ার কাছাকাছি অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে। দুটি পরিসংখ্যান পাশাপাশি রাখলে রোহিত নিজেই লজ্জা পাবেন বৈকি!

ওয়ানডেতে ঘরের মাটিতে ৪৮ ইনিংসে তাঁর গড় ষাটের কাছাকাছি, দ্বিশতক, শতক আর অর্ধশতকের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন। ৭টি শতক আর ১১টি অর্ধশতক নিজেদের মাটিতে। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৩টি ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ করে নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়।

বিদেশের মাটিতে সেই রোহিতের গড়ই সাঁইত্রিশের কোটায়! তবে পাকিস্তানে ৫৮, অস্ট্রেলিয়ায় ৫৭ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৫৪—পঞ্চাশের ওপরে গড় আছে এ কয়েকটি দলের বিপক্ষে। আর বলার মতো গড় জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ৪৫। কিন্তু অন্য দলগুলোর বিরুদ্ধে যারপনাই খারাপ। নিউজিল্যান্ডে ৩৭, ইংল্যান্ডে ৩০, শ্রীলঙ্কায় ২৭, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১২। আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাঁর গড় ২৩। বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরি অর্ধেকেরও কম। ৬টি শতক আর ১৩টি অর্ধশতক। ক্যারিয়ারে ১১ ‘ডাক’-এর মধ্যে ৭ বারই বিদেশের মাটিতে।

অঞ্জন দত্তের বিখ্যাত গানের লাইন ছিল, ‘পাড়ায় ঢুকলে ঠ্যাং খোড়া করে দেব, বলেছে পাড়ার দাদারা’। পাড়ার কিংবা দেশের মধ্যে সবাই ‘বাঘ’। কিন্তু অন্যের ঘরে ঢুকে জয় ছিনিয়ে আনা অনেক কঠিন। রোহিতের মতো খেলোয়াড়েরা যত দিন পর্যন্ত না বিদেশে ভালো করতে পারবেন, তত দিন পর্যন্ত ভারতের ‘পা-চ-ছি-শ সাল কা হিসাব’ টিভি বিজ্ঞাপন হয়েই থাকবে, হিসাব আর চুকবে না!