'বাংলাদেশ এখন অনেক বড়'

ত্রিদেশীয় সিরিজে নতুনভাবে শুরু হলো এনামুল হকের। ছবি: প্রথম আলো
ত্রিদেশীয় সিরিজে নতুনভাবে শুরু হলো এনামুল হকের। ছবি: প্রথম আলো

এনামুল হকের মধ্য যে পরিবর্তন আসছে, সেটি তাঁর কথাতেই বোঝা গেল। আজ সংবাদ সম্মেলনে কথা বললেন বেশ গুছিয়ে। তবে কথাবার্তায় তিনি যতটা শান্ত-ধীরস্থির, গত দুই ম্যাচে ২২ গজে তাঁকে ততটাই অস্থির দেখাল। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে গিয়েই উইকেটে কেন যেন ছটফট করলেন।

এনামুলের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন অভিযোগ ছিল, অহেতুক বল নষ্ট করেন, স্ট্রাইক রোটেট করতে পারেন না। স্বার্থপরের মতো ব্যাটিং করেন। ২৫ বছর বয়সী ওপেনার মনেপ্রাণে চাইছেন এ অভিযোগের বৃত্ত থেকে বেরোতে। এখন শুরুতেই শট খেলছেন। তাতে অবশ্য ঝুঁকিও বাড়ছে। কখনো কখনো প্রতিপক্ষকে সুযোগ দিয়ে ফেলছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত ম্যাচে ৩৭ বলে ৩৫ রানের ইনিংসটি খেলতে গিয়ে তিন-তিনবার জীবন পেলেন। তবুও ইনিংসটি বড় করতে পারেননি।

আক্রমণাত্মক খেলতে হলে ঝুঁকি নিতে হবে। কিন্তু সেটি হতে হবে হিসাবি ঝুঁকি, ক্যালকুলেটিভ রিস্ক। বিষয়টি বেশ অনুধাবন করতে পারছেন এনামুল, ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলাটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে মনে হয় হিসাবি ঝুঁকি নেওয়াটা জরুরি। একটি ম্যাচে ভুল করেছি। সামনে চেষ্টা করব ভুল না করার জন্য।’

এনামুলের সামনে যে ‘হিসাবি ঝুঁকি’র প্রসঙ্গটা আসছে, সেটি তো তিনি তামিম ইকবালকে দেখেই শিখতে পারেন। যিনি ইনিংস বড় হওয়ার আগেই উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন না। তাঁর ব্যাটিংয়ে অহেতুক ছটফটানিও এখন কমেছে। এগোতে থাকেন অনেক হিসাব কষে। এনামুল অবশ্য জানালেন, তিনি তামিমকেই অনুসরণ করছেন, ‘তামিম ভাই মাঝেমধ্যে ঝুঁকি নেন। একজন বোলারকে সুবিধামতো পেয়ে দুটি বাউন্ডারি মেরে দিলে রানরেট কাছাকাছি চলে আসে। একজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে তামিম ভাইকে অনুসরণ করার চেষ্টা করছি। আমার কাছে মনে হয়, বড় রান শিগগিরই হয়ে যাবে। মাত্র দুটি ইনিংস খেললাম। আশা করি, বড় ইনিংস সামনে হবে।’


উইকেটে তামিম সব সময়ই অনেক সমর্থন করেন তাঁর সঙ্গীকে। এনামুলকেও করছেন। দেশসেরা ব্যাটসম্যানকে নিয়ে তাই তরুণ ওপেনার এনামুলের মুগ্ধতার শেষ নেই, ‘টপ অর্ডারে তামিম ভাইয়ের চেয়ে সহায়তাকারী কেউ নেই। তামিম ভাইয়ের সঙ্গে ব্যাটিং করাও গর্বের ব্যাপার। বাংলাদেশে এত বড় একজন ওপেনার জন্ম নিয়েছেন, বিরাট ব্যাপার। তাঁর সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা হয়। মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে। আসলে দুই দিক থেকেই রান এলে খুব ভালো হয়। আর ডানহাতি ও বাঁহাতির কম্বিনেশন থাকলে বোলারদের জন্য একটু অসুবিধাও হয়। মাত্র দলে ফিরলাম, আশা করি সামনে আরও বেশি কিছু শিখতে পারব এবং বড় কিছু করতে পারব।’

অনেক দিন পর ফিরলেন বলতে, ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে চোটে পড়ে ছিটকে পড়েছিলেন। প্রায় তিন বছর পর আবার ওয়ানডে খেলছেন এনামুল। গত তিন বছরে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে কিছু পরিবর্তন ধরা পড়েছে এনামুলের চোখে, ‘আমরা সবাই এখন দল হয়ে খেলছি। সবাই চেষ্টা করছে বাংলাদেশকে বড় জায়গায় নিয়ে যেতে। আমাদের দলে কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার আছেন। সবাই স্বাধীনতা নিয়ে খেলছেন, যা খুব দরকার ছিল। ড্রেসিংরুমে থাকলে একটা ভালো লাগা কাজ করে, তামিম ভাইয়ের ১১ হাজার রান, সাকিব ভাইয়ের ১০ হাজার রান, মুশফিক ভাইয়ের ৩০০ ম্যাচ, মাশরাফি ভাইয়ের নেতৃত্ব, রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ভাইয়ের মতো লড়াকু খেলোয়াড়। মোস্তাফিজের মতো দুর্দান্ত বোলার—ড্রেসিংরুমটা এখন অনেক ভারী। এখানে থাকলে মনে হয়, আমাকেও আরও ভালো কিছু করতে হবে। ড্রেসিংরুমে থাকলে মনে হয়, বাংলাদেশ এখন অনেক বড়।’