'আমলাগিরি দেখান...দেখায় দেব আমরা কারা'

রোববার বেলা পৌনে দুইটা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অষ্টম তলার শান্ত পরিবেশটা হঠাৎই গনগনে তাপ ছড়াতে শুরু করল যেন। প্রচণ্ড চিৎকার করছেন জাতীয় ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু, যিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) উপমহাসচিবও। তাঁর সঙ্গী জাতীয় হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং বিওএর আরেক উপমহাসচিব আসাদুজ্জামান কোহিনুরও উত্তেজিত। তবে অতটা নন। এঁদের তোপের মুখে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (ক্রীড়া) দীল মোহাম্মদ।

‘বড় কর্মকর্তা হইছেন, আমলাগিরি দেখান? দেখায় দেব আমরা কারা, কী করতি পারি’—আশিকুর রহমানকে থামানোই যাচ্ছিল না। পরে নড়াইলের আঞ্চলিক ভাষায় গালি দেন, ‘...মধ্যে সব ভরে দেব।’ শূন্যস্থানের শব্দটি অশ্লীল, লেখার যোগ্য নয়। ভিড় জমে যায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আশিকুরকে থামানোই যাচ্ছিল না। ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সুকুমার সাহা গিয়ে অবশেষে এই ‘হেভিওয়েট’ ক্রীড়া সংগঠককে থামান।

কেন এই উত্তেজনা? আশিকুর ঘটনাস্থলে উপস্থিত এই সাংবাদিককে বলেন, ‘আরে কী আর বলব। এই লোককে (পরিচালক) কত দিন ধরে বলছি প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি নিয়ে একটি পর্যালোচনা সভা ডাকেন। উনি গা-ই করেন না। কেন সভা ডাকছেন না ওটাই জানতে এসেছিলাম। উনি যুগ্ম সচিবের দাপট দেখান।’ পাশে থাকা আসাদুজ্জামান যোগ করেন, ‘উনি মনে করেন আমরা তাঁর অধীনে চাকরি করি।’

এই চরম উত্তেজনাকর মুহূর্তের পেছনের কারণটা কী, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্রীড়া পরিষদের ক্রীড়াবিষয়ক পরিচালক (যুগ্ম সচিব) দীল মোহাম্মদ বলেন, ‘উনি দুই বছর আগে হওয়া প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি উপলক্ষে দেশের কয়েকটি জায়গায় গিয়েছিলেন। সেই ভ্রমণভাতা চাইছেন বিল-ভাউচারে সাইন না করেই। আমি কেন বিল-ভাউচার চাচ্ছি, কেন সাইন চাচ্ছি, এতেই উনি রেগে গিয়ে গালিগালাজসহ হুমকি দিলেন।’
ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারকে ঘটনা জানিয়ে চিঠি লিখেছেন দীল মোহাম্মদ। বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন ক্রীড়া পরিষদের দাপ্তরিক কাজে কর্মকর্তাকে বাধাদান। ক্রীড়া পরিষদের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অবশ্য দীল মোহাম্মদকে অন্য পরামর্শও দিয়েছেন, ‘স্যার, থানায় জিডি করেন। হুমকি যখন এসেছে, সাবধানের মার নেই।’

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো মনে করে, ক্রীড়া পরিষদ অযৌক্তিকভাবে তাদের ওপর খবরদারি করে। ক্রীড়া পরিষদ বলে, ফেডারেশনগুলো ক্রীড়া পরিষদের কাছে শুধু আর্থিক ও অবকাঠামোগত সাহায্য চায়, কিন্তু তাদের কাজে কোনো স্বচ্ছতা নেই। ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মহল থেকে জানা গেছে, সেই দ্বন্দ্বেরই বহিঃপ্রকাশ আজকের এই একপশলা উত্তেজনা।