'মজা' দিয়ে শুরু টি-টোয়েন্টিই এখন 'রুটি-রুজি'

>
‘মজা’ দিয়েই শুরু হওয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এখন দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। ফাইল ছবি
‘মজা’ দিয়েই শুরু হওয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এখন দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। ফাইল ছবি
• টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ১৩ বছর পূর্ণ হলো আজ
• ২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি হয়েছিল
• প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড
• ‘মজা’ করতেই সেদিন মাঠে নেমেছিলেন ক্রিকেটাররা
• ‘মজা’টা ১৩ বছর পর পরিণত হয়েছে ক্রিকেটারদের রুটি-রুজিতে

১৩ বছর আগের ম্যাচটি ছিল ক্রিকেটের এক নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়ারই। কিন্তু সেদিন কিন্তু কেউই ভাবেনি যে বাইশগজে কত বড় বিপ্লবের শুরুটা তাঁরা চোখের সামনেই দেখতে পেলেন।

২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ক্রিকেটের ২০ ওভারের সংস্করণ—টি-টোয়েন্টি প্রথম মাঠে গড়িয়েছিল। নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের বিখ্যাত ইডেন পার্কে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সেই ম্যাচটা ‘মজা করে’ হলেও আজ ১৩ বছর পর ক্রিকেটারদের কাছে সবচেয়ে ‘আরাধ্য’ সংস্করণ যে এটিই।
‘আরাধ্য’ কারণ এটি ‘অর্থকরী’। ক্রিকেটারদের ব্যাংক-ব্যালেন্স ফুলে-ফেঁপে ওঠা যে এই টি-টোয়েন্টির কল্যাণেই। টি-টোয়েন্টির কারণেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগের প্রচলন আর হালে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগই তো ক্রিকেটারদের আয়-রোজগারের বড় মাধ্যম। জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট আর ওয়ানডে খেলে তাদের যে আয়, সেটি যে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ থেকে আয়ের তুলনায় কিছুই নয়। ২০০৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিতান্তই মজা করে যে সংস্করণের পথচলার শুরুটা হয়েছিল, কালের বিবর্তনে সেটি এখন ক্রিকেটারদের অন্যতম প্রধান রুটি-রুজিই।
সে যাই হোক, ১৩ বছর আগের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা মাঠে নেমেছিল আশির দশকের পুরোনো জার্সি পড়ে। কিউই ক্রিকেটাররা তো ছিলেন এক কাঠি সরেস। পরচুলা পড়ে নেমে দর্শক হাসানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তারা। ২০ ওভারের ক্রিকেটে অনভিজ্ঞতার কারণেই মুড়ি-মুড়কির মতো উইকেট পড়েছিল অস্ট্রেলিয়ার—৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলীয় দল যখন দিশেহারা ঠিক তখনই রিকি পন্টিং আর সাইমন ক্যাটিচ দেখিয়েছিলেন এই সংস্করণে ব্যাটিংটা কীভাবে করতে হয়। প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই সেঞ্চুরি পেয়ে যেতেন পন্টিং, কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর ৯৮ রানেই থামে তাঁর ইনিংসটি।
নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে ‘আন্ডার আর্ম’ বোলিংও দেখতে হয়েছিল দর্শকদের। এর আগে অবশ্য আম্পায়ার বিলি বাউডেনের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। বাউডেন তা বাতিল করে দিলেও ম্যাকগ্রা অবাধ্য হয়েছিলেন তাঁর। আন্ডারআর্ম বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে ১৯৮১ সালে ঘটা ট্রেভর চ্যাপেলের কুখ্যাত ঘটনাটিই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এর ‘খেসারত’ তাঁকে দিতে হয়েছিল আম্পায়ার তাঁকে ‘লাল কার্ড’ দেখিয়েছিলেন। এমন মজার ঘটনারই সাক্ষী ছিল প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি।
মজার ছলে খেলতে নামা এই ম্যাচে আরেকটু হলেই হ্যাটট্রিক করতে পারতেন মাইকেল ক্যাসপ্রোইচ। টানা দুই বলে ফিরিয়েছিলেন স্টিভেন ফ্লেমিং ও ম্যাথু সিনক্লেয়ারকে। ম্যাচসেরা পন্টিং বলেছিলেন, ‘এটি সিরিয়াসলি খেলা অসম্ভব। আমি নিশ্চিত এ খেলায় সব সময় মৌলিকত্ব থাকবে না।’
পন্টিংয়ের কথা ফলে গেছে, এই সংস্করণে মৌলিকত্ব ধরে রাখাটা অসম্ভবই হয়ে উঠছে। কিন্তু সে দিকে নজর দেওয়ার সময় আর কোথায়? অর্থ যে সংস্করণের মূলে, সেখানে মৌলিকত্ব থাকল কি থাকল না, তাতে যে কিছুই এসে যায় না!