শেষ ম্যাচে মান রক্ষা হবে তো!

>
আজ সিরিজ বাঁচানোর লড়াই বাংলাদেশের। ছবি: প্রথম আলো
আজ সিরিজ বাঁচানোর লড়াই বাংলাদেশের। ছবি: প্রথম আলো
• আজ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
• সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।
• ওয়ানডে ও টেস্ট দুই সিরিজেই হেরেছে বাংলাদেশ।

সিলেট লাক্কাতুরা চা-বাগানের পূর্ব কোণে যে টিলাটি ঠায় দাঁড়িয়ে, তার ওপর থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামটাকে অপূর্ব দেখায়। বসন্তের শুরুর শান্ত-স্নিগ্ধ সকালে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের খাঁজকাটা ছাদে কিংবা সবুজ ঘাসের বুকে আলোর নাচন নিসর্গের নতুন উপমার জন্ম দিয়ে যায়। কাল সকালে সেই সবুজ যেন আরও ঘন হয়ে অপেক্ষায়। লাল-সবুজ বাংলাদেশ দলকে প্রথমবারের মতো স্বাগত জানাতে হবে যে!

পরশু পড়তি বেলায় বাংলাদেশ দল যখন সিলেটে পা রাখে, তাদের বুকে ব্যর্থতার জমাট হতাশা। সিরিজের শেষ দৃশ্যে এসে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশাও কী ছিল না! ত্রিদেশীয় সিরিজ গেল, টেস্ট সিরিজ গেল; টি-টোয়েন্টি ড্র করে যদি মান বাঁচানো যায়। প্রকৃতির সযত্নে জমানো রূপ দেখে ‘আহা-উঁহু’ করার অবসর কোথায় তাঁদের? তা ছাড়া বিপিএলের সৌজন্যে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য তো দেখা হয়ে গেছে আগেই।
শ্রীলঙ্কার সে সুযোগটা আছে। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে এই বাংলাদেশ সফর তো এক অর্থে দুহাত ভরেই দিয়েছে। তাই ‘এখানে আগে কেন আসিনি’ স্বগতোক্তি হাথুরুকে মানায়। কাল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সাবেক কোচের কণ্ঠ থেকে মুগ্ধতা ঝরে পড়ে, ‘এটা খুব সুন্দর একটা মাঠ। অবাক হচ্ছি, সাড়ে তিন বছরে (বাংলাদেশের কোচ থাকাকালে) আমি কেন এখানে আসিনি?’
বাংলাদেশের জন্য আজকের ম্যাচই শেষ সুযোগ। সিরিজে সবই হারানোর পর ‘শেষ ভালো যার সব ভালো’য় বিশ্বাসী হওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। সিলেটে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে আসা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ এখন সেই ভালোর খোঁজে, ‘টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজেও আমরা আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু আশানুরূপ ফল পাইনি। প্রথম ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা ভালো পারফর্ম করেছে, কিন্তু বোলাররা হয়তো ঠিকমতো পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারেনি। কিন্তু এখনো একটা ম্যাচ আছে। আমরা সেটার জন্য খেলব। অনুপ্রাণিত হওয়ার চেষ্টা করছি যেন আমরা সিরিজটা অন্তত ড্র করতে পারি। প্রত্যেকটা ম্যাচই আমরা খেলেছি জেতার জন্য। চেষ্টা থাকবে এটাই, যেন আমরা ভালো একটা ফলাফল করতে পারি।’
মাহমুদউল্লাহর জন্য সাহস হতে পারেন তামিম ইকবাল। ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কের কথায় নিশ্চিত, দলে ফিরছেন সবচেয়ে ভরসার ব্যাটসম্যান, যিনি জিতলে জিতে যায় বাংলাদেশ, ‘তামিমের অবস্থা এখন অনেক ভালো। আশা করি, ফিট হয়ে যাবে। সে আগামীকাল (আজ) খেলবে ইনশা আল্লাহ।’
কিন্তু বাংলাদেশকে যে সবই নিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে আছে শ্রীলঙ্কা! শেষ ম্যাচেও জয়টা তাঁদের খুবই দরকার বলে জানালেন কোচ হাথুরুসিংহে, ‘আমরা এখানে ম্যাচ হারতে আসিনি। আমরা এসেছি জিততে। জয় দিয়ে শেষ করাটা আমাদের মনোবলকে আরও বাড়িয়ে দেবে। সিরিজটা জেতা আমাদের জন্য খুবই দরকারি এবং তারপর অন্য চিন্তা। আমাদের কাজটা আমরা ঠিকঠাক করতে পারলে র‍্যাঙ্কিং আপনাআপনি ওপরে যাবে।’
এক মাস আগে শ্রীলঙ্কা দল ঢাকায় পা রাখার বহু আগে থেকেই একটা দ্বৈরথ নিয়ে কথা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ে থাকলেও যেন তৃতীয় দলের নিয়ম রক্ষার জন্যই ছিল। হয়ে পড়েছিল শুধুই বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার এবং সেটির সবচেয়ে বড় যোগসূত্র হয়ে ছিলেন হাথুরু। এ নিয়ে সেই শুরু থেকে নানা কথা-নানা তর্কের ঝড়। আর বিতর্ক ছিল যাকে ঘিরে, তার নাম ‘পিচ’। শেষবেলায়ও সেটা পিছু ছাড়ে কী করে? সিলেটেও তাই আলোচনায় আছে উইকেট, আছে দুই দলের দুশ্চিন্তাতেই। যদিও দুই দলেরই দাবি, উইকেট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে তাঁরা অপেক্ষা করবেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, তারপর নিশ্চিত হবে একাদশ। তা ছাড়া উপায়ই বা কী? শেষ টি-টোয়েন্টির জন্য সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে দুটি ভিন্ন চরিত্রের উইকেটই যে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এটা না বললেও চলে যে, স্বাগতিক টিম ম্যানেজমেন্টের ইশারায়ই চূড়ান্ত হবে উইকেটের চরিত্র। অবশ্য সেটিতেও যে জয়ের নিশ্চয়তা নেই, তাই এই সিরিজেই দেখা গেছে কয়েকবার।
শঙ্কাটা তাই থাকেই-মিরপুর টেস্টের মতো যদি নিজেদের পাতা ফাঁদেই আটকে যায় বাংলাদেশ!