লন্ডন ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরেই ভাগ্য বদল

>
ফয়সাল মাহমুদ। ছবি-সংগৃহীত
ফয়সাল মাহমুদ। ছবি-সংগৃহীত
• ২০০৮ সালে লন্ডনে যান জাতীয় দলের ফুটবলার ফয়সাল মাহমুদ।
• ২০১১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন ফয়সাল।
• দেশে ফিরে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিকে ঘরোয়া ফুটবলে খেলেছেন ফয়সাল।
• সাফ ফুটবল উপলক্ষে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছেন তিনি।

লন্ডন! কত মানুষেরই স্বপ্নের এক জায়গার নাম। ভাগ্যান্বেষণে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই প্রচুর লোক ভিড় জমায় যুক্তরাজ্যের এই রাজধানীতে। টেমস নদীর পাড়ে পা রাখতে পারলেই যেন ঘুরে যাবে ভাগ্যের চাকা। কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই সোনায় সোহাগা নয় এই শহর। বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলার ফয়সাল মাহমুদের কথাই ধরুন, লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফিরেই নাকি বদলে গেছে তাঁর ভাগ্য।

ঘরোয়া ফুটবল অনিশ্চিত। ফলে রুটিরুজির পথও বন্ধ। তাই ভালোবাসার ফুটবলের ওপর রাগ করেই ফয়সাল ২০০৮ সালে পাড়ি জমিয়েছিলেন লন্ডনে। তিন বছর পরে ফুটবলের টানেই আবার বাংলাদেশে ফেরা। পরে ফুটবলই তাঁর জীবনে এনে দিয়েছে অর্থ, যশ ও খ্যাতি। গতকাল সে গল্পগুলোই শোনালেন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) চলমান জাতীয় দলের ক্যাম্পে বসে।

২০০২ সালে মোহামেডানে নাম লিখিয়েছিলেন খুলনার তরুণ ফয়সাল। তখন লিগে নতুন একজন নিবন্ধনকৃত ফুটবলার মাঠে নামানোর বাধ্যতামূলক সুযোগটাই পেয়েছিলেন। সে বছরই জর্জ কোটানের অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পান এ ফরোয়ার্ড। বয়সভিত্তিক দলে ভালো খেলার সুবাদে ছিলেন কোটানের ২০০৩ সাফ ফুটবল জয়ী দলের প্রাথমিক ক্যাম্পেও। প্রায় ১৫ বছর পরে সেই ফয়সাল এখনো খেলছেন লাল-সবুজ জার্সিতে। বর্তমানে বয়স ৩৩। এই সময়ের মধ্যে কত চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে।

২০০৪ সাল থেকে লন্ডনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ফয়সাল ছিলেন জাতীয় দল ও মোহামেডানের সদস্য। লন্ডনে পড়াশোনার পাশাপাশি একটা খণ্ডকালীন চাকরিতে ভালোই চলছিল। কিন্তু মনটা পড়েছিল ঢাকার ফুটবল মাঠে। সে সময় আবাহনী থেকে ফোন পান ফয়সাল। অন্যদিকে বাড়ির ছোট ছেলেটার জন্য মায়েরও মন কাঁদছিল। তাই ২০১১ সালে ঢাকা ফিরে আসেন। আবাহনীর ফোনে ঢাকা ফিরলেও ভাগ্য তাঁকে নিয়ে যায় ব্রাদার্সে। প্রায় তিন বছর ফুটবলে পুনর্জাগরণ হলো ফয়সালের কমলা জার্সিতে। এরপরে মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিকে শেখ রাসেল, মুক্তিযোদ্ধা, আবাহনী হয়ে শেষ বছরে ছিলেন মোহামেডানে। ফিরেছেন জাতীয় দলেও।

২০০৮ সালের পর ফয়সাল জাতীয় দলে প্রথম ফিরেছিলেন ২০১৫ সালে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কিরগিজস্তানের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচের জন্য ইতালিয়ান কোচ ফ্যাবিও লোপেজ ডাকেন এই উইঙ্গারকে। ২০১৫ সাফের দল থেকে বাদ পড়েন শেষ মুহূর্তে। এরপরে বিরতি দিয়ে আবার ফিরলেন ২০১৮ সাফ ফুটবল উপলক্ষে। অ্যান্ড্রু ওর্ডের জাতীয় দলে তারুণ্যের মিছিলেও ‘বয়স্ক’ ফয়সাল যেন উজ্জ্বল এক নাম।

প্রায় তিন বছর লন্ডন থাকার পরে বাংলাদেশে ফিরে প্রতিবছরই মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিকে ঘরোয়া লিগ খেলা। সঙ্গে জাতীয় দলের জার্সিও গায়ে চাপানো। সব মিলিয়ে ফয়সাল তাই মন খুলে বলতে পারেন, ‘লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফিরে আশাটাই আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ব্রাদার্সে নাম লেখানোর পর থেকেই মনে হচ্ছিল, ফুটবল দিয়েই জীবনে যা করার করতে হবে এবং আমি তা পেরেছিও।’