'সাফল্যহীন' 'তারকাহীন' ফুটবলে এত টাকা!
>
- বাংলাদেশের ফুটবলারদের দাম অনেক
- অনেক ফুটবলারই ৩০-৪০ লাখ টাকা করে পান
- খেলোয়াড়-সংকটের কারণেই এমনটি হয়
- এ নিয়ে ক্ষোভ আছে ক্লাবগুলোর মধ্যে
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯৭। পেছনে যারা আছে, তারা বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ সেটি নয়; বরং তাদের ফুটবল কার্যত মৃত বলেই এর নিচে যাওয়া সম্ভব নয়। অথচ র্যাঙ্কিংয়ের তলানিতে পড়ে থাকা এই দেশের ঘরোয়া ফুটবলেই টাকা বাতাসে উড়ে বেড়ায়। ‘তারকাশূন্য’ এ দেশের ফুটবলে খেলোয়াড়েরা দলবদলের বাজারে নিজেদের দর আকাশে তোলেন। ক্লাবগুলোও প্রতিযোগিতায় নামে কে কাকে কত দামে কিনতে পারবে, সেটি নিয়ে।
দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত না হলেও নতুন মৌসুমের আগমনী সুর এরই মধ্যে বাজতে শুরু করে দিয়েছে। প্রতি মৌসুমের মতো এবারও দল গঠনের জন্য টাকার থলে নিয়ে বাজারে নেমে গেছে ক্লাবগুলো। খেলোয়াড়েরাও চড়াতে শুরু করেছেন নিজেদের দাম। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে আগের মৌসুমে ৫ লাখ টাকার খেলোয়াড়ও নিজেদের দাম হাঁকছেন ৪০ লাখ! ক্লাবগুলোর হাতেও বিকল্প নেই। হাতে গোনা ২০ জন মোটামুটি ‘ভালো’ ফুটবলার যদি নিজেদের এমন দাম হাঁকতে থাকেন, তাহলে বাধ্য হয়েই ক্লাবগুলোকে বেশি খরচ করতে হয়। ৫ লাখ টাকার ফুটবলারকে তাই ৪০ লাখ না দিলেও ২৫ লাখ তো দিতেই হয়!
পুরো ব্যাপারেই অসম্ভব বিরক্ত ক্লাব-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। একটি ক্লাবের সভাপতি তো ক্ষোভের সঙ্গে বলেই বসলেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবলে টাকা যেন তেজপাতা।’ তাঁর মতে, মানসম্মত খেলোয়াড় কম থাকার কারণেই এমনটি হচ্ছে।
সদ্য স্বাধীনতা কাপে বিজয়ী আরামবাগের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় সুফিয়ান সুফিল এবার যোগ দিচ্ছেন প্রিমিয়ারে সদ্য নাম লেখানো বসুন্ধরা কিংসে। বড় ব্যবসায়িক গ্রুপ বসুন্ধরার মালিকানাধীন এই ক্লাবটি দল গঠনে নেমেছে টাকার থলে নিয়ে। সুফিলকে নাকি তারা নিয়েছে ৩৫ লাখ টাকায়। অথচ গত মৌসুমে তিনি আরামবাগে খেলেছিলেন ৬ লাখ টাকায়। সাইফ থেকে বসুন্ধরায় যাচ্ছেন আরেক আলোচিত ফুটবলার মতিন মিয়া। গত মৌসুমে সাইফে ১৫ লাখ টাকা পাওয়া এই ফুটবলারকেও ৩৫ লাখ দিচ্ছে বসুন্ধরা। সেই ক্লাব কর্তার সুরে অবশ্যই বলতে হয়, এ দেশের ফুটবলে টাকা সত্যিই ‘খুব সস্তা’।
বিশ্বস্ত সূত্রের মতে, এবারের মৌসুমে সবচেয়ে শক্তিশালী দল হতে যাচ্ছে প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেডই। গত মৌসুমের প্রায় সব খেলোয়াড়কেই ধরে রেখেছে তারা। সঙ্গে সাইফ থেকে যোগ দিচ্ছেন ডিফেন্ডার তপু বর্মণ ও উইঙ্গার জুয়েল রানা। সে তুলনায় বাজে অবস্থা চট্টগ্রাম আবাহনীর। লিগে তৃতীয় হওয়া এই দলটি এবার ভাঙা হাট। স্ট্রাইকার তৌহিদুল আলম সবুজ থেকে শুরু করে ডিফেন্ডার সুশান্ত ত্রিপুরা—প্রায় সবাই নতুন ক্লাব খুঁজে নিচ্ছেন। মোহামেডান অবশ্য এখনো বাজারে নামেনি। তবে শোনা যাচ্ছে জাতীয় ফুটবল দলের সর্বশেষ অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম নাকি এবার মোহামেডানে খেলবেন।
তবে দলবদলের বাজারে ভালো উদাহরণ হতে পারে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ও সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। বয়সভিত্তিক দল ও খেলোয়াড়দের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির সুফল তারা পাচ্ছে। সে কারণে তুলনামূলক যৌক্তিক অঙ্কেই তারা দল গঠন করতে পারছে। সাইফের এক কর্তা জানিয়েছেন, তাদের দুটি বয়সভিত্তিক দল থেকে ৮ ফুটবলারকে মূল দলে নেওয়া হচ্ছে। দলে যোগ দিচ্ছেন হালের তারকা জাফর ইকবাল। আরামবাগও ঠিক একই কাজ করতে যাচ্ছে। স্বাধীনতা কাপজয়ী প্রায় পুরো দলটাই তারা রেখে দিচ্ছে। যুব প্রকল্প থেকে আরও কয়েকজনকে নিলে অন্যদের চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো একটা দলই তারা গঠন করতে পারবেন বলে আশাবাদী আরামবাগের কর্তারা।
এই মৌসুমে কোন খেলোয়াড় কোন দলে | ||
খেলোয়াড় | দল | পজিশন |
জুয়েল রানা | আবাহনী লিমিটেড | উইঙ্গার |
তপু বর্মন | আবাহনী লিমিটেড | সেন্টারব্যাক |
তৌহিদুল আলম সবুজ | বসুন্ধরা কিংস | স্ট্রাইকার |
মিতুল হাসান | বসুন্ধরা কিংস | গোলরক্ষক |
মতিন মিয়া | বসুন্ধরা কিংস | ফরোয়ার্ড |
সুফিয়ান সুফিল | বসুন্ধরা কিংস | উইঙ্গার |
জিয়াউর রহমান | সাইফ স্পোর্টিং | গোলরক্ষক |
জাফর ইকবাল | সাইফ স্পোর্টিং | ফরোয়ার্ড |
আরিফুল ইসলাম | শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র | সেন্টারব্যাক |
মোহাম্মদ সোহেল | শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র | মিডফিল্ডার |
মামুনুল ইসলাম | মোহামেডান স্পোর্টিং | মিডফিল্ডার |