নতুন 'আইস র‍্যাবিটে' মুখরক্ষা মরিনহোর

নিশ্চিত গোল না পাওয়ায় পোস্টে মাথা ঠুকছেন ম্যুরিয়েল। তাঁর এই হতাশার কারণ ডি গিয়া। ছবি: এএফপি
নিশ্চিত গোল না পাওয়ায় পোস্টে মাথা ঠুকছেন ম্যুরিয়েল। তাঁর এই হতাশার কারণ ডি গিয়া। ছবি: এএফপি
  • সেভিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে ইউনাইটেড।
  • আটটি ‘সেভ’ করেছেন ইউনাইটেড গোলরক্ষক ডি গিয়া।
  • সেভিয়ার গোলপোস্টে ইউনাইটেড মাত্র একটি শট করতে পেরেছে।

বন্ধুদের নিয়ে একদিন তাস পেটাচ্ছিলেন লুই ফন গাল। আড্ডার ফাঁকে বন্ধুদের কাছে জানতে চাইলেন, অপেশাদার লিগে তাঁদের খোঁজে ভালো কোনো গোলরক্ষক আছে কি না? একজন তাঁর নাম বলেছিল। ব্যস, এরপরই কপাল খুলে গেল। ফুটবল ইতিহাসে এডুইন ফন ডার সার বোধ হয় একমাত্র বিশ্বমানের খেলোয়াড়, যাঁকে আবিষ্কার করা হয়েছিল তাস খেলায়!

খরগোশের মতো কিছুটা বেরিয়ে আসা দাঁত, বড় কান আর লম্বাটে লিকলিকে শরীর। ভীষণ চাপের মধ্যেও স্বাভাবিক! ফন ডার সারকে তাই সবাই ডাকতেন ‘আইস র‍্যাবিট’। হল্যান্ডের কিংবদন্তি এ গোলরক্ষক ক্লাব ক্যারিয়ারে সেরা সময় কাটিয়েছেন আয়াক্স ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন দুটি দলের হয়েই এবং সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় (৪০ বছর ২০৫ দিন) হিসেবে গড়েছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয়ের রেকর্ড। ডেভিড ডি গিয়া গতকাল রাতে মনে করিয়ে দিলেন ইউনাইটেডে তাঁর পূর্বসূরি এ গোলরক্ষককে!

চ্যাম্পিয়নস লিগে গত চার বছরের মধ্যে এটি ছিল ইউনাইটেডের প্রথম নক আউট পর্বের ম্যাচ। প্রিয় দলের ভালো পারফরম্যান্সের আশায় ছিলেন ‘রেড ডেভিল’ সমর্থকেরা। সেভিয়ার বিপক্ষে প্রথম লেগের এ ম্যাচে হোসে মরিনহোর দলের হারটাই হতো স্বাভাবিক ফল এবং সেটা তিন-চার গোলের ব্যবধানে হলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। কিন্তু ডি গিয়ার বিশ্বস্ত দুই হাতের কল্যাণে ইউনাইটেড ম্যাচটা হারেনি। গোলশূন্য ড্রয়ে মান বাঁচিয়েছে।

একবার কিংবা দুবার নয়, এমনকি তিনবারও নয়, আট-আটবার ইউনাইটেডকে গোল হজম থেকে বাঁচিয়েছেন এ স্প্যানিশ গোলরক্ষক। তাঁর এই আটটি ‘সেভ’-এর কল্যাণেই তো ইউনাইটেডের রক্ষণভাগে ২৫বার আক্রমণ করেও গোল পায়নি সেভিয়া। এর জবাবে মরিনহোর আক্রমণভাগ নিয়ে কথা না বলাই ভালো। স্প্যানিশ ক্লাবটির গোলপোস্টে লুকাকু-সানচেজরা মিলে রাখতে পেরেছেন মাত্র একটি শট!

আক্রমণ, গোলপোস্টে, শট এমনকি বল দখলে রাখার হারেও (৫৭%) ইউনাইটেডের চেয়ে এগিয়ে ছিল সেভিয়া। ভিনসেজ্জে মনতেল্লার দল শুধু জয়টাই পায়নি, সেটাও ডি গিয়ার কারণে। প্রথমার্ধেই দুর্দান্ত কিছু ‘সেভ’ করেছেন ২৭ বছর বয়সী এ গোলরক্ষক। এর মধ্যে প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে করা ‘সেভ’টি সম্ভবত তাঁর ক্যারিয়ারসেরা। ইউনাইটেডের বক্সে ভিক্টর লিন্ডহফ ও ক্রিস স্মলিংকে ফাঁকি দিয়ে কিছুটা জায়গা বের করেছিলেন সেভিয়া ফরোয়ার্ড লুইস ম্যুরিয়েল। ‘পয়েন্ট ব্লাঙ্ক রেঞ্জ’ তাঁর জোরালো হেড ডি গিয়া স্প্রিংয়ের মতো শূন্যে লাফিয়ে এক হাতে কীভাবে ঠেকালেন, তা সত্যিই গবেষণার বিষয়।

বিরতির পরও ইউনাইটেডের ত্রাতা হয়ে ছিলেন ডি গিয়া। এ ম্যাচে তাঁর আট ‘সেভ’ মনে করিয়ে দিয়েছে ইউনাইটেডের ‘আইস র‍্যাবিট’ ফন ডার সারকে। চ্যাম্পিয়নস লিগে ডি গিয়ার আগে সর্বশেষ ইউনাইটেডের গোলরক্ষক হিসেবে কোনো ম্যাচে আটটি ‘সেভ’ করেছিলেন ফন ডার সার। সেটা ২০১১ সালে বার্সেলোনার বিপক্ষে।

সাত বছর পর ডি গিয়া তাঁর পূর্বসূরিকে কি শুধুই মনে করিয়ে দিলেন? নাকি তাঁকে নিয়ে ফান ডার সারের একটি উক্তিও সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথে হাঁটছেন? অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ছেড়ে ২০১১ সালে ডি গিয়া ইউনাইটেডে আসার পর তাঁর সমন্ধে ফন ডার সার বলেছিলেন, ‘আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হওয়ার সব গুণই তাঁর মধ্যে আছে।’

প্রথম লেগে ডি গিয়া তাঁর সামর্থ্য দেখালেন। ফিরতি লেগ আগামী ১৩ মার্চ।