যে কারণে বেলকে বিক্রি করে দেবে রিয়াল

• রিয়াল মাদ্রিদ এ মৌসুমে ৩ হাজার ৭৮০ মিনিট ফুটবল খেলেছে।
• বেল এর মাঝে মাত্র ১ হাজার ৩৪২ মিনিট মাঠে ছিলেন।
• মাঠে খুব একটা না থেকেও রোনালদো-অ্যাসেনসিওর পর তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা বেল।

হঠাৎ করেই রিয়াল মাদ্রিদ ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বেলের। ছবি: রয়টার্স
হঠাৎ করেই রিয়াল মাদ্রিদ ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বেলের। ছবি: রয়টার্স

‘গ্যারেথ বেলকে বিক্রি করে দিচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ।’
এমন শিরোনাম কম দেখা যায়নি। এ মৌসুমের শুরুতে লেখা হয়েছে। গত মৌসুমেও হয়েছে। এবার মৌসুমে শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়ে গেছে। কাল থেকেই শুরু হয়েছে গুঞ্জন, এবার আর রক্ষে নেই। একসময় বিশ্ব রেকর্ড গড়ে দলে টানা উইঙ্গারকে বেচেই দেবে রিয়াল।
২০১৮ সালের শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে বেলের। চোট থেকেই ফিরে গোল করে এবং করিয়ে হাসি ফুটিয়েছেন সমর্থকদের মুখে। কিন্তু জানুয়ারি পার হয়ে ফেব্রুয়ারি আসতে না আসতেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এর মধ্যেই দলে বেলের জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে। বেলকে রিয়াল বিক্রি করে দেওয়ার সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের পেছনে বেশ কয়েকটি যুক্তি খুঁজে পেয়েছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম।

মাঠে অনুপস্থিতি
রিয়ালে যোগ দেওয়ার পর থেকেই চোটের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে বেলের। এ মৌসুমের প্রথমাংশে তো বেলের দেখাই মেলেনি প্রায়। এখনো পর্যন্ত মোট সময়ের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সময় (৩৫.৫ শতাংশ) মাঠে ছিলেন ওয়েলশ তারকা। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেতনভোগীর কাছ থেকে এতটা কম সার্ভিসে নিশ্চয় সন্তুষ্ট নয় তাঁর ক্লাব।

বেলকে বেঞ্চে দেখাটা এখন নিয়মিত দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স
বেলকে বেঞ্চে দেখাটা এখন নিয়মিত দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স

রোনালদোর উত্তরসূরি না হতে পারা
২০১৩ সালে নেইমারকে কিনতে ব্যর্থ হয় রিয়াল। মেসির ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি হিসেবে তাঁকে টেনে নেয় বার্সেলোনা। পাল্টা জবাবে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে বেলকে কেনেন পেরেজ। গত চার বছরে এতে রিয়ালকেই লাভবান মনে হচ্ছে। চার মৌসুমে রিয়াল তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে। উল্টোদিকে নেইমার এ সময়ে বার্সার হয়ে জিতেছেন মাত্র একটি ইউরোপ–সেরার মেডেল। কিন্তু নেইমার ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে অন্য উচ্চতায় তুলে নিয়েছেন। এ মৌসুমের শুরুতেই তাঁর জন্য ২২২ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে পিএসজি। উল্টো দিকে রাফা বেনিতেজের ‘রোনালদো নয়, বেলকে নিয়ে দল সাজানোর’ পরিকল্পনার দুই মৌসুম পরও বেল রোনালদোর উচ্চতায় যেতে পারেননি। এমনকি বেলকে কিনতে নাকি কোনো দল ৯০ মিলিয়নও দিতে রাজি নয়!

দলে জায়গা অনিশ্চিত
জিনেদিন জিদান এখনো বলছেন ‘বিবিসি’ তাঁর প্রথম পছন্দ। কিন্তু তাঁর দল নির্বাচন বলছে উল্টো কথা। পিএসজির বিপক্ষে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বেলকে রাখা হয়নি একাদশে। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নেমেও খুব একটা যে আলো ছড়িয়েছেন, তা–ও বলা যাচ্ছে না। রিয়াল বেটিসের বিপক্ষে আবার বেল জায়গা পেলেও বেনজেমাকে বসিয়ে রাখা হলো। সেদিনও বেল মাঠে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেননি। ওদিকে বেনজেমা তিন মিনিটের জন্য নেমেই গোল করেছেন।
লেগানেস ম্যাচে রোনালদোকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। এবার অন্তত একাদশে জায়গা সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল বেলের। কিন্তু এ ম্যাচেও বেল বেঞ্চে! বদলি নেমে এ ম্যাচেও তেমন ভূমিকা রাখেননি বেল। ওদিকে বেনজেমা গোল না পেলেও দলের প্রথম দুই গোলেই দারুণ ভূমিকা রেখেছেন। ইস্কো অসহযোগিতা না করলে নিজেও গোল পেতেন।

অ্যাসেনসিও ও ভাসকেজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স জিদানের জন্য একাদশ নির্বাচন কঠিন করে তুলছে। ছবি: রয়টার্স
অ্যাসেনসিও ও ভাসকেজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স জিদানের জন্য একাদশ নির্বাচন কঠিন করে তুলছে। ছবি: রয়টার্স


অ্যাসেনসিও এবং ভাসকেজের উত্থান
এ মৌসুমেই কিলিয়ান এমবাপ্পেকে হাতছাড়া করেছে রিয়াল। কারণ জিদানের দলে ‘বিবিসি’ আছে। লুকাস ভাসকেজ ও মার্কো অ্যাসেনসিওর কথা তো ভুলেই গিয়েছিলেন সবাই। রিয়ালের হয়ে গত কিছুদিন এতটাই দুর্দান্ত খেলছেন এই দুই তরুণ যে বেলের জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠেই যাচ্ছে। বিশেষ করে লেগানেসের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে এ দুজনের খেলা তো সমর্থকদের চোখে অনেক দিন লেগে থাকার কথা। ভবিষ্যৎ ব্যালন ডি’অর জয়ী হিসেবে যাকে ভাবা হচ্ছে, সেই অ্যাসেনসিওর উত্থান বেলের জায়গা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই দিচ্ছে।

বেলের শরীরী ভাষা
পিএসজির বিপক্ষে বেঞ্চে বসিয়ে রাখা পছন্দ হয়নি বেলের। সেটা তাঁকে বদলি নামানোর সময়ও বুঝিয়ে দিয়েছেন মাঠে নামতে দেরি করে। বেটিসের বিপক্ষে মাঠ থেকে তুলে নেওয়ার সময় বিরক্তি লুকাননি বেল। তবে সবকিছুই ছাড়িয়ে গেছে লেগানেস ম্যাচে। মাঠে খেলা চলাকালীন বেঞ্চ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে চলে গিয়েছিলেন বেল। বেঞ্চে থাকা অন্য খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফদের বিস্মিত দৃষ্টিই যথেষ্ট ছিল বেলের এই আচরণের মাহাত্ম্য বোঝাতে।