অথচ তাঁরাই নাকি জাতীয় দলের রক্ষণসেনা!

>
আরামে গোল করছেন বেঙ্গালুরুর লালহিমপুইয়া। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন আবাহনীর জাতীয় দলের ডিফেন্ডাররা। ছবি: সংগৃহীত
আরামে গোল করছেন বেঙ্গালুরুর লালহিমপুইয়া। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন আবাহনীর জাতীয় দলের ডিফেন্ডাররা। ছবি: সংগৃহীত
• গতকাল এএফসি বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছে আবাহনী লিমিটেড
• পুরোপুরি দ্বিতীয় সারির দল নামিয়েছিল ভারতীয় ক্লাবটি
• মূলত রক্ষণভাগের দৃষ্টিকটু ভুলেই গোল খেয়েছে আবাহনী
• গত বছর এই ক্লাবের বিপক্ষেই দশ খেলোয়াড় নিয়ে ২-০ গোলে জিতেছিল আবাহনী

‘বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা “অফ দ্য বল” ম্যান মার্কিং করতে জানেন না’ কথাটি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সব (দেশি-বিদেশি) কোচরাই বলে থাকেন। গতকাল বেঙ্গালুরুতে এএফসি কাপের ম্যাচে ভারতের বেঙ্গালুরু এফসির বিপক্ষে আবাহনী লিমিটেডের হজম করা গোলটি দেখে থাকলে কোচদের সঙ্গে একমত হওয়াটাই স্বাভাবিক।
একেবারেই ‘পাহারাহীন’ থেকে আবাহনীর জালে বল জড়িয়েছেন বেঙ্গালুরুর ড্যানিয়েল লালহিমপুইয়া। মিজোরামের এই তরুণের একমাত্র গোলেই ১-০ ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশের লিগ চ্যাম্পিয়নরা।
অথচ, দুর্দান্ত এক জয়ের সুখস্মৃতি নিয়েই গতকাল বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল আবাহনী। গত বছর এই বেঙ্গালুরুকেই ঢাকায় ২-০ গোলে হারিয়েছিল তারা। অথচ এবার রীতিমতো তারকাবিহীন বেঙ্গালুরুর কাছে হেরেই গেল তারা।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (আইএসএল) ফাইনালের জন্য নিয়মিত খেলোয়াড়দের বিশ্রামে রেখে একাদশ সাজিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর স্প্যানিশ কোচ আলবার্তো রোকা। সুনীল ছেত্রী ছিলেন না, বিশ্রামে ছিলেন তিন বিদেশিও। এমন দলের কাছে হেরে যাওয়াটাও তো একটি দেশের লিগ চ্যাম্পিয়নদের জন্য লজ্জার।
আবাহনীর গোল খাওয়ার দৃশ্যটা দেখলে লজ্জাই পেতে হবে। এএফসি কাপের মতো আসরে এমন গোল খুব বেশি দেখাও যায় না। একেবারে বিনা বাঁধায় ভলিতে বল জালে জড়ালেন লালহিমপুইয়া। আবাহনীর রক্ষণভাগ তা শুধু তাকিয়ে দেখেছে। অথচ গতকাল পাঁচ ডিফেন্ডার নিয়ে নেমেছিল তারা।
ডান প্রান্ত থেকে এলান জর্জের ক্রস আবাহনীর তিন ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন বাদশা, এলিসন উদোকা ও মামুন মিয়ার সামনে থেকে আরামে হেড করে বক্সের মধ্যে নামিয়ে দিয়েছেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড ড্যানিয়েল সার্গোভিয়া। সে বলে ডিফেন্ডার নাসিরউদ্দিনের সামনে থেকে দৌড়ে গিয়ে সাইড ভলিতে জালে জড়িয়ে দিলেন লালহিমপুইয়া। তাকে যে মার্ক করতে হবে, তা যেন আবাহনীর রক্ষণভাগ বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। পরে একজন আরেকজনের দিকে আঙুল তুলে দোষারোপ করলেন। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
রক্ষণভাগের দৃষ্টিকটু ভুলে যে গোলটা হজম করতে হয়েছে, তা মেনে নিলেন আবাহনী কোচ সাইফুল বারী টিটুও, ‘আমরা ম্যান মার্কিং করিনি। আবার কভারিংয়েও যাইনি। একটা ভুল করেছে, একটাই গোল। এ ছাড়া বেঙ্গালুরুর তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারিনি। তবে হারের জন্য কেবল রক্ষণভাগকে দায়ী করতে চাই না। দোষটা আমাদের পুরো দলের।’
অথচ এমন দৃষ্টিকটু ভুল সাজে না আবাহনীর এই তিন ডিফেন্ডারের। টুটুল হোসেন বাদশা, মামুন মিয়া, নাসিরউদ্দিন—তিনজনই জাতীয় দলের ডিফেন্ডার। ২৭ মার্চ লাওসের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে বাদশা ও নাসিরউদ্দিনের দলে থাকাটা এক প্রকার নিশ্চিতই বলা যায়। আর মামুনও জাতীয় দলে খেলেছেন দীর্ঘদিন।
আবাহনীর স্ট্রাইকার এমেকা ডার্লিংটনের ফিটনেস নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বেঢপ শরীর নিয়ে কীভাবে আন্তর্জাতিক আসরে খেলেন এমেকা, এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা শুরু হয়েছে। এমেকার এমন ফিটনেস নিয়েও টিটুর অসন্তুষ্টি, ‘ছুটি কাটিয়ে এমেকা যখন ক্লাবে আসছে, তখন তো ওর আরও খারাপ অবস্থা ছিল। বাড়িতে গিয়ে একেবারেই অনুশীলন করেনি সে।’
এবারের এএফসি কাপে আবাহনীর এটি টানা দ্বিতীয় হার। প্রথম ম্যাচে আকাশি-নীলরা ঘরের মাঠে মালদ্বীপ ক্লাব নিউ রেডিয়ান্টের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছে।