নাটকীয় জয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

এভাবে কেন জিতল বাংলাদেশ? কারণ, এমন জয় না হলে মনে ঠিক দাগ রেখে যায় না। উত্তেজনায় যদি হাত-পাই না কাঁপল, তবে আর সে জয়ের মূল্য কী! এ কারণেই শেষ ওভারের পঞ্চম বল পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখল বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর ঠান্ডা মাথা বাংলাদেশকে এনে দিল আরেকটি স্মরণীয় জয়। ২ উইকেটের জয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ।

জয়ের পথে হয়তো ছুটছিল না, কিন্তু ঠিকই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। ১২ ওভার শেষেও প্রয়োজনীয় রানরেট থেকে পিছিয়ে পড়েনি বাংলাদেশ, হাতে ৮ উইকেট। এ ম্যাচে নিরঙ্কুশ ফেবারিট তো বাংলাদেশ! কিন্তু কীভাবে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়তে হয়, সেটাই দেখিয়ে দিলেন তামিম-মুশফিকরা। মাত্র ১৫ বলের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। ৩ উইকেটে ৯৭ রান থেকে হঠাৎ করেই ৫ উইকেটে ১০৯ বাংলাদেশ।
অথচ ১২ ওভার পর্যন্ত শুধু সুখবরই ঘোরাঘুরি করছিল বাংলাদেশ দলের চারপাশে। মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এক হাজার রান ছুঁয়েছেন মুশফিক। অপর প্রান্তে এই মাইলফলকে সবার আগে পৌঁছান তামিম। ১২ ওভার শেষে দলের স্কোর ২ উইকেটে ৯৫। ইনিংসের ওই অবস্থায় শ্রীলঙ্কার স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ৬৮ রান। ২৭ রানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ তো জয়ের আশা করতেই পারে।
কভার দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে মুশফিক ফেরার পরও আশা হারায়নি বাংলাদেশ, তামিম যে ছিলেন। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান ইতিহাস সৃষ্টি করা সেই ইনিংসের পর আর কখনো ফিফটিও করতে পারেননি। আজ সে দুঃখটাও মিটল। ৪১ বলে ফিফটি করা তামিম কিনা আউট পরের বলেই! কোনো চার–ছক্কা না মেরে ১০ রান করা সৌম্য আউট ৪ বল পরেই। তবে কি পথ হারাল বাংলাদেশ?
৩১ বলে ৫১ রানের সমীকরণ মাথায় নিয়ে মাঠে নামলেন সাকিব আল হাসান। বিদায় নিলেন দলকে ১২ বলে ২৩ রানের সমীকরণে। এর মাঝে ৯ বলে ৭ রানই করতে পেরেছেন সাকিব। দলকে জেতানোর সব দায়দায়িত্ব সিরিজের আগের তিন ম্যাচের অধিনায়কত্ব করা মাহমুদউল্লাহর কাঁধেই পড়ল। মাহমুদউল্লাহও করলেন তাঁর সর্বোচ্চ। শেষ ওভারে ১২ রানের সমীকরণ, প্রতি বলে দুই রান। সমস্যা একটাই, স্ট্রাইকে যে নেই মাহমুদউল্লাহ। প্রথম দুই বল নষ্ট হলো, কোনো রান এল না।

এরপরই ম্যাচের আসল নাটক। প্রথম দুই বলে যে পরপর দুটি বাউন্সার দিয়েছেন উদানা। তারপরও ওয়াইড দিলেন না শ্রীলঙ্কান আম্পায়ার! অন্যদিকে লেগ আম্পায়ার নো বলের জন্য হাত তুলতে তুলতেও নামিয়ে নিলেন হাত! এ নিয়ে মাঠের মধ্যে মাহমুদউল্লাহ কথা বলছেন আম্পায়ারদের সঙ্গে। পানি নিয়ে ভেতরে ঢোকা অতিরিক্ত ফিল্ডার সোহান ও রাহী তর্কে জড়ালেন শ্রীলঙ্কান ফিল্ডারদের সঙ্গে। এর মধ্যেই মাঠের পাশে নেমে এলেন সাকিব আল হাসান। ব্যাটসম্যানদের চলে আসার ইঙ্গিতও দিয়ে দিয়েছিলেন সাকিব!

মাঠে ছেড়ে উঠে আসার ঘটনা ঘটাবে বাংলাদেশ? তাহলে যে ডিসকোয়ালিফাইড হয়ে ছিটকেই যাবে ফাইনাল থেকে। এই বিতর্ক গড়াত আরও বহুদূর। মাথা ঠান্ডা করে মাহমুদউল্লাহকে মাঠে থাকতে বললেন দলের ম্যানেজার। তবে ঠান্ডা মাথার বিষয়টি আসলে দেখালেন মাহমুদউল্লাহই। পরের বলেই চার মারলেন। তার পরের বলেই দুই। ২ বলে ৬ রান দরকার বাংলাদেশের। অসাধারণ এক ফ্লিক, এক বল হাতে রেখেই জয় পেল বাংলাদেশ। ১৮ বলে ৪৩ রানের চেয়ে বড় ইনিংস হয়তো আরও খেলবেন মাহমুদউল্লাহ, কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস বোধ হয় আজই খেলে ফেলেছেন তিনি!