কী হয়েছিল বললেন সাকিব

এমন আগুনে ম্যাচ কবে দেখেছে প্রেমাদাসা? নানা বাঁক পেরিয়ে ম্যাচের একেবারে শেষ ওভারে ঘটনার ঘনঘটা। অপরাজিত ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ ছুটে গিয়ে স্কয়ার লেগের আম্পায়ারের কাছে জানতে চাইলেন, কেন পরপর উদানার দুই বাউন্সারে নো বল ডাকা হলো না?

দুই দুলের খেলোয়াড়দের মধ্যে শুরু হয়ে গেল কথার লড়াই। তাতে যোগ দিলেন সাইড বেঞ্চের খেলোয়াড়েরাও। উত্তেজনায় ঠাসা পুরো প্রেমাদাসা। ৩৫ হাজার দর্শকের গগনবিদারী চিৎকারের চেয়ে বেশি জোরালো হয়ে উঠল সাকিব আল হাসানের চিৎকার-রিজার্ভ আম্পায়ারের কাছে বাংলাদেশ অধিনায়কের আবেদন, কেন নো বল দেওয়া হলো না, কেন? যথার্থ উত্তর না পেয়ে কঠিন এক সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, দুই ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ আর রুবেল হোসেনকে ড্রেসিংরুমে ফিরে আসার ইঙ্গিত করেছিলেন। পরিস্থিতি ঠান্ডা করলেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ। দুই ব্যাটসম্যানকে ম্যাচ শেষ করে আসার নির্দেশ দিলেন। সেনা পাহারায় ডাগ আউট থেকে সাকিবকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো ড্রেসিংরুমে।

সাকিব আল হাসান। ছবি: রানা অাব্বাস
সাকিব আল হাসান। ছবি: রানা অাব্বাস

পরে যা হলো তা ইতিহাস! ১ বল বাকি থাকতে উদানাকে কবজির মোচড়ে ফ্লিক করে স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে গ্যালারিতে পাঠালেন। মাহমুদউল্লাহ মিলিয়ে দিলেন সব সমীকরণ। শুরু হলো বাংলাদেশের দলীয় নাগিন নৃত্য! তাতে যোগ দিল কোচিং স্টাফ, টিম ম্যানেজমেন্টও! সাকিব মাঠে ঢুকলেন গায়ের জার্সি খুলে—সব উত্তেজনা, তেজ যেন তাতে বাষ্প হয়ে বেরোল! কিন্তু আগুন তখনো নেভেনি! ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে আবার কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে লেগে গেল সাব্বির রহমানের। পরিস্থিতি সামাল দিলেন তামিম ইকবাল-মাহমুদউল্লাহ। ২২ গজে নখ কামড়ানো উত্তেজনা, মাঠের বাইরে আরেক লড়াই—কী এক ম্যাচ দেখল প্রেমাদাসা!

স্বাভাবিকভাবে সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে এ ঘটনাই এল। শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা কুশল পেরেরা বললেন, এটা নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। সাকিবও তা-ই। বারবার একই বিষয়ে প্রশ্ন হচ্ছে বলে বাংলাদেশ অধিনায়ক একবার বললেন, ‘এত ভালো একটা ম্যাচ হয়েছে, সেটা নিয়েই কথা বলি। ৪০ ওভারের একটা ওভার নিয়েই বেশি কথা বলছি। বাকি ৩৯ ওভার নিয়ে কথা বলি।’
চাইলেই কি এড়ানো যায়? সাকিবকে বলতে হলো, কেন, কীভাবে এ ঘটনার সূত্রপাত, ‘যেটা হয়েছে যে ওখানে স্কয়ার লেগে আম্পায়ার কল (নো বল) করেছিল। তারা আলোচনা করে সেটা আবার বাতিলও করেছে। এটা আমার কাছে মনে হয় না সঠিক সিদ্ধান্ত। জানি না প্রথমটায় বাউন্সার কল করেছিল কি করেনি। দ্বিতীয়টি যখন হয়েছে, আম্পায়ার নো বল কল করেছে। সবারই ভুল হতে পারে। আমাদের উচিত দল হিসেবে খেলা। আমাদের উচিত এগিয়ে যাওয়া।’

তবে শ্রীলঙ্কা দলের সঙ্গে এমন উত্তেজনার মুহূর্ত তৈরি হবে ভাবতেও পারেননি সাকিব, ‘মাঠের ভেতরের জিনিস মাঠে থাকা উচিত। আমরা খুবই ভালো বন্ধু। শুধু মাঠেই নয়, দুই ক্রিকেট বোর্ডের সম্পর্কটা অনেক ভালো। বিপদে-আপদে সবাই সবাইকে সহায়তা করে। শ্রীলঙ্কার অনেক খেলোয়াড় আমাদের লিগে খেলে, বিপিএলে খেলে। ওদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক। তবে মাঠে চাইব আমার দল জিতুক। দলের জয়ের জন্য আমি যেকোনো কিছুই করতে পারি। আশা করি, দুই দল এভাবেই বিষয়টা নেবে। এটা মাঠের ভেতরই থাকবে।’

শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মাঠে অনেক লড়াই হয়েছে, এমন উত্তেজনা সাধারণত কমই দেখা যায়। কিন্তু আজ কেন অমন অগ্নি বিস্ফোরণ হলো? অনেক কারণ আছে। দেশের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে টানা তিন সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে চলে যাওয়ায় বাংলাদেশ জিততে ভুলে গেছে, এমন নেতিবাচক কথাও হজম করতে হয়েছে খেলোয়াড়দের। শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে টানা দুবার হারিয়ে, নিদাহাস ট্রফিতে দর্শক বানিয়ে ফাইনালে উঠে মনের সব যন্ত্রণাই হয়তো লাঘব করেছেন সাকিবরা! আর তাতে একটু আগুনের হলকা বেরিয়েছে, এই যা!