সাকিবের ভাবনায় শুধুই ভারত

>
  • শ্রীলঙ্কা ম্যাচ পেছনে ফেলে বাংলাদেশের ভাবনায় শুধু ফাইনাল।
  • সাকিব বলছেন, ফাইনাল কিংবা প্রতিপক্ষ ভারত ভেবে তাঁরা কোনো চাপ নেবেন না।
  • সাকিবের লক্ষ্য শিরোপা জেতা।

কলম্বোর আবহাওয়া বোঝা বেশ মুশকিল! দুপুরে ভারতীয় দল যখন প্রেমাদাসায় অনুশীলন করতে এল, মাথার ওপর সূর্যটা তখন বেশ তেজ ছড়াচ্ছে। বিকেল চারটায় বাংলাদেশ যখন অনুশীলন করতে এল, সূর্য মামা উধাও! ঈশান কোণে কালো মেঘের দৌরাত্ম্য। আকাশে মেঘ থাকতে পারে, সাকিব আল হাসানের মুখে সেটি নেই। সতেজ, সজীব দেখাল বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ককে।

ঐচ্ছিক অনুশীলন, দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই হোটেলে নিজেদের মতো সময় কাটিয়েছেন। কাল যাঁরা ম্যাচ খেলেছেন, তাঁদের মধ্যে শুধু সাকিবই এলেন একটু ঝালিয়ে নিতে। উত্তাপ, উত্তেজনা আর স্নায়ুচাপকে জয় করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অঘোষিত ‘সেমিফাইনাল’ পেরিয়ে বাংলাদেশ পা রেখেছে ফাইনালে। ভারতীয় সাংবাদিকেরা অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে কালকের ম্যাচের ঘটনা নিয়েই প্রশ্ন করলেন সাকিবকে, বিশেষ করে ড্রেসিংরুমের দরজার কাচ ভাঙল কীভাবে। ‘যা চলে গেছে, গেছে, এটি নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না’—হাসিমুখে এড়িয়ে গেলেন সাকিব। শ্রীলঙ্কার ম্যাচ ভুলে তাঁর ভাবনায় এখন শুধুই ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল।

ফাইনাল মানে আবারও স্নায়ুচাপের পরীক্ষা, যেটিতে বাংলাদেশ সব সময়ই বড় গোল্লা পেয়ে এসেছে। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে যে চারটি ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ, প্রতিটিতেই হেরেছে। প্রতিটিই নিজেদের দর্শকদের সামনে, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো একটা সিরিজের ফাইনাল খেলতে নামছে বাংলাদেশ, কাল কী আশা নিয়ে মাঠে নামবে তারা? সাকিব প্রশ্নটা শুনে হাসলেন। প্রশ্নকর্তাকে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘কী আশা করতে পারি? আপনি কী আশা করেন, বলুন। সবাই জানি আমরা কী আশা করছি। কি জানি না?’

অবশ্যই জানে। কিন্তু জয়টা পেতে যে বাংলাদেশকে আরেকটা রূপকথা লিখতে হবে প্রেমাদাসায়। প্রতিপক্ষের নাম আবার ভারত, টি-টোয়েন্টিতে যাদের সাতবার মুখোমুখি হয়ে একবারও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এবার কি বদলাবে ছবিটা? ‘আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। একইভাবে আরেকটা ম্যাচ মাত্র, যেটা আমরা জেতার জন্য মাঠে নামব। এবং সর্বোচ্চ চেষ্টাই করব জেতার’—সাকিব আশা দিচ্ছেন।

মাত্র এক দিনের বিরতি। এক দলকে ধরাশায়ী করতে না করতেই সামনে আরেক প্রতিপক্ষ। ফাইনাল নিয়ে ভাবার খুব বেশি সময়ও নেই। তবে যে আশার কথা শুনিয়েছেন, সেটা পূরণের একটা উপায় জানা আছে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের, ‘আমরা চেষ্টা করছি যতটা নির্ভার থাকা যায়, মনটা উন্মুক্ত রাখা যায়। আমার কাছে মনে হয়, টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ভালো ফল পেতে মনকে উন্মুক্ত রাখা এবং চাপমুক্ত থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি দলের সবাই কোনো চাপ নেবে না। শুধু খেলার প্রতি মনোযোগ ধরে রাখবে। প্রক্রিয়াটা ঠিক রাখার চেষ্টা করব।’

শ্রীলঙ্কা সফরের আগে নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশ দল নিজেদের ‘আন্ডারডগ’ বললেও জানিয়ে রেখেছিল, তাদের লক্ষ্য ফাইনাল। কলম্বোর বিমান ধরার আগে, এমনকি প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে হারের পরও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ আশা হারাননি। বলেছেন, তাঁদের লক্ষ্য অবশ্যই ফাইনাল।

বাংলাদেশ ফাইনালে উঠেছে। এখন কি তারা বলতে পারে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়ে গেছে! মুখে স্নিগ্ধ হাসি ফুটিয়ে সাকিব বললেন, তাঁদের এখনো কিছু পথ হাঁটা বাকি, ‘ওই সময় রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) অধিনায়ক ছিলেন। তিনি একটা লক্ষ্য পূরণ করে দিয়ে গেছেন। আমার সামনে নতুন লক্ষ্য। আমার জন্য লক্ষ্যটা হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আগ থেকে কেউ বলতে পারবে না ফাইনাল খেলব বা চ্যাম্পিয়ন হব। শুরুতে লক্ষ্য এমনই থাকে। আপনিও কোনো লক্ষ্য ঠিক করলে এভাবেই করবেন, ওলটপালট কিছু ঠিক করবে না।’

দেখলে বড় স্বপ্নই দেখতে হয়। দেশের মাঠে তিনটা সিরিজ হারের পর বাংলাদেশের সামনে যদিও বড় স্বপ্ন দেখা কঠিনই ছিল। কিন্তু এখন তো দেখাই যায়! কিন্তু কলম্বোর আকাশ যেভাবে কালো হয়ে আছে (শ্রীলঙ্কার বিদায়ের শোকে কি না কে জানে!), কাল ফাইনালে বৃষ্টি বাগড়া হলে কী কবে? শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট জানাল, কোনো রিজার্ভ ডে নেই। বৃষ্টিতে ভেসে গেলে কিংবা ম্যাচ টাই হলে দুই দলকেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হবে। মজাটা হচ্ছে, মেঘ-বৃষ্টি যতই থাক, সেটি ঠিকই উধাও হয়ে যায় ম্যাচের সময়!