এবার সাকিবের পালা

ফাইনালের পরিকল্পনা সাজাতে ব্যস্ত বাংলাদেশ কোচ ওয়ালশ ও অধিনায়ক সাকিব।  ছবি: প্রথম আলো
ফাইনালের পরিকল্পনা সাজাতে ব্যস্ত বাংলাদেশ কোচ ওয়ালশ ও অধিনায়ক সাকিব। ছবি: প্রথম আলো
>
  • মুশফিক ম্যাচ জিতিয়েছেন, মাহমুদউল্লাহও।
  • ফাইনালে বাংলাদেশকে জেতাবেন সাকিব?

আত্মবিশ্বাসী? সে তিনি সব সময়ই। 

নির্ভার হওয়ার চেষ্টা? হবে হয়তো।
গত দুই দিনে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসানকে দেখে প্রশ্নগুলো মনে আসতে বাধ্য। বেশ হাসি-খুশি। এই একমুহূর্তে নির্লিপ্ততা, তো পরমুহূর্তে একেবারে তাঁর ক্ষুরধার ক্রিকেট-মস্তিষ্কের প্রমাণ দেওয়া উত্তর। সাকিব এমনই। তবে এই নির্লিপ্ত, ফুরফুরে সাকিবই কাল দিয়ে গেলেন বাংলাদেশকে সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতিটা।

টুর্নামেন্টে শুরু থেকেই বাংলাদেশ বলে আসছিল, ফাইনালে ওঠাই লক্ষ্য। সেটি পূরণ হয়ে গেছে। আজ ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে লক্ষ্য কী, সেটি তো আর বলে দিতে হয় না। এত কষ্ট করে, স্নায়ুর পরীক্ষা দিয়ে ফাইনালে উঠে কেউ নিশ্চয়ই রানার্সআপ হতে খেলে না। সাকিবও লক্ষ্যটা জানালেন সেভাবেই। তবে ওই যে, স্বভাবসুলভ হাসিতে।

টুর্নামেন্টে প্রথম তিন ম্যাচে অধিনায়ক ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। পরশু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিনই হঠাৎ উড়িয়ে আনা হয়েছিল সাকিবকে। এসেই ম্যাচে খেললেন, আর দলের মূল অধিনায়ক তো তিনি এমনিতেই। মাহমুদউল্লাহর হাত থেকে ব্যাটনটা নিয়ে নিজের আশার কথা জানালেন এভাবে, ‘টুর্নামেন্টের শুরুর সময় রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) অধিনায়ক ছিলেন। তিনি একটা লক্ষ্য পূরণ করে দিয়ে গেছেন। আমার সামনে নতুন লক্ষ্য। আমার লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আগে থেকেই তো কেউ বলতে পারে না যে ফাইনাল খেলব বা চ্যাম্পিয়ন হব। শুরুতে লক্ষ্য এমনই থাকে।’

লক্ষ্য অর্জনে বাধা অবশ্য কম নয়। একে ভারতকে কখনো টি-টোয়েন্টিতে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। জিততে পারেনি কখনো ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালও। কিন্তু সাকিবের কাছে ওসব পাত্তা পেলে তো! যে উত্তরটা দিলেন, সেটিই হয়তো সংবাদ সম্মেলনে তাঁর এমন নির্ভার থাকার রহস্য, ‘আসলে এত কিছু আমরা এখনো চিন্তা করিনি। এখনো দলের মিটিং হয়নি। এই ম্যাচ নিয়েও কথা হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি যতটা নির্ভার থাকা যায়, মন যতটা ফুরফুরে রাখা যায়। টি-টোয়েন্টিতে ভালো করার জন্য চাপমুক্ত থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আশা করি, কেউ কোনো রকমের চাপ নেবে না।’

চাপ না নিক। কিন্তু মানসিক ধকলটা কি কেটেছে? এক দিন আগেই অমন উত্তেজনার একটা ম্যাচ হলো। পরতে পরতে রং বদলানো ম্যাচটা ক্রিকেট-দক্ষতা তো বটেই, নিয়েছে স্নায়ুর পরীক্ষাও। সেটির পর এত দ্রুত এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আবার মনোযোগ ফেরাতে সমস্যা হবে না? ‘আমার কাছে মনে হয় না কঠিন কোনো ব্যাপার। হ্যাঁ, এটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, তবে শুধুই আরেকটা ম্যাচই। যেটা আমরা জেতার জন্য মাঠে নামব’-সাকিবের উত্তর।

জেতার পথে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অস্ত্রও তিনিই। একে তো সাকিব খেলা মানে বাংলাদেশের ব্যাটিং-বোলিংয়ে একজন বেড়ে যাওয়া। তার ওপর আইপিএলে এত বছর খেলার অভিজ্ঞতার সুবাদে ভারতের এই দ্বিতীয় সারির দলেরও সবার ব্যাপারে ভালো জানাশোনা আছে। এখানেও সাকিবের বিকল্প ব্যাখ্যা, ‘এখনকার দিনে এত প্রযুক্তির কারণে আমাদের কিন্তু সবাই সবার খেলা সম্পর্কে ধারণা থাকে। তাই সব সময় পরিকল্পনা করলেও সেটা সফল হয় না। অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা করা হবে ওদের বিরুদ্ধে। ওরা অনেক দিন ধরে টানা খেলছে, আমরা ওদের অনেক ম্যাচ দেখেছি। তাই আমাদের সবার ভেতরে ওদের সম্পর্কে ধারণা আছে, ওরা কী করতে পারে, না পারে।’

এত সহজভাবে ভাবছেন যখন, ভারতকে আজ আটকে দেওয়ার পরিকল্পনাটাও তাঁর কাছে তো সহজই হবে। সেটি এই, ভারতের খেলোয়াড়দের স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গাগুলো আটকে দিতে হবে। শুরুটা ভালো করতে হবে। আর শেষ পর্যন্ত ওভাবে টেনে নিতে হবে। আহা, কী নিখুঁত পরিকল্পনা!

কিন্তু পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নে তফাত আছে বলেই তো ভারতের সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে হার-জিতের রেকর্ডে এমন ব্যবধান। তার ওপর ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাতে এই রেকর্ডটা বড্ড করুণ দেখায়। ওই প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণেই কি খেলোয়াড়েরাও ভারতের বিপক্ষে চাপটা বেশি অনুভব করেন? সাকিবের ব্যাখ্যা, ‘সবার চিন্তাধারা এক নয়। কেউ প্রভাবিত হয়, কেউ হয় না। যদি মনে করি ফাইনাল অনেক বড় ম্যাচ, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ, তাহলে চাপ। এগুলো চিন্তা না করে বলের সঙ্গে ব্যাটের লড়াই হবে, সেটাই ভাবা ভালো। সেদিকেই মনোযোগ থাকবে।’

তাতে যদি নির্ভার থাকা যায়, তো ভালোই।