যে পাঁচ ভুল করা যাবে না বাংলাদেশের

সাকিবকে ফাইনালেও সামনে থেকেই দলকে নেতৃত্ব দিতে হবে। ছবি: প্রথম আলো
সাকিবকে ফাইনালেও সামনে থেকেই দলকে নেতৃত্ব দিতে হবে। ছবি: প্রথম আলো
  • ফাইনাল জিততে ভুল এড়ানোর বিকল্প নেই
  • টি-টোয়েন্টিতে ভুল করলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন

ত্রিদেশীয় সিরিজে চার ম্যাচের দুটিতে জিতে ফাইনালে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। দুটি ম্যাচই তাঁরা হেরেছে ভারতের বিপক্ষে। ফাইনালে এবার সেই ভারতেরই মুখোমুখি বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে আগের সাতবারের লড়াইয়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ কখনোই জিততে পারেনি। কিন্তু এটা নতুন ম্যাচ, তাই জয়ের আশা থাকবেই। সেই জয় তুলে নিতে হলে টুর্নামেন্টের আগের চার ম্যাচে করে আসা বেশ কিছু ভুল এড়াতে হবে সাকিব আল হাসানের দলকে। আসুন, জেনে নিই সেই ভুলগুলো:

পাওয়ার প্লের দুঃস্বপ্ন
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১৪ রান তাড়া করে জয়ের ম্যাচটা ছাড়া বাকি তিন ম্যাচেই প্রথম ৬ ওভারের মধ্যে হয় দুই ওপেনার কিংবা ২ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ ব্যাটিং অর্ডারের এ সমস্যা অবশ্য নতুন কিছু নয়। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে উইকেট হারানোর সমস্যা আরও বেশি করে চোখে পড়েছে। ৫.৪ ওভারের মধ্যে তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার ও লিটন দাসকে তুলে নিয়েছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর।

পাওয়ার প্লেতে ব্যাটসম্যানদের শট খেলার জায়গা দিতে ভীষণ কিপটে ভারতের এ স্পিনার। ব্যাটসম্যানকে চাপে রাখতে ভালোবাসেন। ফাইনালে বাংলাদেশকে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ চার-ছক্কায় রান তুলতে বিশ্বাসী। সিঙ্গেলস না পেলে চাপে পড়ে উইকেট দেওয়ার অভ্যাসটাও পুরোনো। ভালো শুরুর জন্য সাকিবের দলকে এ ভুল করা চলবে না।

‘ডট’ বল আতঙ্ক
টি-টোয়েন্টি মানেই পুরোপুরি ধুন্ধুমার ব্যাটিং নয়। খেলাটা আসলে মস্তিষ্ক খাঁটিয়ে রান তোলার। সব সময় রানের চাকা সচল রাখার চ্যালেঞ্জ। তা করতে গিয়ে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানেরা চার-ছক্কার ওপর নির্ভরশীল। দেখা যায়, ওভারে প্রথম চার-পাঁচ বলে কোনো রান নিতে না পেরে পরের বলে ছক্কা হাঁকাতে মরিয়া!
ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের কথা ভাবুন—আগে ব্যাটিং করে ৮ উইকেটে ১৩৯ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। এই ইনিংসে ‘ডট’ বল ৫৫টি! ন্যূনতম ২০টি ‘ডট’ বল কম হলেও সেই ম্যাচে ভারত কিন্তু চাপে থাকত। রোহিতের দল ম্যাচটা জিতেছে ৮ বল হাতে রেখে। ভারতের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচেও ৪৬ ‘ডট’ দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩ উইকেটে ১৭৬ রান তুলেছিল ভারত। জবাবে ৬ উইকেটে ১৫৯ রানে থেমেছিল বাংলাদেশ। অর্থাৎ ১৫টি ‘ডট’ বল কম দিলেই বাংলাদেশ ম্যাচটা জিতে যেত। ফাইনালে এই ‘ডট’ বলের সংখ্যা যত কমানো যাবে, বাংলাদেশের জন্য ততই লাভ।

শেষ ৮ ওভারে ‘উদারহস্ত’
বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ২১৪ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। সেই ইনিংসে ১২ ওভার শেষে তাঁদের রান ছিল ১ উইকেটে ১২৩। শেষ ৮ ওভার মানে ৪৮ বলে ৯১ রান তুলেছে শ্রীলঙ্কা। এরপর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচেও শেষ ৮ ওভারে উদারহস্তে রান দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩ উইকেটে ১৭৬ রান করা ভারত শেষ আট ওভারে তুলেছে ৯২ রান। শ্রীলঙ্কাকে যে ম্যাচে হারিয়ে সাকিবরা ফাইনালে উঠলেন সে ম্যাচেও শেষ ৮ ওভারে ৯১ রান চলে গেছে।
ভারতের ব্যাটিং অর্ডার এমনিতেই অনেক শক্তিশালী। শেষ দিকে ঝোড়ো গতিতে রান তোলার ব্যাটসম্যান তাঁদের আছে। ফাইনালে তাই শেষ ৮ ওভারে আঁটসাঁট বোলিংয়ের চ্যালেঞ্জ মেহেদী হাসান-রুবেল হোসেনদের।

পেসারদের চ্যালেঞ্জ
ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে মোস্তাফিজুর রহমান যুগ্মভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৬) উইকেটশিকারি হলেও রান দেওয়ায় সবার ওপরে! ৪ ম্যাচে ১৬ ওভারে ১৫৬ রান দিয়েছেন। ওভারপ্রতি রান দেওয়ার হার ৯.৭৫। বাংলাদেশের স্ট্রাইক বোলারদের হাল যদি হয় এমন, ফাইনালে তাহলে ভারতের রানের চাকা আটকানো সম্ভব কীভাবে? মোস্তাফিজকে তাই ফাইনালে আঁটসাঁট বোলিং করতেই হবে।

অবশ্য সমস্যা শুধুই মোস্তাফিজের নয়, দলের বাকি পেসারদেরও। শুধু রুবেল হোসেন মাঝেমধ্যে জ্বলে উঠেছেন। কিন্তু স্পিনারদের তুলনায় দলের পেসাররা সমন্বিতভাবে বেশি রান দিয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১১.৪ ওভার বোলিং (তাসকিন, রুবেল, মোস্তাফিজ ও সৌম্য) করে ৯১ রান দিয়েছিলেন পেসাররা। সে তুলনায় স্পিনাররা ৭ ওভারে দিয়েছেন ৪৭ রান। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা যে ম্যাচে ২১৪ রান করল, সেখানেও উদারহস্তে রান দিয়েছেন পেসাররা—১২ ওভারে ১৪৪! স্পিনাররা ৮ ওভারে দিয়েছেন ৬৬ রান।
ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান পেসারদের যম। ফাইনালে তাঁদের আটকে রাখতে সঠিক লাইন-লেংথে বোলিংয়ের বিকল্প নেই।

চাপ নয় ইতিবাচক মানসিকতা জরুরি
প্রতিপক্ষ যে দলই হোক না কেন, ফাইনাল মানেই বড় ম্যাচ। চাপের ম্যাচ। সেখানে আজকের ফাইনালে প্রতিপক্ষ তো ভারতের মতো শক্তিশালী দল। এর আগে এশিয়া কাপের ফাইনালেও একবার ভারতের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ হেরেছে। পাশাপাশি দুইয়ের অধিকসংখ্যক দল নিয়ে আয়োজিত টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত চারবার ফাইনালে উঠেও বাংলাদেশ জিততে পারেনি। অতীতের এসব ব্যর্থতা মুছতে আজকের ফাইনালে ভালো খেলার অতিরিক্ত চাপ নিয়ে নিতে পারেন খেলোয়াড়েরা। যেটা হিতে-বিপরীত হতে পারে।
এটা মনে রাখা জরুরি, ফাইনালের মোড়কে সম্পূর্ণ নতুন একটা ম্যাচ। যেখানে দুই দলেরই সমান সুযোগ। যে দল কম ভুল করবে, তাঁরাই ম্যাচটা জিতবে। টি-টোয়েন্টিতে কিন্তু ভুল করে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই বললেই চলে। তাই আজকের ফাইনালে ভুল না করার মানসিকতা নিয়ে বাংলাদেশ দলের মাঠে নামার বিকল্প নেই। ফল যা-ই হোক না কেন, শেষ বলটি পর্যন্ত ম্যাচে থাকতে হবে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে। আর চাপে পড়লে কী করতে হবে, সেটা কিন্তু মাহমুদউল্লাহ দেখিয়ে দিয়েছেন আগের ম্যাচে।