হেরে গেল বাংলাদেশ

রায়নাকে ফেরানোর পর বাংলাদেশ দলের উল্লাস। ছবি: শামসুল হক
রায়নাকে ফেরানোর পর বাংলাদেশ দলের উল্লাস। ছবি: শামসুল হক
>
  • ফাইনালে প্রথম ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১৬৬ রান করেছে বাংলাদেশ
  • তাড়া করতে নেমে ৩২ রানে প্রথম উইকেট হারিয়েছে ভারত

ওই রানটা না নিলে কী এমন হতো সাব্বিরের?

এর আগেই ৪২ রান করে ফেলেছেন। অন্য ব্যাটসম্যানদের ড্রেসিংরুমে ফেরার মিছিলে একটু আসন পেতে বসার ইচ্ছেটা তাঁর মাঝেই দেখা যাচ্ছিল। ম্যাচ না হোক, বাংলাদেশ ইনিংসের নায়ক হিসেবে সাব্বির রহমানের নামটাই উচ্চারিত হতো। কিন্তু ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আচমকা এক দৌড়, এক সেকেন্ডেই নায়ক থেকে খলনায়ক হয়ে গেলেন সাব্বির। তাঁর পাগলাটে এক দৌড়ের বলি হয়ে যে রানআউট হয়ে গেলেন ফাইনালে তোলার নায়ক মাহমুদউল্লাহ। এতেই স্কোরটা ১৬৬ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ।

জবাবে ২.৪ ওভারের মধ্যেই বিনা উইকেটে ৩২ রান তুলে ফেলেছিল ভারত। কিন্তু ৬ বলের মধ্যে ফিরে গেছেন শিখর ধাওয়ান (১০) ও সুরেশ রায়না। ধাওয়ানকে ফেরান সাকিব। রায়নাকে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করেন রুবেল হোসেন। রুবেলেই বলেই ১০ম ওভারে ক্যাচ দেন লোকেশ রাহুল। ১৪তম ওভারে রোহিত শর্মাকে (৫৬) তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়েছেন স্পিনার নাজমুল ইসলাম। ম্যাচে ফেরার আনন্দ জয়ে রূপ নিল না। দিনেশ কার্তিকের অপার্থিব কিছু শটের কাছে হার মানল বাংলাদেশ। শেষ বলে ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিলেন কার্তিক। 

নামটা মাহমুদউল্লাহ, এ তথ্যটাই যথেষ্ট ছিল। তার ওপর মাহমুদউল্লাহ ততক্ষণে সেট হয়ে গেছেন, ১৬ বলে ২ চারে ২১ রান করে ফেলেছেন। স্লগ ওভারের ঠিক আগ মুহূর্তে মাহমুদউল্লাহকে যে বড় দরকার ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু বিজয় শংকরের বলটা উইকেট রক্ষকের হাতে দেখেও নন স্ট্রাইকে থাকা সাব্বিরের রান নেওয়ার ইচ্ছে জাগল। মাহমুদউল্লাহ দৌড় শুরু করে আবারও যে ফিরে গেছেন সেটা খেয়ালই করলেন না। মাহমুদউল্লাহ হঠাৎ তাকিয়ে দেখলেন, স্ট্রাইকিং প্রান্তে তাঁর পাশেই সাব্বির। অন্য প্রান্তের দিকে দৌড় শুরু করলেন বটে, সেটা না দৌড়ালে বিশ্রী দেখায় এ কারণে।

সে রান আউটেই পঞ্চম উইকেট জুটিটা ভাঙল। ৩৬ রানের সে জুটির পরও বাংলাদেশের স্কোর ১০৪! পাওয়ার প্লেতে মাত্র ১১ বল আর ৬ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার ধাক্কাটা যে বাংলাদেশকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছিল। ৩৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর মুশফিক-সাব্বিরের ৩৫ রানের জুটিটা ধাক্কা সামলেছিল। কিন্তু এই ৩৫ রান তুলতে ৩১ বল লাগিয়ে ফেলায় ১০ ওভারে মাত্র ৬৮ রান তুলতে পেরেছিল বাংলাদেশ।

মাহমুদউল্লাহ রান আউট হওয়ার পর দায় মেটাতেই কি না এর পরের ১৩ বলেই সাব্বিরের তিন ছক্কা। দুই বছর পর টি-টোয়েন্টিতে ফিফটি পাওয়ার জন্য এমন একটা ম্যাচই বেছে নিয়েছেন সাব্বির। কিন্তু রান আউটের ভূত বাংলাদেশকে ছাড়ল না। ৭ রান করে রান আউট হয়ে গেলেন সাকিবও। এবার অবশ্য রান নেওয়ার ডাক সাকিবেরই ছিল। একটু পরে প্রায় নিশ্চিত রান আউটের হাত থেকে বেঁচে গেলেন আটে নামা মেহেদী হাসান মিরাজও।

মঞ্চ যখন প্রস্তুত, মাহমুদউল্লাহর আউটও যখন ভুলে যাওয়ার অপেক্ষায় সবাই ঠিক তখনই হতাশ করলেন সাব্বির। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে উনাদকাটকে ছক্কা মারতে গিয়ে বোল্ড সাব্বির। ৭ চার ও ৪ ছক্কার ৫০ বলের ইনিংসটা থামল ৭৭ রানে। ১৪৭ রানে সপ্তম উইকেট হারাল বাংলাদেশ। পরের বলেই অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় রুবেলও। সাব্বিরের মতোই বোল্ড রুবেল।

শেষ ওভারে মিরাজের (৭ বলে ১৯) সুবাদে এল ১৮ রান, তাতেই বাংলাদেশ পেল লড়াইয়ের স্কোর।

বাংলাদেশ

রান

বল

তামিম ক শার্দুল ব চাহাল

১৫

১৩

লিটন ক রায়না ব সুন্দর

১১

সাব্বির ব উনাদকাট

৭৭

৫০ 

৭ 

৪ 

সৌম্য ক ধাওয়ান ব চাহাল

মুশফিক ক শংকর ব চাহাল

১২

মাহমুদউল্লাহ রান আউট 

২১

১৬ 

২ 

০ 

সাকিব আল হাসান রান আউট

মেহেদী হাসান অপরাজিত

১৯৭ ২ ১ 

রুবেল হোসেন ব উনাদকাট

মোস্তাফিজুর অপরাজিত

অতিরিক্ত (লেবা২, ও৪)

মোট (২০ ওভারে, ৮ উইকেটে)

১৬৬

উইকেট পতন: ১–২৭ (লিটন, ৩.২), ২–২৭ (তামিম, ৪.২), ৩–৩৩ (সৌম্য, ৪.৬), ৪–৬৮ (মুশফিক, ১০.১), ৫–১০৪ (মাহমুদউল্লাহ, ১৪.২), ৬–১৩৩ (সাকিব, ১৬.৫), ৭–১৪৭ (সাব্বির, ১৮.২), ৮–১৪৮ (রুবেল, ১৮.৩)।

বোলিং: ওয়াশিংটন ৪–০–২০–১, চাহাল ৪–০–১৮–৩, শংকর ৪–০–৪৮–০(ও১), উনাদকাট ৪–০–৩৩–২ (ও২), শার্দুল ৪–০–৪৫–০ (ও১)।